Header Ads

প্ৰসঙ্গ : লৌহমানবী বিতর্ক !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
গত গভীর রাতে আমার গুলতি থেকে ‘এই লৌহমানবী মমতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় বসবে বাংলার মোষ? চরম সঙ্কটকালে মমতাবিরোধীদের ভূমিকা মানুষ দেখতে পাচ্ছে!’ শীর্ষক একটি স্বচ্ছ কাচের গুলি ছুঁড়েছিলাম। তার প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে আমার লক্ষ্যভেদের ক্ষমতা এখনও বেশ প্রশংসাযোগ্যই বটে! আমার ইনবক্সে বেশ কিছু বাণ ছুটে এসেছে যার মূল সারবত্তাই হল আমি রঙ বদলে কতটা গতিশীল এবং দক্ষ সেটাই প্রতিপন্ন করা! বিশেষ বিতর্কে যাব না--কারণ এইসব কথা যারা বলেন তারা আমার দীর্ঘকালের মনযোগী পাঠক নন--হলে তারা টের পেতেন--আমি কোনো অবস্থাতেই শুধুমাত্র একটা লাইনেই (এক ও একমাত্র বিরোধিতার লাইন) সেঁটে থেকে কিছু লিখি না। আমার মতো মমতার কঠোর সমালোচক খুব বেশি আছে বলে আমার নিজের অন্ততঃ মনে হয় না। আবার আমি কোনো অবস্থাতেই দাসত্বের যুক্তিহীন উন্মত্ততায় পাদুকা মাথায় রেখেও কিছু লিখি না। যা লিখি যতটুকু লিখি তা পুরোপুরি যুক্তিনির্ভর এবং ইস্যুভিত্তিক লেখা লিখি। তাই এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা যে অবস্থান নিয়েছেন তার পাশাপাশি যখন দিলীপ ঘোষ মহম্মদ সেলিম বিমান বসু সুজন চক্রবর্তীদের অবস্থান দেখি তখন আমার মতো অসংখ্য মানুষেরও বুঝতে অসুবিধে হয় না--মমতা এই মুহূর্তে রাজ্যের মানুষের কাছে কতটা নির্ভরযোগ্য এবং বিশ্বাসযোগ্য। পুরোপুরি রাজনৈতিক ভাবনাচিন্তায় সাধারণতঃ তলিয়ে থাকা এই নেত্রী করোনা ভাইরাসের সঙ্কট মুহূর্তে একটিও রাজনৈতিক ফালতু কথা বলছেন না। প্রাণপণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অত্যন্ত সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যে থেকেও কিভাবে রাজ্যের মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়--তাদের বাঁচানো যায়! তিনি জানেন বিরোধী নিধিরাম সর্দাররা সর্বদলীয় বৈঠকে তাদের সেইসব দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে লেকচার ঝেড়ে মিডিয়ার আলো নিজেদের বদনের ওপর ফেলতে চাইবেন যা তারা নিজেদের রাজনৈতিক ক্ষমতায় জীবনে কখনো করে দেখান নি!
