Header Ads

বিধানসভায় খিলঞ্জীয়া ভূমিপুত্রের ভাষাসংস্কৃতি, আর্থ সামাজিক উন্নয়নের অঙ্গীকার মুখ্যমন্ত্রীর, রাজ্যপালের ভাষণ অসমাপ্ত, বিধানসভা উত্তপ্ত




অমল গুপ্ত, গুয়াহাটিঃ অসম বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনের সূচনাতেইনাগরিকত্ব সংশােধনী আইনকে কেন্দ্র করে বিধানসভায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বিধানসভা ভবনের প্রধান গেটে এআইইউডিএফ দলের বিধায়করা গেট অবরােধ করে নাগরিকত্ব সংশােধনী আইন নিয়ে আলােচনায় বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানাতে থাকেন। সকাল ৯-৩০ মিনিটে বিধানসভা অধিবেশন শুরুর কিছুক্ষণ আগে প্রধান গেট অবরােধ থাকায় কেউ প্রবেশ করতে পারতেন না। রাজ্যপাল জগদীশ মুখী, মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল, বিধানসভার অধ্যক্ষ হিতেন্দ্র নাথ গােস্বামী তখনও বিধানসভায় প্রবেশ করেননি। তাই স্বাভাবিক ভাবেই নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়। অনেক অনুরােধ করার পর শেষ পর্যন্ত বিধায়করা অবরােধ প্রত্যাহার করে নেন।
বিধানসভায় রাজ্যপাল জগদীশ মুখী ভাষণ শুরু করার দু-মিনিটের মধ্যেই কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ বিধায়করা ‘কা’ বাতিল করতে হবে’, ‘পাঁচজনকে হত্যার তদন্ত করতে হবে’ইত্যাদি শ্লোগান লেখা হাতে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ওয়েলের কাছে ছুটে যান। ওয়াজেদ আলি চৌধুরী, রূপজ্যোতি কুর্মি, শেরমান আলি আহমেদ, নুরুল হুদা, রকিবুল হুসেন প্রমুখ কংগ্রেস সদস্য এবং এআইইউডিএফ-এর আমিনুল ইসলাম, হাফিজ বসির আহমেদ প্রমুখরা ভাষণরত রাজ্যপালের ভাষণে হস্তক্ষেপ করে হুলস্থূল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন। রাজ্যপাল তার ভাষণে বিগত তিন বছরে সরকার সার্বিক সফলতা, মানসিক দৃঢ়তা নিয়ে বহু প্রত্যাহ্বান অতিক্রম করতে সমর্থ হয়েছে... এই কয়েকটি লাইন বলার সঙ্গে সঙ্গে হুলস্থুল হৈ হট্টোগােল চরমে পৌঁছলে রাজ্যপাল ভাষণ পাঠ না করেই তা বিধানসভায় পেশ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বিধানসভার অধ্যক্ষ হিতেন্দ্রনাথ গােস্বামী ৪৫ মিনিটের জন্য বিধানসভা স্থগিত করে দেন।
গত ছয় দশক থেকে দেশের তপশীলভুক্ত জাতি এবং উপজাতির দশ বছরের জন্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা চলছে। ২০৩০ সাল পর্যন্ত আরও দশ বছরের জন্য এই দুই পশ্চাদপদ জনগােষ্ঠীর সংরক্ষণের জন্য বিধানসভায় ১২৬তম সংশােধনী বিল উত্থাপন করা হয়। তফশিলভুক্ত জাতির জন্য সংরক্ষিত দেরগাঁও কেন্দ্রের বিধায়ক অগপ-র ভবেন্দ্রনাথ ভরালী, বিপিএফের কমলসিং নার্জারি, এআইইউডিএফের হাফিজ বসির আহমেদ, তপশীলভুক্ত উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত কেন্দ্র ধেমাজির বিধায়ক রণােজ পেগু, বিরােধী দলপতি কংগ্রেসের দেবব্রত শইকিয়া বিলটি সমর্থনে বক্তব্য রাখেন, দেবব্রত দেশের অ্যাংলাে ইন্ডিয়ানদের লােকসভা ও বিধানসভাগুলিতে আসন সংরক্ষণ এবং প্রতিনিধিত্বের সুযােগ বাতিল করার বিলটির কথাও উল্লেখ করেন। কিন্তু বাকিরাও বিলটির কথা উল্লেখ করেননি। গত ১০ ডিসেম্বর সংসদের উভয়সভায় বিলটি পাশ হওয়ার সময় কেন্দ্রীয় সরকার রেজিস্ট্রার জেনারেলের প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেছিল, দেশে মাত্র ২৯৬ জন অ্যাংলাে ইন্ডিয়ান আছে। ২০ কোটিরও বেশি তপশিলভুক্ত জাতি এবং ১০ কোটিরও বেশি উপজাতি গােষ্ঠী আছে। তারা পশ্চাদপদ। কিন্তু স্বল্প সংখ্যক অ্যাংলাে ইন্ডিয়ান পশ্চাদপদ নয়। তাই তাদের সংরক্ষণের প্রয়ােজন নেই। আজ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল তপশিলভুক্ত জাতি উপজাতি গােষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে অসম সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করে বলেন, এই পিছিয়ে পরা জনগােষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে সরকার বহুবিধও প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তিনি জানান, রাজ্যের স্বাক্ষরতার হার ৭২.