Header Ads

স্বাধীন ভারতের প্রথম মন্ত্রীসভার বাঙালি মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ

কংগ্রেসের ভারতভাগের প্রস্তাব পাসের বর্ণনা মৌলনা আবুল কালাম আজাদের ‘ভারত স্বাধীন হল’ বই-এর ‘একটি স্বপ্নের সমাধি’ অধ্যায় চমৎকার বর্ণনা করা হয়েছে।
‘ভারত স্বাধীন হল’ পুস্তকের ‘একটি স্বপ্নের সমাধি’ অধ্যায় লেখা হল। ১৯৪৭-এর ১৪ জুন এআইসিসি-র অধিবেশন বসে। আমি এআইসিসি-র ঢের ঢের মিটিং দেখেছি। কিন্তু এমন উদ্ভট একটি বৈঠকে থাকার দুর্ভাগ্য আমার কমই হয়েছে। যে কংগ্রেস বারবার ভারতে ঐক্য আর স্বাধীনতার জন্যে লড়াই করে এসেছে, এখন সেই কংগ্রেস-ই কিনা দেশকে ভাগ করার সরকারি প্রস্তাব নিয়ে মাথা ঘামাতে বসেছে !’


(ভারত স্বাধীন হল, একটি স্বপ্নের সমাধি অধ্যায়, মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, অনুবাদ- সুভাষ মুখোপাধ্যায়, ওরিয়েন্টাল লংম্যান পৃঃ১৯৬) প্রস্তাবটি ভোটে গেলে পক্ষে ২৯ জন, বিপক্ষে ১৫ জন ভোট দেন। এমনকি গান্ধীজির আবেদন সত্ত্বেও এর চেয়ে বেশি সদস্যকে দিয়ে পক্ষে ভোট দেওয়ানো যায়নি !
(ঐ গ্রন্থে, পৃঃ ১৯৮) মনে রাখতে হবে ‘একটি স্বপ্নের সমাধি অধ্যায়’ ৫০ বছর পর জনসমক্ষে আনা হয়। যাতে স্বাধীনতা সত্যি বা বলা যায় স্বাধীনতা লাভের থেকে গদি লাভ বড় প্রাধান্য পেয়েছিল। মৌলানা আবুল কালাম আজাদের কথাতে বলি, ‘আমরা আজই যদি স্বাধীনতা নগদ হাতে পেতে চাই, তাহলে ভারত বিভাগের দাবির কাছে মাথা নোয়াতে হবে। (ঐ গ্রন্থে, পৃঃ ১৯৭)
দেশ স্বাধীন হল--দেশ ভাগের মধ্যে দিয়ে। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট নেহেরুর মন্ত্রিসভায় শ্যামাপ্রাসাদ মুখার্জী শিল্পমন্ত্রী রূপে শপথ গ্রহণ করেন--যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশানুযায়ী শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে নয়। দেশ স্বাধীনের পর হিন্দু মহাসভাকে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে আত্মনিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি--স্বাধীনতার পর গান্ধীজি যেমন বলেছিলেন, ‘‘Let  Congress be dissolved’’। ভারতের শিল্পমন্ত্রী থাকাকালীন শিল্প উন্নয়ন নিগম, প্রথম শিল্পনীতি প্রণয়ন, চিত্তরঞ্জন লোকমটিভ স্থাপন, সিন্ধ্রি সার কারখানা-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন শ্যামাপ্রসাদ। খড়গপুরে ভারতের প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স স্থাপনা, কলকাতার প্রথম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সোশাল ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্থাপনার ভাবনা তাঁরই মস্তিষ্ক প্রসূত।
১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার বেড়ে চলে। হত্যা, লুন্ঠন, নারীর সম্ভ্রমহানি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। এর প্রতিবাদে ১৪ এপ্রিল, ১৯৫০ নেহেরু মন্ত্রিসভার মন্ত্রী হয়েও সংখ্যালঘু নিরাপত্তা (পূর্ব পাকিস্তানের হিন্দু সংখ্যালঘুর নিরাপত্তা) ও নেহেরু-লিয়াকত চুক্তির প্রতিবাদে লোকসভায় প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন ডঃ মুখার্জী। অবশেষে নেহেরু মন্ত্রিসভা থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। ১৯৫০ সালেই সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মৃত্যু হয়। কংগ্রেসের মধ্যে জাতীয়তাবাদী শক্তির ভর কেন্দ্রে শূণ্যতা সৃষ্টি হয়। ১৯৫১ সালের অক্টোবরে অনেক চিন্তন ও মন্থন শেষে তিনি নতুন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনসংঘের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৫২ সালের মে মাসে শ্যামা প্রসাদ মুখার্জী দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। ভরতীয় জনসংঘ প্রথম সাধারণ নির্বাচনে তিনটি আসন লাভ করে।
ডঃ মুখার্জী লোকসভায় ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি নামে বিরোধী দলের প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্ব দান করেন। লোকসভায় বিরোধী দলের নেতা হিসেবে নিজেকে উদাহরণ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন।
জনসংঘ ঐ সময় বাংলা প্রদেশে ৮টি আসন ও রাজস্থানে ৮টি আসন লাভ করে। রাজস্থানে জমিদার প্রথা বিলোপ আইনের প্রশ্নে বিধায়করা দ্বিধাবিভক্ত ছিল। ডঃ মুখার্জী রাজস্থান পরিষদীয় দলের জরুরি বৈঠক ডেকে নির্বাচনী ইস্তেহারের প্রতিশ্রুতি পালনের দায়বদ্ধতার কথা বলেন। ওই সভায় আটজন বিধায়কের মধ্যে মাত্র দু’জন ভৈরব সিং শেখা‍ওয়াত ও জগৎ সিং জালান উপস্থিত ছিলেন। ডঃ মুখার্জী তৎক্ষনাৎ বাকি ছ’জন বিধায়ককে বহিষ্কার করেন। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতার অঙ্গীকার করে কর্মে ও কথায় সত্য আত্মীয়তা অর্জন করে মাটির কাছাকাছি নেমে আসেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.