এনআরসি আসাম : চল্লিশ বছরেও শেষ হবে না ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে :
কমল চক্রবর্তী, শিলচর (আসাম)
M – 6001396208/9435073936(WhatsApp)
অমিত শাহ বললেন, আসামের এনআরসি যা তৈরি হয়েছে সেটা ভুল। একসাথে সারা ভারতবর্ষে তার পছন্দ মতো এনআরসি হবে । আবার অমিত বাবু এটাও বলেছেন যে আসামে এনআরসি ছুটদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হবে!! আসামের এনআরসি ছুটরা ভয় পাচ্ছে ! ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না কী করবে! ! এই দ্বিচারিতা কেন!! এনিয়ে অনেক ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কেন করতে যাচ্ছেন? বিষয়টি বুঝতে হবে।
সরকারের কাছে আসামের এনআরসি ছুটদের নাম এসে গেছে। নাম মাত্র ১৯ লক্ষ। অসমিয়াদের প্রথম ধারণা ছিল এক কোটি। তারপর দাঁড়ালো ৪০ লক্ষ এবং এরপর সংখ্যাটা দাঁড়ালো ১৯ লক্ষ। সরকার বুঝতে পেরেছে, যাদের নাম বাদ পড়েছে তাদের অনেকের নাম ই ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করলে এসে যাবে। তাহলে অসমিয়াদের যুগযুগ ধরে আন্দোলন করে কী লাভ হলো?
এই বিশাল সংখ্যক মানুষের জন্য নতুন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে তৈরি করা হবে। , মেম্বারদের ( ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারক), ২০০ টা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের পরিকাঠামো এখনও তৈরি-ই হয় নি। হয়তো সরকারকে ঘর ভাড়া করতে হবে। তার একটা মাসিক খরচা আছে ! আলাদা করে পুলিশ নিয়োগ, অফিস কর্মচারী নিয়োগ —এই সবের জন্য কতো টাকা লাগতে পারে, সেই হিসেব জানি না। কিন্তু এটা জানি যে মেম্বারদের বেতন মাসিক ৮০০০০ ( আশি হাজার) টাকা। নতুন ভাবে ২০০ জন মেম্বার রিক্রুট করা হয়েছে। বছরে ১৯ কোটি কুড়ি লক্ষ টাকা বেতন দিতে হবে মেম্বারদের ( ৮০০০০×২০০ × ১২)।
ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে এনআরসি ছুটদের বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন সরকার। বিনে পয়সায় আইনি সহায়তার অর্থ কী? আসলে সরকার ডিএলএসএ’র( District Legal Services Authority) মাধ্যমে গরিব মানুষদের আইনি সহায়তা দেবে। প্রতিটি জেলায় ডিএলএসএ’র সেক্রেটারি সম্ভাব্য এনআরসি ছুটরা ভিড় করতে পারে এই আশংকায় আলাদা করে কিছু আইনজীবীও নিয়োগ করেছেন। ধরে নেওয়া যেতে পারে, এক একটা কেসে প্রত্যেক আইনজীবী কম করেও পাঁচ হাজার টাকা নেবেন। তাহলে আইনজীবীদের ক্ষেত্রে খরচ হবে ৯৫০ কোটি টাকা!( ১৯০০০০০, × ৫০০০ টাকা) বাকি রইল ছয় হাজার ছয় শত সাতান্ন। তারা হয়তো নিজেরাই আইনজীবী ধরে কেস লড়বেন।
১৯ লক্ষ ৬ হাজার এনআরসি ছুটদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে হবে।
আসামে এখন পর্যন্ত ১০০ টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল আছে, যারা ডি ভোটার এবং ডিটেনশন ক্যাম্পে থাকা ব্যক্তিদের কেস নিয়ে ব্যস্ত। সরকার আরো ২০০ টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে যাচ্ছেন। অর্থাৎ ২০০ টি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল উনিশ লক্ষ ছয় হাজার মানুষের বিচারের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। আমরা জানি ৩৬৫ দিনে একবছর হয়। তারমধ্যে ৬৫ দিন বাদ দিতে হবে। সরকারী ছুটি, শনিবার রবিবার ইত্যাদি। ধরে নিলাম এক একটা কেস ফাইল করা, শুনানির দিন এবং জাজমেন্ট অর্ডার লিখিত ভাবে দিতে এক একটা কোর্টের সময় লাগবে কম করেও দুই দিন। অর্থাৎ বছরে ১৫০ কেসের ফয়সালা হবে একটি কোর্টে ( ৩০০/২)। ২০০ কোর্টে একবছরে সংখ্যাটা দাঁড়াচ্ছে ৩০০০০ ( ১৫০ × ২০০)। অর্থাৎ ৩০ হাজার কেসের ফয়সালা হবে এক বছরে। সংখ্যাটা নাহয় বাড়িয়ে ৪০ হাজার করা হলো। যদিও আসামে ১০০ টা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল থাকাকালীন এক বছরে বিশ হাজার কেস ফয়সালা করেছে এরকম কোনো রেকর্ড নেই। তবুও ৪০ হাজার রাখলাম। আপনারাই হিসেব করে দেখবেন এই উনিশ লক্ষ ছয় হাজার ছয়’শো সাতান্ন মানুষের বিচার করতে সময় নেবে কম করেও সাত চল্লিশ বছর। আরো কমিয়ে দিলে চল্লিশ বছর। তার মানে এক আসামেই ভারতীয় এবং বিদেশির হিসেব করতে চল্লিশ বছর লাগবে। সারা ভারতবর্ষে এনআরসি করে (ভিত্তিবর্ষ যাই হোক না কেন) “ বিদেশি” বাছাই করতে কত দিন সময় নেবে?।
যে টাকার হিসেব দিলাম, অর্থাৎ ১৯ কোটি ২০ লক্ষ PLUS ৯৫০ কোটি টাকা। হিসেব টা আপনারাই করে নেবেন। এর মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের পরিকাঠামোর খরচ বাদ দেওয়া হলো। এই বিশাল সংখ্যক টাকা কে দেবে? কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকার না জনগণ? “ । কী দরকার মিছেমিছি টাকা খরচা করার? এখানে পাওয়ার তো কিছুই নেই! সরকার বুঝে গেছেন এই ১৯ লক্ষের মধ্যে অনেকেরই নাম এসে যাবে । তাই আটমাস অতিক্রান্ত হওয়ার পরও এনআরসি ছুটদের নাম না আসার কারণ এনআরসি অথরিটি জানাচ্ছে না। অমিত শাহ এখন বলছেন, আগে ক্যা তারপর এনআরসি। আবার নতুন করে নাকি আসামে এনআরসি হবে! এই কথাটা অমিত শাহের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। আসামে এনআরসি’র কাজ যেহেতু সুপ্রিমকোর্টের তত্ত্বাবধানেই হয়েছিল, কাজেই এই এনআরসি বাতিল করতে হলে সুপ্রিমকোর্টকেই নির্দেশ দিতে হবে অথবা কেন্দ্রীয় সরকারকে, যে সরকার সুপ্রিমকোর্টকে দায়িত্ব দিয়েছিল আসামের এনআরসি দেখভাল করার ।
কোন মন্তব্য নেই