Header Ads

লােকসভায় ক্যাব পাশ, এনআরসির প্রাসঙ্গিকতা আর কোথায়? ১৯ লক্ষের ভাগ্যও অনিশ্চিত !

অমল গুপ্ত, গুয়াহাটি, ৯ ডিসেম্বর : ১৯৮৫ সালের অসম চুক্তির অন্যতম শর্ত ছিল, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চকে ভিত্তিবর্ষ হিসাবে গণ্য করে নাগরিকত্ব প্রদান করতে হবে। অসম-বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করতে হবে। এবং প্রকৃত ভূমিপুত্ৰ খিলঞ্জীয়াদের সংজ্ঞা নির্ণয় করতে হবে। আজও ২৬৩ কিলােমিটার সীমান্ত সিল হল না। খিলঞ্জীয়ার সংজ্ঞা নির্ণয় হল না। অসম চুক্তির ভিত্তি বছর ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে গণ্য করে অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী হল। আর ক্যাবের ভিত্তিবর্ষ হল ১৯১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। ১৬০০ কোটি টাকা ব্যয় করে এনআরসি প্রস্তুত হল। ৫৬ হাজার কর্মচারী চার বছর ধরে কাজ করে ১৯ লক্ষ মানুষকে এনআরসি থেকে বাদ দিলেন। এই ১৬০০ কোটি টাকার ব্যাপক নয়ছয় করেছে বলে এনআরসি-র সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (ক্যাগ) প্রতিবেদন প্রকাশ করল। সব অভিযােগ থেকে রেহাই দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট প্রতীক হাজেলাকে ঠিয়ে দিলেন। এনআরসি নবায়নে সাংঘাতিকভাবে ভাষিক এবং ধর্মীয় মানষকে হয়রানি করা হল। প্রায় ৫৮ জনের প্রাণ গেল। সরকারি তথ্যে বলছে, ডিটেনশন ক্যাম্পগুলিতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। 
সবকিছুর মধ্যে এক চূড়ান্ত প্রহসন এবং সংখ্যালঘু মানুষদের চুড়ান্তভাবে হেনস্থা করা হল। এর মধ্যে সােমবার লােকসভায় ক্যাব পাশ হয়ে গেল। পক্ষে ভােট পড়ল ২৯৩, বিপক্ষে পড়ল ৮২টি ভােট। এনআরসি প্রস্তুত হল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চকে ভিত্তিবর্ষ করে। এবং ক্যাব পাশ হল ২০১৪ সালের ৩১ মার্চকে ভিত্তিবৰ্ষ করে। তবে এনআরসি-র প্রাসঙ্গিকতা কোথায় থাকল ? লােকসভা চুপ্রিম কোর্টের নির্দেশাবলিকেও লঙঘন করল। তবে কেন কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হল ? ১৯ লক্ষ নামছুট ব্যক্তিদের ভাগ্যে কী ঘটবে? এই প্রেক্ষাপটে অসমে ব্যাপকহারে ক্যাব বিরােধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল দাহ ও উজান-নিম্ন অসমে রেলপথ অবরােধ, প্রতিবাদ মিছিল, মন্ত্রীদের ঘেরাও, কালাে পতাকা প্রদর্শন। আগামীকাল আসু এবং উত্তরপূর্ব ছাত্রসংস্থার (নেসাে) ১১ ঘণ্টা অসম বন্ধ। সেই বন্ধকে সমর্থন করেছে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি এবং অন্যান্য সংগঠন। ক্যাব বিল পেশ করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জানালেন, ১৯৪৭ সালের পর যারা এদেশে এসেছে, তাদের রেশন কার্ড থাকুক বা না থাকুক নাগরিকত্ব পাবেন। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশ যুদ্ধের সময় যারা এসেছে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এইবিল ধর্মনিরপেক্ষ ভাবধারাকে বাতিল করেনি। কোনাে ভেদাভেদ করেনি।নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয় (শিলং ছাড়া) এবং ত্রিপুরার একাংশ যেখানে ইনারলাইন পারমিট আছে, সেই রাজ্যে নাগরিকত্ব সংশােধনী বিল (ক্যাব) বলবৎ করা হবে না। মণিপুরকেও ইনারলাইন পারমিটের অধীনে আনা হচ্ছে। অসমে ষষ্ঠ তফশিলভুক্ত এলাকা ডিমাহাসাও, কাৰ্বি আংলং, এবং বিটিএটি-তে ক্যাব লাগু হবে না। নাগরিকত্ব পেতে গেলে আগে ১১ বছর লাগত কিন্তু এখন ছয় বছর লাগবে। পশ্চিমবঙ্গ এবং উত্তরপূর্বাঞ্চলে যেসব শরণার্থী ১৯৪৭ সালের পরে এসেছে, তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অসমের বিভিন্ন সংগঠনকে আন্দোলন না করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অসমের ১৪০টি সংগঠনের সঙ্গে ১১৯ ঘণ্টা ধরে আলােচনা করে সবার মতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যদি প্রমাণিত হয় এই বিল বিভাজনমুখী, বিভিন্ন মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি করছে তবে তিনি সেই বিল প্রত্যাহার করে নেবেন। আগামীকাল রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করার সম্ভাবনা আছে। আগামীকালই ১১ ঘণ্টা অসম বন্ধ। এর মধ্যেই আগামী ১৫-১৬ দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী আবে আসছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.