Header Ads

করোনাভাইরাস ছড়ানোর আতঙ্কে পপলার গাছ কাটছে কাশ্মীরিরা !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
পপলার গাছের পরাগরেণু শ্বাসনালীতে অ্যালার্জিসহ শ্বাসকষ্টের কারণ হওয়া এবং ভাইরাস-বাহক হতে পারে আশঙ্কায় জম্মু-কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ লাখো পপলার গাছ কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে !
চলতি মাসের শুরুর দিকে জম্মু ও কাশ্মীর হাই কোর্ট পপলারের পরাগ ও বীজে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি পরীক্ষা করে দেখা এবং ঝুঁকিপূর্ণ হলে গাছ কেটে ফেলা উচিত বলে রায় দেয়।
শ্রীনগরের এক আইনজীবী জনস্বার্থে পিটিশন দাখিল করলে এ সিদ্ধান্ত জানায় আদালত। পিটিশনে বলা হয়েছিল, “পপলারের পরাগরেণু মানুষের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা এবং কোভিড-১৯ রোগের প্রকোপ বাড়িয়ে দিতে পারে।” আদালতের ওই রায়ের পরই কাশ্মীরজুড়ে পপলার নিধন করা হচ্ছে। কাশ্মীরের বিস্তৃত বনভূমির প্রায় এক তৃতীয়াংশই পপলারে ছাওয়া।
 
বিশালাকার এ পপলার গাছগুলোর ওপর সেখানকার প্রাকৃতিক ভারসাম্য অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, জম্মু ও কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ গাছ কেটে বন উজাড় করলে তাতে পরিবেশ আরো বড় হুমকিতে পড়বে।
কৃষিবিদরা বলছেন, একেকটি গাছে প্রচুর বীজ তৈরি হয়। এ বীজগুলোর গায়ে তুলোর মতো আঁশ থাকে। সেই আঁশ অ্যালার্জি এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার কারণ হতে পারে। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন এ আঁশ নিয়েই ভয় পাচ্ছে।
কারণ, এই তুলোর মতো আঁশ বীজের গায়ে লেগে থাকার সময়ই যে কেবল তাতে পরাগরেণু আটকে থাকে তা নয়, বীজ থেকে আলগা হওয়ার পরও এ আঁশ পরাগরেণু নিয়ে বাতাসে ওড়ে। তাই এ আঁশ ভাইরাস বহন করতে পারে আশঙ্কায় কেটে ফেলা হচ্ছে রাশিয়ান পপলার গাছগুলো।
তবে এ গাছ কাটা এবং পরাগরেণু ওড়া ঠেকাতে বিশেষত নিশানা করা হচ্ছে স্ত্রী পপলার গাছগুলোকে। বসন্তে স্ত্রী পপলার গাছের বীজের গায়ে থাকা তুলার মতো আঁশ বাতাসে উড়ে এসে মানুষের শ্বাসনালীতে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা অনেকের।
যদিও চিকিৎসক, বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, পরাগ উৎপন্ন হয় পুরুষ ফুল থেকে, স্ত্রী গাছে তা থাকে না। পুরুষ ফুলের পরাগরেণু উড়ে গিয়ে স্ত্রী গাছের ফুলে গিয়েই নিষেক ঘটে হয় ফল ও বীজ। তাছাড়া, পরাগরেণু কিংবা বীজের আঁশ কোনোটিই অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী কিংবা শ্বাসযন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ না--এমনটিও বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
কিন্তু প্রশাসনের সন্দেহ, রুশ পপলার গাছের পরাগরেণু থেকেই করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে। যদিও প্রশাসন এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয়।
আবার পুলওয়ামার মতো কাশ্মীরের অনেক এলাকার কর্মকর্তারা যুক্তি দেখাচ্ছেন, পপলারের কারণে অ্যালার্জির মত সমস্যা হলে তার সঙ্গে করোনাভাইরাসের উপসর্গ গুলিয়ে ফেলে ‘অহেতুক আতঙ্ক’ সৃষ্টি হতে পারে। তাই এক সপ্তাহের মধ্যে এলাকার সব স্ত্রী পপলার গাছ কেটে ফেলার নির্দেশও দিয়েছে পুলওয়ামা কর্তৃপক্ষ।
যারা গাছ কাটার নির্দেশ মানবে না, তাদেরকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে বলেও প্রশাসন সতর্ক করেছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে জম্মু ও কাশ্মীরে এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৩০০ জন এবং মারা গেছে ৪ জন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.