Header Ads

নাগরিকত্ব ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে গুয়াহাটিতে অনুষ্ঠিত হল ২২টি সংগঠনের সভা





গঠিত হল ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি, অসমনামের নতুন মঞ্চ

'সদৌ অসম আদিবাসী ছাত্র সন্থা' (আসা), 'সন্মিলত নাগরিক মঞ্চ', 'সদৌ অসম সংখ্যালঘু ছাত্র ইউনিয়ন' (আমসু), 'অসম সংখ্যালঘু সংগ্রাম পরিষদ',  'ব্রহ্মপুত্র ভেলি সিভিল সোসাইটি', 'দেশপ্রেম', 'সংখ্যালঘু গণতান্ত্রিক যুব ছাত্র ফেডারেশন' 'প্রয়াস' 'ভারতীয় নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চ', 'নিখিল ভারত বাঙালি সংগঠন', 'নিউ ইণ্ডিয়া স্টুডেন্টস এসোশিয়েশন', 'ফোরাম ফর সোশ্যাল হারমনি', 'হিউম্যান রাইটস এন্ড এন্টি করাপশন ফাউন্ডেশন, ইণ্ডিয়া', 'অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়ন', 'জাষ্টিস ফোরাম, আসাম', 'ঝাড়খণ্ডী আদিবাসী সংগ্রাম পরিষদ', 'সদৌ অসম অটোমোবাইল শ্রমিক ইউনিয়ন', 'আদিবাসী মাতৃভাষা অধিকার দাবি সমিতি,' আদি ২২টা সংগঠনর আহ্বানে আজ গুয়াহাটিতে কা, পুনরায় এন আর সি, অসম চুক্তির ৬নং দফা ও ওয়েজ কোডের বিরুদ্ধে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি ছাড়াও কটন বিশ্ববিদ্যালয় সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-সমাজকর্মীরা এই সভাতে উপস্থিত থেকেছেন। অসম মজুরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বিপুল হাজরিকা, সদৌ অসম সংখ্যালঘু ছাত্র ইউনিয়নের মুখ্য উপদেষ্টা আজিজুর রহমান ও সদৌ অসম আদিবাসী ছাত্র সন্থা-র সভাপতি স্টিফেন লাক্রার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভা পরিচালনা করেন দেবব্রত শর্মা ও আমসুর সাধারণ সম্পাদক মুশারফ হুসেইন কবীর। সভার শুরুতে দেশজোড়া কা বিরোধী আন্দোলনের সকল শহিদদের স্মৃতিতে এক মিনিট মৌনতা অবলম্বন করে শ্রদ্ধা তর্পণ করা হয়। সভার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন মত বিনিময় সভার অন্যতম আহ্বায়ক হরকুমার গোস্বামী বলেনআজ কা-র বিরুদ্ধে সমগ্র দেশে সংগ্রাম চলছে। অসমেও আন্দোলন চলছে। বলা হচ্ছে যে অসমের আন্দোলন সমগ্র ভারতের আন্দোলন থেকে আলাদা। এই স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করেও আমরা সমগ্র ভারতের সংগ্রামের সাথে নিজেকে যুক্ত করতে পারি, অন্যথায় হিন্দুত্ববাদী ফ্যাসিবাদকে পরাস্ত করতে পারব না। বিশেষ করে নাগরিকত্ব প্রশ্নে সবথেকে বেশি বিপন্ন হবেন দেশের শ্রমজীবী জনগণ। শ্রমজীবী জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে অসম যা করতে পারে সেটা হচ্ছে পুনর্বার একরকম আপোশ রফা করে নেওয়া, ভারতীয় শাসক শ্রেণি ও রাষ্ট্রের শোষণ-শাসন থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারবে না। এমন এক লক্ষ্য সামনে রেখে সকল শ্রেণি বর্ণ সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে বিকল্প গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনার জন্যই এই সভা আহ্বান করা হয়েছে। এরপর সভায় নটি প্রস্তাব পেশ করা হয় এবং উপস্থিত সংগঠনের প্রতিনিধি ও ব্যক্তিবর্গ নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন। বাসব রায়, ডাক্তার দেবেন্দ্রনাথ মুক্তিয়ার, দেবজিৎ চৌধুরী, চন্দ্রকান্ত অধিকারী, প্রণব গগৈ, ইলিয়াস হুসেইন, রমেশ কলিতা, কিরণ কুমার তাঁতী, ধরিত্রী শর্মা, মৃণাল সোম, মুকুন্দ শইকীয়া, স্টিফেন লাক্রা, আজিজুর রহমান, অরূপ বৈশ্য সহ আরও অনেকে নিজ নিজ অভিমত তুলে ধরেন। সভার শেষত গ্রহণ করা প্রস্তাবগুলো হল --
১)  আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল সাৰ্বভৌম নাগরিকদের হাতেক্ষমতা হস্তান্তরের ধারণাকে সামনে রেখে এবং সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করে নাগরিকরা ভোটার হিসেবে রাষ্ট্ৰ পরিচালনার দায়িত্ব আরোপ করে তাদের প্ৰতিনিধিদের উপর। খসড়া সংবিধানে জন্মসূত্ৰে, বংশানুক্ৰমে ও বাসিন্দা হিসেবে নাগরিকত্ব প্ৰদানের প্ৰস্তাব ছিল জনসাধারণ অৰ্থাৎ ভোটাররাই যে রাষ্ট্রের চালিকা শক্তি, সেই কথারই স্বীকৃতি। এর মধ্যে প্ৰাধান্য পায় সভ্যতা ও গণতন্ত্রের প্ৰতি দায়বদ্ধতা। ২০০৩ সালে এনডিএ সরকার তথা বৰ্তমান বিজেপি সরকার এনপিআর-এনআরসি-ক্যা'র মাধমে সভ্যতা ও গণতন্ত্রের ভিতটির উপরেই আঘাত হানছে। কিন্তু ভারতীয় জনতা এই আঘাতের বিরুদ্ধে বিদ্ৰোহ ঘোষণা করেছে এবং সমগ্ৰ দেশে সভ্যতা ও গণতন্ত্ৰ রক্ষার এক গণআভ্যুত্থানের পরিস্থিতি জন্ম নিয়েছে। আজকের এই সভা এই আন্দোলনের প্ৰতি একাত্মতা প্ৰকাশ করছে এবং ভারতীয় জনসাধারণকে সংগ্রামী অভিনন্দন জানাচ্ছে।
