Header Ads

কেউ কেউ জানে--অনেকেই জানে না !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ

দেশ ভাগের পক্ষে ছিলেন না জিন্নাহ্--এমনটাই অনেকে মনে করেন, কিন্তু এই ধারণা সস্পূর্ণ ঠিক নয়। দেশ ভাগের পক্ষে  তাঁর না থাকার একটা কঠিন শর্ত ছিল--স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্র্রী বানাতে হবে তাঁকে। গান্ধীজীর তাতে প্রাথমিকভাবে আপত্তি ছিল না--তাই অনেকে এটাও মনে করেন যে গান্ধীও দেশ ভাগের পক্ষে ছিলেন না। কিন্তু জিন্নাহকে প্রধানমন্ত্রী মেনে নিলে কংগ্রেসের ‘‘স্বাধীনতা সংগ্রাম’’-এর ইতিহাস মুসলিম লীগের ‘‘সংগ্রামী ইতিহাস’’-এর আড়ালে চাপা পড়ে যাবে এবং  গোটা ভারত জুড়ে মুসলিম লীগের আধিপত্য কংগ্রেসের চেয়ে অনেক বেড়ে যাবে। সুতরাং জিন্নাহকে যারা কোন মূল্যেই  প্রধানমন্ত্রীত্ব দিতে রাজি ছিলেন না, গান্ধীর সেইসব প্রিয় শিষ্যরা গান্ধীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন কেন জিন্নাহকে প্রধানমন্ত্রী করা যাবে না। এই রাজনৈতিক তত্ত্ব বোঝার পর ভারত বিভাজনের পক্ষে থাকাদের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন গান্ধী এবং যখন জিন্নাহ-ও বুঝলেন স্বাধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন তাঁর পূরণ হচ্ছে না তখন তিনি দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে (ধর্মীয়) ভারত ভাগের দাবিতে সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ভাগে যিনি দৃঢ় অবস্থানে ছিলেন তিনি নিজে কতটা মুসলিম ছিলেন তা নিয়ে আজও পাকিস্তানীরা রীতিমতো সংশয়ে ভোগেন। 


কারণ, পাকিস্তানের জাতির জনক জিন্নাহ’র ঠাকুর্দা ছিলেন পাঞ্জাবের শাহিওয়াল রাজপুত। তাঁর মা ছিলেন গুজরাটি মুসলিম। জিন্না নিজে বিয়ে করেছিলেন এক পারসি মহিলাকে এবং তাঁর একমাত্র কন্যা বিয়ে করেছিলেন একজন খৃস্টানকে ! তাই হয়তো পাকিস্তানের মানুষ তাঁকে প্রত্যাখ্যান করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েই বলতে গেলে পাকিস্তান ছেড়ে বিদেশে বসবাস শুরু করলেন !
এই উপমহাদেশে জিন্নাহ’র মতো এক উদভ্রান্ত অস্থির ও দুঃখী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আর কেউ ছিলেন না বলা যেতেই পারে। পাকিস্তনের রাষ্ট্রপতি পদে বসার কয়েক মাসের মধ্যেই নিদারুণ উপেক্ষা ও অবহেলায় জিন্নাহ’র মৃত্যু ঘটে। নিজের স্মৃতিকথায় জিন্নাহ’র চিকিৎসক লিখেছেন--চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পান নি পাকিস্তানের কায়েদ-ই-আজম জিন্নাহ। মৃত্যুর আগে কোন ‘অ্যাটেণ্ডেন্ট’ও ছিল না তাঁর পাশে। জিন্নার একমাত্র বোন ফতিমা জিন্নাহ-ও কোনরকম সম্মান পান নি পাকিস্তানে। প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান ! ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান গড়েও জিন্নাহ কিছুই পান নি।
কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একমাত্র প্রতিপক্ষ নেহরু কিন্তু ১৭ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রীত্ব করে গেছেন--নিজের বোনকে (বিজয়লক্ষ্মী) রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ সভার চেয়ারপার্সন করেছিলেন। নিজের কন্যা ও পৌত্রকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রীর পদে বসানোর ক্ষেত্র তৈরি করে যেতে পেরেছিলেন !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.