Header Ads

বঙ্গ বিজেপি কী দিলীপে আস্থা হারাচ্ছে !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ

 দল কী আস্থা হারাচ্ছে দিলীপে? প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতা সফরের পরেই এই জল্পনা মাথা চারা দিয়েছে। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের আচরণ দিলীপের প্রতি অখুশি মনোভাব পরোক্ষে বুঝিয়ে দিয়েছে বলে মদনে করছেন অনেকেই। এমনটাই দাবি করা হচ্ছে। এই নিয়ে রাজ্য বিজেপির অন্দরেও মতভেদ তৈরি হয়েছে। সভাপতি পদে দিলীপের প্রত্যাবর্তন না পরিবর্তন এই নিয়ে জল্পনা জোরালো হচ্ছে। 


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন কলকাতা সফর করছেন ঠিক তখনই শহরে হাজির হয়েছিলেন সেনাপতি অমিত শাহের দূত ভূপেন্দ্র যাদব। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক ভূপেন্দ্র যে শহরে এসেছেন সে খবর চাপা পড়ে গিয়েছিল মোদীর প্রচারের জোয়ারে। রবিবার কলকাতায় রাজ্য বিজেপির সদর কার্যালয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন ভূপেন্দ্র। কোর কমিটির ১৫ জনের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করেছেন তিনি। এই রিপোর্ট অমিত শাহকে জমা দেবেন ভূপেন্দ্র যাদব।
সূত্রের খবর, ভূপেন্দ্র কোর কমিটির যে ১৫ জনের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে বৈঠক করেছেন তাঁদের অনেকেই সভাপতির পরিবর্তন চেয়েছেন। অর্থাৎ দিলীপের প্রত্যাবর্তনে আপত্তির কথা জানিয়েছেন তাঁরা। যদিও রাহুল সিনহাকে সরিয়ে দিলীপের হাতে সভাপতি পদের দায়িত্ব দেওয়ার পর রাজ্যে বিজেপি শিবির অনেকটাই চাঙ্গা হয়েছে। প্রায় শূন্য অস্তিত্বে থাকা বিজেপি এখন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এর বেশ কিছুটা কৃতিত্ব যে দিলীপের সেকথা অনেকেই মেনে নিয়েছেন।
লোকসভা ভোটের আগে থেকেই হঠাৎ করে উগ্রতা এবং আস্ফালনের পরিমান বাড়িয়ে দেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। অস্ত্র নিয়ে মিছিল। একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য।
অশালীন ভাষার ব্যবহারে রাজ্য বিজেপিকে একাধিকবার অস্বস্তিতে ফেলেছেন দিলীপ ঘোষ। সেটা নজর এড়ায়নি শীর্ষ নেতৃত্বের। দলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র সঙ্গেও একাধিকবার প্রকাশ্যে বিবাদে জড়িয়েছেন তিনি। বাবুলকে নিজের সীমার মধ্যে থাকার কথা বলে সচেতন করেছেন দিলীপ। এতে প্রকাশ্যে এসেছে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব।
তৃণমূল কংগ্রেস থেকে মুকুল রায়ের বিজেপিতে যোগদান রাজ্য বিজেপি নেতারা অনেকেই প্রথমে মেনে নেননি। কিন্তু বাস্তবে দিলীপের থেকে মুকুল যে অনেক বেশি দক্ষ সংগঠক সেটা প্রমাণ করে দিয়েছেন লোকসভা ভোটে। কারণ বিজেপির প্রতি বিশ্বস্ততা প্রমাণে সেটাই ছিল মুকুলের শেষ সুযোগ। সেটা তিনি প্রমাণ করেছেন। একের পর এক তৃণমূল নেতার বিজেপিতে যোগদান সম্ভব করে দেখিয়েছেন মুকুল। এটা যে দিলীপের কাছে ঈর্ষার কারণ হয়েছিল সেটা প্রকাশ্যে এসেছে একাধিকবার।
বিজেপির নীচু তলার লোকেদের কাছে এখনও দিলীপ ঘোষের গ্রহণ যোগ্যতা রয়েছে। তাই বিধানসভা ভোটের আগে কী দিলীপকে সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইবে বিজেপি? নাকি শুধু আচরণ নিয়ে সতর্ক করেই আপাতত দিলীপেই ভরসা রাখবেন! অন্যদিকে কলকাতা সফরে এসে মোদী দিলীপ আর মুকুলের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তাতে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে মুকুলেই সন্তুষ্ট শীর্ষ নেতৃত্ব। বিধানসভা ভোটে তাই মুকুলকে সামনে রাখতে চাইছেন মোদী-অমিত শাহরা--এমনটাই মনে করছেন বঙ্গ বিজেপি’র অনেকেই।
অন্যদিকে এ প্রশ্নও উঠছে যে, ক্রমশ কী কোণঠাসা হচ্ছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ! রানাঘাটে দিলীপের বিস্ফোরক মন্তব্য নিয়ে প্রকাশ্যেই সমালোচনার পারদ চড়ালেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। টুইটে বাবুল লিখেছেন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন দিলীপ ঘোষ।
রানাঘাট গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপর ঘোষ বলেছেন, বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ, অসম, কর্নাটকে কুকুরের মতো মারা হয়েছে হিংসায় জড়িত বিক্ষোভকারীদের। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করলে কুকুরের মতোই গুলি করে মারা উচিত। এই রাজ্যেও সেরকম হওয়া উচিত ছিল। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সমর্থনে প্রচারসভায় এমনই মন্তব্য করেন তিনি।
দলের রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্যের প্রকাশ্যেই সমালোচনা করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তিনি টুইটে লিখেছেন, 'দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন দিলীপদা'। টুইটে তিনি লিখেছেন, এটা দিলীপ ঘোষের নিজস্ব মতামত। এর সঙ্গে বিজেপি দলের কোনও যোগ নেই।
এতেই দিলীপকে ঘিরে জল্পনা বাড়ছে। কারণ প্রধানমন্ত্রী কলকাতা সফরে যেদিন এসেছিলেন সেদিন বিমানবন্দরে মোদী দিলীপের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। কথা বলেছিলেন মুকুল রায়ের সঙ্গে। লোকসভা ভোটের সাফল্যের পর থেকেই যে রাজ্য বিজেিপতে মুকুলের গুরুত্ব বে়ড়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ভাল ফল করতে হলে যে মুকুলের সাহায্য নিতেই হবে তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.