২)   এক বিশেষ পরিস্থিতিতে অসমবাসী ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ হিসেবে মেনে নিয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী চূড়ান্ত এনআরসি তালিকা প্ৰকাশিত হয়েছে। এই তালিকা থেকে যে ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়েছে, ন্যায় প্ৰাপ্তি থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। আজকের এই সভা এনআরসিছুট ১৯ লাখ মানুষকে ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনালের বদলে সহজ পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব পরীক্ষা করে ন্যায় প্ৰদান ও চূড়ান্ত এনআরসি ঘোষণার সরকারি বিজ্ঞপ্তি দাবি করার সাথে সাথে
ডিটেনশন ক্যাম্প ব্যবস্থা তুলে দেওয়া ও 'ডি-ভোটার' সমস্যার আশু সমাধান দাবি করছে।
৩)   বৰ্তমান সরকার অনুরূপভাবেই শ্ৰমিক-কৰ্মচারীদের মজুৰি, ভাতা ও সামাজিক সুরক্ষার সমস্ত আইন বাতিল করে ওয়েজ কোড এনে শ্রমিক শ্ৰেণির অধিকারের উপর চূড়ান্ত আক্ৰমণ নামিয়ে এনেছে। আজকের এই সভা ওয়েজ কোড বাতিলের দাবি জানাচ্ছে।
৪)   অসম চুক্তির ৬ নং দফা রূপায়ণের নামে অসমবাসীকে খিলঞ্জীয়া-অখিলঞ্জীয়ার (ভূমিপুত্র-বহিরাগত) বিভাজনের যে চক্ৰান্ত চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে আজকের সভা।
৫)   আজকের সভা অসমের বৰ্তমান ভাষিক পরিচিতি অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য বিধানসভায় সৰ্বসম্মত প্ৰস্তাব গ্ৰহণের দাবি জানাচ্ছে।
৬)  আজকের সভা অখিল গগৈ সহ 'ক্যা' বিরোধী আন্দোলনের পরিপ্ৰেক্ষিতে জেলে বন্দি সকল আন্দোলনকারীদের বিনা শৰ্তে মুক্তি দেওয়া, পঞ্চ-শহিদের পরিবারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং সরকারি নীতির প্ৰতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ঔপনিবেশিক আমলের সেডিশন আইন-এর প্ৰয়োগ বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছে।
৭)  আজকের সভা উপরোক্ত বিষয় সমূহের উপর গণসচেতনতা তথা গণআন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্য সামনে রেখে সংগঠন সমূহের সমন্বয়ের জন্য সভায় উপস্থিত থাকা সব কটি সংগঠন নিয়ে একত্রে 'ফোরাম ফর ডেমোক্রেসি, অসম' নামাকরণ করে একটি সমন্বয়ক কমিটি গঠন করে এবং সহমত পোষণকারী সকল সংগঠনকে এর সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান রাখছে। ফোরামের মুখ্য আহ্বায়ক মনোনীত করা হয় হরকুমার গোস্বামীকে।
৮)   ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে গুয়াহাটিতে বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কেন্দ্ৰীয় সচেতনতা এবং মিছিলের কৰ্মসূচীকে সামনে রেখে সমগ্ৰ অসমে প্ৰচার অভিযান, জনসভা, গণকনভেনশন ইত্যাদি অনুষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নেয় এই সভা।
৯) ভারতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতিকে কালিমালিপ্ত করা ডিটেনশন ক্যাম্প নামক হিটলারের ন্যাৎসি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের উপস্থিতিও শংকর-আজান-বিষ্ণু-জ্যোতির এই অসমে। ডিটেনশন কেম্পের অমানবীয়তা কেড়ে নিয়েছে বহু নিরপরাধ মানুষের জীবন। এই তালিকাতে নতুনতম সংযোজন নরেশ কোচ। নরনারায়ণ-চিলারায়ের বংশধর নরেশ কোচ-এর মৃত্যুর পর যদি আজকের অসমিয়া জনগণ গর্জে না ওঠেন, তবে জয় হবে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শ্বাহর ফ্যাসিস্ট অভিসন্ধিরই। আজকের সভা আগামী ২১ জানুয়ারি মৃত নরেশ কোচ-এর ঘরে গিয়ে পরিবারকে সমবেদনা জনানোর সাথে ডিটেনশন ক্যাম্প ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনজাগরণ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.