"হিন্দুদের ঐক্যতার মধ্যে ফাটল ছিল এই বর্নবাদ যার রেশ আজও সমাজ যতই আধুনিক হোক পুরোপুরি তা কেটে উঠতে পারে নি"- সভারকর
হিন্দু জাতীয়তাবাদী বীর সভারকর
ধর্মনিরপেক্ষতা যেখানে ভারতীয় ভাবনার আজ এক আধুনিক স্লোগান সেখানে অত্যন্ত দূঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে যে এই ভারতবর্ষও বিভক্ত হয়েছিল ধর্মের আধারে। কোন এক রাতের আঁধারেই জন্ম নিয়েছিল হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান। যেসকল রাজনৈতিক তেজস্বী দেশপ্রেমিকদের আত্মবলিদানে ভারতমাতা হয়েছিলেন শৃঙ্খলা মুক্ত তাঁদের মধ্যে অবশ্যই বিনায়ক দামোদর সাভারকরের নাম অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। সেকালের অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা ছিল একটি হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠন। ১৯১৫ সালে মুসলীগ লীগ ও ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বীর সাভারকর ছিলেন সেই দলের প্রথম সভাপতি এবং সহ সভাপতি ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রতিষ্ঠাতা ডঃ কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার। হেডগেওয়ার পরে মহাসভা ত্যাগ করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের স্থাপনা করেন।
১৮৮৩ সালের ২৮ মে মহারাষ্ট্রের ভাগুর (বর্তমান পুনের সন্নিকটে) এ জন্মগ্রহণ করেন বীর বিনায়ক দামোদর সাভারকরের। তিনি জন্মসূত্রে ছিলেন মারাঠি। একজন বিপ্লবী ভারতীয় স্বধীনতা আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী হিসেবে উনার নাম উল্লেখযোগ্য। কুখ্যাত জ্যাকসন ও লর্ড কার্জন হত্যার সাথে যুক্ত অভিযোগে উনি ইংরেজ সরকারের হাতে ধরা পড়েন। পরে উনাকে এস এস মোরিয়া জাহাজে নিয়ে যাবার সময় উনি জাহাজের টয়লেটের বায়ূ নির্গমনের জানালা দিয়ে লাফ দেন সমুদ্রে। সেখান থেকে সাঁতরে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে পালিয়ে ফ্রান্সে চলে যান। এধরনের সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তিনি। অবশ্য পরে ইংরেজরা অবৈধভাবে ফ্রান্সে উনাকে গ্রেফতার করে এবং আন্দামানের সেলুলার জেলে প্রেরন করে। উল্লেখ্যযোগ্য উনিই প্রথম সেলুলার প্রেরনকারী ভারতীয় কয়দি। সাভারকরকে হিন্দুত্বনিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রবক্তা বলা হয়। তিনি নাৎসিবাদকে প্রশংসা করেছিলেন। তিনি হিন্দু জাতীয়তাবাদী আদর্শের প্রবক্তা ছিলেন। যখন মহাসভায় বহু সদস্য শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় জনসংযোগে যোগ দেন। শ্যামাপ্রসাদ তখন মহাসভায় একজন মুসলমান সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখলে সাভারকর তা খারিজ করে দেন। এরপরই শ্যামাপ্রসাদ মহাসভা ত্যাগ করে সংঘের নিয়ন্ত্রণে ও তত্ত্বাবধানে একটি পৃথক দল গঠন করেন। এভাবেই জনসংঘের জন্ম। যা বর্তমানে ভারতীয় জনতা পার্টি নামে সমাদৃত।
সাভারকরের নিকট হিন্দুত্ববাদের রক্ষন ছিল অন্য সবকিছু থেকেই বড়। যার জন্য আজও তিনি প্রতিটি হিন্দুদের নিকট এক প্রতীক স্বরূপ নমস্য। তিনি হিন্দু সমাজের বর্নবাদকে ঘৃনার চোখে দেখতেন। যার জন্য অবশ্যই স্বীকার্য যে অনেক দলিত হিন্দুরা কালে কালে ধর্মান্তকরনের স্বীকার হয়েছিল। হিন্দুদের ঐক্যতার মধ্যে ফাটল ছিল এই বর্নবাদ যার রেশ আজও সমাজ যতই আধুনিক হোক পুরোপুরি তা কেটে উঠতে পারে নি। জনৈক লেখক চিত্রগুপ্তের লিখা 'দি লাইফ অফ ব্যারিস্টার সাভারকর'
নামের বইয়ে অসংখ্য বীরত্বের গাঁথা পাওয়া যায়। যারজন্য উনাকে বীর উপাধি তে ভুষিত করা হয়। উনার সহধর্মিনীর নাম ছিল যমুনাবাঈ। বীর সাভারকর আজীবন হিন্দুত্ববাদের অগ্নিশীখায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়ছিলেন। আজ উনার জন্মদিবসে জানাই কোটি কোটি নমন। বীর সাভারকরের চিন্তন গাঁথা থাক আমাদের হৃদয়ে যা হোক চলমান পথের দিশারী মোদের।
[নিবন্ধটি কাছাড় জেলার ডলু নিবাসী শর্মিষ্ঠা দেব পুরকায়স্থ এর কলমে। মতামত একান্ত নিজস্ব।]
কোন মন্তব্য নেই