Header Ads

করোনা ভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ডিটেনশন ক্যাম্পে দু-বছরের বেশি বন্দীদের মুক্তির নির্দেশ সুপ্রিমকোর্টের



অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি : অসমে জন্ম-কর্ম, এখানকার আলো-বাতাসে মানুষ, অসমীয়া ভাষা সংস্কৃতির সঙ্গে মিলেমিশে গেছেন।  আজ সেইসব বাঙলি হিন্দু, মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের বাংলাদেশি সাজিয়ে, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তথাকথিত ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করে রাখা হয়েছে। রাজ্যের জেলের বন্দি চোর, ডাকাত, খুনি, ধর্ষকদের মধ্যে রাখা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন মানবতাবাদী সন্থা সুপ্রিমকোর্টে জনস্বার্থ আবেদন করে ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোর ভেতরের অস্বাস্থ্যকর অবস্থা তুলে ধরার পরও পূর্বতন কংগ্রেস, বর্তমান বিজেপি সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বর্তমান অসমের ৬টি ডিটেনশন ক্যাম্প তেজপুর, কোকড়াঝার, গোয়ালপাড়া, শিলচর, যোরহাট এবং ডিব্রুগড় এই জেলে ৯৮৮ জন বন্দি অবস্থায় আছেন। বিধানসভায় পরিষদীয়মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারী জানান, বন্দীদের মধ্যে ২৮ জন মারা গেছেন। ৭৩ জন মুক্তি পেয়েছেন। দেশ-বিদেশ জুড়ে করোনা ভাইরাসের মত মারাত্বক জীবাণু রোগের সময় গাদাগাদি করে অস্বাস্থ্যকরভাবে সংখ্যালঘু মানুষগুলোকে আটকে রাখা হয়েছে। যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তবে কে দায়ী হবেন? সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এস এ ববদের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চ যাদের দু-বছরের বেশি বন্দি জীবন কেটেছে তাদের বন্ধে ছেড়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশিষ্ট আইনজীবী কলিন গঞ্জালভেস ন্যাশনাল ফোরাম অফ প্রিজনসের পক্ষে দাঁড়িয়ে বলেন, বন্দীদের মধ্যে একজনও বিদেশি নয়, ৫০ বছর ধরে অসমে বসবাস করছে, চাষ-বাস, জমি-জমা নিয়ে থাকেন। এই মামলার আবেদনকারি ছিলেন রাজু বালা দাস। এর আগে সুপ্রিমকোর্ট তিন বছরের বেশি সময় ধরে বন্দি জীবন কাটানো ডিটেনশন ক্যাম্প বন্দীদের কয়েকটি শর্তে ছেড়ে দেবার নির্দেশ দেয়। কিছুদিন আগে সুপ্রিমকোর্ট বর্তমান দেশের জেলগুলোতে বছরের পর বন্দীদের ছেড়ে দেবার নির্দেশ দেয়। তবে যৌন কেলেঙ্কারি এবং দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ধৃতদের ছাড়া হবে না। অসমের প্রায় ৮০০ বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দীদের ছাড়া হয়নি। চার বছর আগে কেন্দ্রীয় সরকার অসমে ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দী বাঙলি হিন্দুদের ছেড়ে দেবার নির্দেশ দিয়েছিল। তখন কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার ছিল। রাজ্যেও কংগ্রেস সরকার ছিল। সেই নির্দেশ পালন করেনি। বর্তমান বিজেপি সরকারও কেন্দ্রের নির্দেশ মানেনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রায় গত ফেব্রুয়ারিতে সংসদে সেই নির্দেশের কথা জানান। বিগত কংগ্রেস এবং বর্তমান বিজেপি সরকার সেই নির্দেশনার কথা বেমালুম চেপে রাখে। বাংলাদেশে ধর্মীয় নির্য্যতনের বলি বাঙলি হিন্দুদের মুক্তি দিতে ২০১৫ সালে কেন্দ্র জোড়া নোটিফিকেশন জারি করেছিল। তাও মানা হয়নি। বাংঙালিদের দুর্ভাগ্য, রাজ্যে বাঙালিদের কোনো নেতা নেই। সরকারের পদলেহন করে, বিলাসবহুল জীবন যাপন করে মেরুদণ্ডহীন এইসব নেতারা, তাদের জোরদার প্রতিবাদ হলে ১০২ বছরের চন্দ্রাধর দাসকে শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাকে ডি ভোটার বানাতে পারতো না। গোয়ালপাড়া জেলে বন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে সুব্রত দে, ঢেকিয়াজুলির দুলাল চন্দ্র পাল, নলবাড়ির ফালু দাস, হাইলাকান্দির সুন্দরমনি রায় প্রমুখরা বিনা চিকিৎসায় অবহেলায় অনাদরে জেলের মধ্যে মারা গেলেন। তাদেরকে বাংলাদেশের অনুপ্রবেশকরী হিসাবে মিথ্যা মামলায় বিদেশি সাজিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে পুরে দেওয়া হল। মৃত্যুর পর পরিবারের মানুষ দাবি করলেন তারা যখন বাংলাদেশী তবে বাংলাদেশে তাদের মৃতদেহ নিয়ে গিয়ে দাহ করা হলো না কেন? ভারতের নাগরিক বৈধ নথিপত্র থাকা সত্তেও মাথায় বাংলাদেশি কলঙ্ক নিয়ে চলে যেতে হল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.