Header Ads

আমার ডায়েট চার্ট--খুবই সাধারণ !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
অনেকেই জানতে চান এই লকডাউনের দিনগুলিতে আমি সারাদিন কি কি খাদ্য গ্রহণ করি ! আমি চিকিৎসক নই, কবিরাজ-হেকিমও নই। এঁদের পরামর্শও একরকম হয় না--তাই অকারণে বিভ্রান্ত হওয়ার ইচ্ছে আমার হয় না। খুব ছোটবেলায় আমাদের সাধারণ স্বাস্থ্য সম্পর্কে শেষ কথা বলতেন আমার পিতামহী।

মাঝে মাঝে একটা সাদা বাতাসার মধ্যে কয়েক ফোঁটা কচা’র (বোটানিক্যাল নাম জানি না, গাছটা চিনি) আঠা বা রস দিয়ে আমাদের খাইয়ে দিতেন। প্রত্যেক দিন ভাতের পাতে নিম, উচ্ছে, গীমা শাক জাতীয় একটা না একটা থাকতোই। কারুর আমাশয় হলে দেখেছি পিতামহী বাগান থেকে একমুঠো দুর্বাঘাস তুলে এনে তার রসের সঙ্গে একটু ঝোলাগুড় বা দু’চার ফোঁটা মধু মিশিয়ে গলায় ঢেলে দিতেন। শীতকালে সর্দি-কাশির ওষুধ হিসেবে বাসকের রসের সঙ্গে মধু-ই ছিল অত্যন্ত কার্য্যকরী হার্বাল মেডিসিন। হঠাৎ করে যাতে ঠাণ্ডা না লেগে যায় তার জন্যে শীতের সূচনা থেকেই চলতো তুলসী-মধু-আদা-লবঙ্গ-গোলমরিচের চা--দিনে অন্ততঃ একবার। সত্যি সত্যি খুব বেশি রোগ-জ্বালায় তখন ভুগি নি। শীত-গ্রীস্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই নেচে বেড়াতে খুব একটা সমস্যায় পড়তে হতো না।

এখন আর কোনো পরিবারেই এই ধরণের স্বাস্থ্য সচেতনতা নেই--মানুষের সময় কোথায়? তবে এই করোনা ভাইরাস কিন্তু মানুষকে মারাত্মক বার্তা দিল--বেপরোয়া মনোভাব আর চলবে না--শুধু নিজেকেই নয় পরিবারের প্রিয়জনদের বাঁচাতেও জীবনযাপনের অভ্যাস বদলাতে হবে। মাঝে মাঝে লকডাউনে গিয়ে পরিবশেকেও যতটা সম্ভব বাঁচাতে হবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকলে পৃথিবীর চেহারাটা কেমন হয় এবং শিশু ও বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষ কতটা সুস্থ বোধ করে সেটাও করোনা ভাইরাস বুঝিয়ে দিল--কিন্তু ‘কাড়ে পড়ে ভাঁড়ে জল খাওয়া’ মানুষ বেশিদিন বোঝাবুঝির ধার ধারে না।
আমার খ্যাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে অনেকেরই মিলবে না। তার কারণ, আমি কখনো উদরপূর্তি করে খাই না--তিন ভাগের এক ভাগ শূন্য রাখি--তা সে যতই বাদশাহি খানা-খাজানার দরজা আমার সামনে খুলে যাক না কেন। প্রতিদিন তেতো খাই। তবে সকালে ঘুমভাঙ্গার পরেই আট-দশটা কাঁচা তুলসীপাতা (ভাল করে ধুয়ে) ভালভাবে চিবিয়ে খাই--প্রায় সঙ্গে সঙ্গে গলা অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায়। এরপর একগ্লাস গরম জলে অর্দ্ধ চামচেরও কম মধু এবং গোলমরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে (গলায় ঝাল-ঝাল অনুভূতি হওয়া চাই) খেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকি। বেরিয়ে তেজপাতা-এক চিমটি দারুচিনি (সুগার আছে বলে) একটা হৃষ্টপুষ্ট লবঙ্গ দিয়ে ফোটানো লাল চা (চা পাতা অবশ্যই থাকে) মাত্র দুটি মেরি বিস্কুট সহযোগে তারিয়ে তারিয়ে পান করি। প্রাতঃরাশের আগে সুগারের ট্যাবলেট খেতেই হয়, এই সময়ে একদিনও বন্ধ করা যাবে না--জলখাবার হিসেবে দু’চামচ ছোলার বিশুদ্ধ কাঁকড়বালিহীন ছাতুর সঙ্গে এক-দেড় চামচ গোল্ডেন হার্ভেস্ট ব্রাউন সুগার এবং মুড়িতে জল ঢেলে খেয়ে নিই প্রতিদিন। 
দুপুরে ভাত-ই খাই দু-হাতা, সঙ্গে অবশ্যই নিম-উচ্ছে, ডাল, তরকারি, এক টুকরো মাছ, সজনে ডাঁটাপোস্ত এবং মাসে এক-আধ দিন দেশী মুরগী বা কচি পাঁঠার এক বা দু’পিস ! মূলতঃ এটাই আমার দুপুরের খাবার। সন্ধ্যায় সামান্য চিঁড়ে ভাজা ও ‘কবিরাজী চা’ ! রাতেও সামান্য ভাত একটু পাতলা ডাল আর দু’চার পিস পটল ও আলুভাজা। রাতে ভাত খাওয়ার ঘন্টাখানেক পরে সামান্য মধু লবঙ্গ আদা তেজপাতা জিরে মৌরি এং একচুটকি হলুদ ফোটানো পাঁচন খাই। গলা বেশ পরিষ্কার থাকে--কম বেশি ঘুমও হয়--বিশেষ কোনো অস্বস্তি হয় না। যেটা বিশেষভাবে জরুরি।
এটাই আমার নিত্যদিনের ডায়েট। খাওয়ার ব্যাপারে কোনোরকম ঝুঁকি নিতে আমি রাজি নই। কারণ, যে কোনো মূল্যে হেঁটে চলে বেড়াবার শক্তিটুকু বজায় রাখার পক্ষপাতি আমি।
এই ডায়েট প্রবীণ মানুষদের জন্যে উপকারী হতে পারে বলেই আমার বিশ্বাস। তবে এটা তো সর্বাংশেই সত্যি--‘আপ রুচি খানা--পর রুচি পরনা’--যদিও দু’টিই এখন উল্টেপাল্টে গেছে। কিন্তু সময়টা এখন সত্যি সত্যি মারাত্মক রকমের খারাপ। ভীষণই ভাবনা চিন্তা করে চলা দরকার। শুধু নিজের জন্যে নয়--পরিবারের প্রিয়জনদের মুখের দিকে তাকিয়েই এখন যাবতীয় সিদ্ধান্ত নিতে হবে !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.