১৯ শতাংশ, তপশিলভুক্ত জাতির স্বাক্ষরতার হার ৬৬ শতাংশ এবং উপজাতি গােষ্ঠীর শতাংশের হার ৬২। তাদের স্বাক্ষরতার হার বাড়াবার জন্য সরকার প্রি এবং পােষ্ট মেট্রিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য বৃত্তিমূলক ব্যবস্থা, বিনামূল্যে ভর্তি সহ বিনামূল্যে বই, কম্পিউটার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। অন্যান্য পশ্চাদপদ জাতি (ওবিসি) র জন্যেও একইব্যবস্থা করেছে সরকার। তিনি প্রধানমন্ত্রীর ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাস’নীতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, অসমের খিলঞ্জীয়া জনগােষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নে সরকার নিরলসভাবে প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। জাতি-মাটি-ভেটি রক্ষায় সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। খিলঞ্জীয়া মানুষের সার্বিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার সব ধরনের প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। নির্দিষ্ট ভূমিনীতি ছাড়াও অসম সাহিত্য সভার সঙ্গে আলােচনাক্রমে অসমিয়া ভাষাকৃষ্টি উন্নয়নে দশ কোটি টাকার এক কর্পাস তহবিল গঠন করা হয়েছে। বছরে ৮০ লক্ষ টাকা সুদ পাবে। বােড়াে জনগােষ্ঠীর ভাষা কৃষ্টি উন্নয়নে পাঁচ কোটি টাকার কর্পাস তহবিল গঠন করা হয়েছে। বছরে সুদ পাবে ৪০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও ২২টি জনগােষ্ঠীর ভাষা সংস্কৃতি উন্নয়নে তিন কোটি টাকা করে তহবিল গঠন করা হয়েছে। সরকার ভূমিনীতি গ্রহণ করে তপশিলভুক্ত জাতি উপজাতি সহ অন্যান্য পশ্চাদপদ শ্রেণির স্বাভিমান রক্ষায় বদ্ধপরিকর। তাদের ঐতিহ্যশালী ক্ষেত্রগুলিকেও সংরক্ষণের আওতায় আনছে সরকার। তার আগে ১২৬তম সংশােধনী আইন নিয়ে আলােচনাকালে বিধানসভার অধ্যক্ষ হিতেন্দ্রনাথ গােস্বামী জানান, তারা তপশিলভুক্ত জাতি এবং উপজাতি গােষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘ আলােচনা করে এক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে। সব বিরােধী সদস্যই বিলটি সমর্থন করেছেন। বিধানসভার ৫০ শতাংশ বিধায়কের সমর্থনের পর তা আইনে পরিণত করা কসভা এবং রাজ্যসভায় পাশ করা হয়েছে। তাই আর আলােচনা না করে তপশিলভুক্ত জাতি উপজাতি গােষ্ঠীর উন্নয়নে প্রস্তুত করা প্রতিবেদনটি তা পাঠ করার জন্য পরিষদীয় মন্ত্রী চন্দ্রমােহন পাটোয়ারীকে নির্দেশ দেন। চন্দ্রমােহন পাটোয়ারী তপশিলভুক্ত জাতি উপজাতি উন্নয়নে সরকার সার্বিক কল্যাণে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এর জন্য তিনি মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেন। তিনি দুর্নীতি নিবারণে শূন্য সহনশীলতার কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বিরােধী দলপতি দেবব্রত শইকিয়া তপশিলভুক্ত উপজাতি গােষ্ঠীর উন্নয়নে ও বিভিন্ন সামগ্রি ক্রয়ের নামে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযােগ করলে চন্দ্রমােহন পাটোয়ারী জানান, উপজাতি উন্নয়ন মন্ত্রী চন্দন ব্রহ্মকে দিয়ে বিষয়টি তদন্ত করা হবে। কংগ্রেসের শেরমানআলি আহমেদ বলেন, চর অঞ্চলে ২৫ লক্ষ প্রায় সংখ্যালঘু মানুষের বাস। সেখানকার উন্নয়নে সরকারের গাফিলতির কথা উল্লেখ করে বলেন, তাদেরকে বাংলাদেশি বলে অপবাদ দেওয়া হয়। অধ্যক্ষ তাকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘পয়েন্ট অব অর্ডার’ না তুলে বক্তব্য রাখা যায় না। বিধানসভার অধ্যক্ষ হিতেন্দ্রনাথ গােস্বামী বিধানসভায় প্রয়াত প্রাক্তন বিধায়ক রাজেন বরঠাকুর, প্রাক্তন সাংসদ ইন্দ্ৰমনি বরা, নাগাল্যান্ড বিধানসভার প্রাক্তন অধ্যক্ষ ভি ইসুং, প্রাক্তন স্বাধীনতা সংগ্রামী নুরুল হুদা, স্বাধীনতা সংগ্রামী গােপালচন্দ্র গােস্বামী, অভিনেতা রত্ন ওঝা, শিক্ষাবিদ প্রমােদ চক্রবর্তী, শিক্ষাবিদ মুকুল চন্দ্র চালিহা, শিক্ষাবিদ সেনেহী বেগম প্রমুখদের মৃত্যুতে শােক প্রস্তাব পাঠ করেন এবং তাদের স্মৃতিতে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.