Header Ads

দলের একাংশের নেতাদের কাজে 'ক্ষুব্ধ', তৃণমূলের লোকাল নেতাদের বার্তা দিলেন মমতা !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
দুই সভা থেকে শুধু বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে আক্রমণ নয়, নিজের দলের লোকাল নেতাদেরও বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁকে এদিন বলতে শোনা যায় লোকাল নেতাদের ভাল না লাগতে পারে, দলটা আমরা চালাই। অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
অনেক সময়ই স্থানীয় নেতাদের কাজে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতারা ভাল ব্যবহার করেন না। সাধারণ মানুষ স্থানীয় নেতাদের দুর্নীতে যুক্ত হতে দেখেন। যা ভাল ভাবে নেন না সাধারণ মানুষ। এদিন কার্যত সেই প্রসঙ্গই তুলে ধরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, লোকাল নেতাদের ভাল না লাগতে পারে, দলটা আমরা চালাই। অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

গঙ্গারামপুরের নন্দনপুর এলাকায় রাস্তা তৈরি করছিল তৃণমূলের পঞ্চায়েত। দুই মহিলা অভিযএাগ করেন ব্যক্তি মালিকানায় থাকা জমির ওপর দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তা তৈরিতে বাধা দিতে গেলে দুই মহিলার ওপর হামলা করা হয় বলে অভিযোগ। দুই মহিলাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাস্তার ওপর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। এঁদের একজনকে জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। জেলা তৃণমূল সভানেত্রী অর্পিতা ঘোষ প্রথমে এই ঘটনায় তৃণমূল জড়িত নয় দাবি করলেও, পরে পঞ্চায়েত উপপ্রধানকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল।
লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে জায়গায় জায়গায় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগে আন্দোলন হয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিতে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে তৃণমূল নেতাদের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিলেন।
তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাট পুরসভাকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলেছিলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধৃতরাষ্ট্র বলেও কটাক্ষ করেছিলেন তিনি। পুরসভা নির্বাচনে টিকিট নিয়েও দিয়েছেন বার্তা এর আগে পুরসভা নির্বাচনমের টিকিট যে স্থানীয় ভাবে বন্টিত হবে না, তা স্পষ্ট জানিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রসঙ্গত, আসন্ন পুরসভা নির্বাচন নিয়ে প্রশান্ত কিশোরকে দিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সমীক্ষা করিয়েছে তৃণমূল। স্থানীয় নেতাদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। লোকাসভা নির্বাচনে ব্যর্থতা স্বীকার সভায় লোকসভা নির্বাচনে দলের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনের সময় হাতে টাকা দিয়েছে, অ্যাকাউন্টে টাকা দিয়েছে। বিষয়টি তারা পরে জানতে পেরেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে ব্যর্থতা স্বীকার করলেও, সংগঠন যে এর জন্য দায়ী, তা মেনে নিয়েছেন দলের অনেক নেতাই।
অন্যদিকে, বনগাঁ এবং রানাঘাটে এদিন জোড়া সভা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই দুটি লোকসভা আসন ২০১৯-এর নির্বাচনে হারিয়েছিল তৃণমূল। অন্য জায়গার সঙ্গে মতুয়া ও উদ্বাস্তু অধ্যুষিত এই দুই জায়গাতেও সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে বিজেপি। মুখ্যমন্ত্রী সেই জায়গা বেছে নিয়ে পাল্টা আক্রমণে নামলেন এবং বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেসকে এক পংক্তিতে বসালেন।
এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসকে এক পংক্তিতে বসান। কোনও সময় তিনি বলেন, সকাল, দুপুরে সিপিএম, কংগ্রেস আর রাতে বিজেপি। আবার কোনও সময় তাঁকে বলতে শোানা যায় ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছে সিপিএম এবং কংগ্রেস। বিজেপি কংগ্রেস, সিপিএম-এর বড় বন্ধু বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন বলেন বিজেপির সব থেকে বড় দালাল হল সিপিএম। প্রসঙ্গত এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কার্যত দুই মত তৈরি হয় দুই বাম দল সিপিএম এবং সিপিআই-এর মধ্যে। সিপিআই নেতা ডি রাজা বলেছিলেন, দেশ ও রাজ্যের পরিস্থিতি ভিন্ন। তাই তারা মোদীভাই-দিদিভাই শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন না।
৮ জানুয়ারি দেশ জোড়া ২৪ সাধারণ ধর্মঘটে রাজ্যে বিক্ষিপ্ত অশান্তি হওয়ায় সিপিএমকে নিশানা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেছিলেন কেরল সিপিএম ভাল, ওদের আদর্শ আছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম নেতাদের সর্বনাশ করা ছাড়া কোনও কাজ নেই। তাঁর অভিযোগ ছিল এ রাজ্যেই বনধের নামে তাণ্ডব করেছে সিপিএম, কিন্তু অন্য রাজ্যে করেনি।
গত ভোটে প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছিলেন বহরমপুর, জঙ্গিপুরে আরএসএস-এর সাহায্য নিচ্ছে কংগ্রেস। সিপিএম, কংগ্রেসকে দেওয়া প্রতিটি ভোট নষ্ট হবে বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের লক্ষ্য ছিল মূলত অধীর চৌধুরী।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.