 
 
যে বিরোধী নেতা অক্লেশে বলতে পারেন--করোনা ভাইরাস শনি’র প্রকোপে হয়েছে, মমতা শুধূ শুধু বাড়াবাড়ি করে রাজ্যের মানুষকে আতঙ্কিত করছেন--সর্বদলীয় বৈঠকে তিনি বা তাঁর শিক্ষায় শিক্ষিত প্রতিনিধি মমতাকে কোন্ ইতিবাচক পথনির্দেশ করবেন? যে সিপিএম জনতাকার্ফু ভাঙতে আজ সংহতি মিছিলের নামে মানুষকে বাড়ির বাইরে টেনে আনার পরিকল্পনা করেছে সেই সিপিএম তথা বাম প্রতিনিধিরা মমতার পিণ্ডি চটকানোর চেষ্টা ছাড়া আর কি করবেন বলে মনে হয়? সর্বদলীয় বৈঠকে এরা ফুটো খোঁজার চেষ্টায় মরিয়া হয়ে উঠবেন--না পেলে ফুটো তৈরির প্রাণপণ চেষ্টা চালাবেন--রাজ্যের মানুষ এদের রাজনৈতিক চরিত্র ও অবস্থান বুঝে গেছে।
মমতার যেসব কাজ বা সিদ্ধান্ত আমার পছন্দ হয় না আমি তার কঠোর সমালোচনা করি--কিন্তু খিস্তি বা খিল্লির মাধ্যমে নয়। যা বলি তার মধ্যে এমন অনেক সঙ্কেত বা দিক নির্দেশ থাকে যা নিয়ে ভাবলে দলেরই উপকার হয়। হয়েছেও বহুক্ষেত্রে--সেসব তথ্য-প্রমাণ জাহিরের জায়গা এটা নয়। অন্যদিকে মমতার ভাল কাজগুলির সমর্থনেও আমি অকপটে যা যুক্তিসঙ্গত মনে হয় তা লিখি। শুধু মমতা কেন--একই মানসিকতা আমার মধ্যে কাজ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী’র ক্ষেত্রেও। আমার অনুভব এবং প্রতিক্রিয়া রেড-লাইটে আলোকিত শুধুমাত্র যুক্তিতর্কবিচারবোধহীন ‘বিরোধিতা’র লাইনেই আটকে থাকে না--থাকবেও না কোনো দিন--কারণ,কোনো রাজনৈতিক দলের ওয়াশিংমেশিনে আমি আমার মাথাটা ঘন ঘন ধুয়ে নিতে অভ্যস্ত নই--সক্রিয় রাজনীতিতে তাই আমি আক্ষরিক অর্থেই বীতশ্রদ্ধ এক রাজনৈতিক শিবির বিছিন্ন মানুষ। আমি তাই যা বলি নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থেকেই বলি।
ঠিক এই কারণেই আজ যারা আমার প্রশংসা করে--পরের দিন-ই তারা আমার মুণ্ডুপাত করতে নিজের ভদ্রতা রুচিবোধ জলাঞ্জলি দিতে দেরি করে না। আমার কাছে এ অভিজ্ঞতা নতুন নয়--তাই অবাকও যেমন হই না--পাল্টা রুচিহীন আক্রমণে ঝাঁপাতেও পারি না--এটা আমার দুর্বলতা নয়। যাদের কুৎসিত ভাষা ও প্রতিবাদের ভঙ্গি আমার সহনশীলতাকে আহত করে নিঃশব্দে আমি তাদের বন্ধুবলয় থেকে বেরিয়ে আসি। বিশেষ কারণেই এত কথা লিখতে হল--বিশেষ করে তাদের জন্যেই যারা হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে আমার কলমকে থামাবার মর্কটমার্কা চেষ্টা করে--কোথাও আমার কোনোরকম দায়বদ্ধতা নেই--কাজেই আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই--বরং এই কথাটা মনে রাখাটাই মঙ্গলজনক হবে--আমাকে ভয় দেখানোর বিপরীত প্রতিক্রিয়া সুখকর নাও হতে পারে !
হ্যাঁ, আমি আবারও বলবো--করোনা সঙ্কটে মমতা যে ভূমিকা নিয়েছেন (৬৫ বছর বয়সেও জীবনের প্রচণ্ড ঝুঁকি উড়িয়ে) তার প্রশংসা না করাটাই নিজের উপলব্ধি শক্তির দৈন্যতাকেই প্রকট করা হবে--আমার উপলব্ধি ক্ষমতা এত অসাড় নয়। মমতার ভূমিকাকে ছোট করে দেখার ও তার লড়াইকে কুৎসিত সমালোচনায় বিদ্ধ করার বিষাক্ত পরিণাম প্রতিফলিত হবে পুর ও বিধানসভার আগামী নির্বাচনেই! শুনতে খুব খারাপ লাগলেও--এই পরিণাম ঠেকাবার মতো ন্যূনতম যোগ্যতা কোনও বিরোধী শিবিরের একজন নেতারও নেই! আমার এই কথাটা ভীষণ রকমের খারাপ লাগলেও সবাই লিখে রাখতে পারেন!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.