Header Ads

বামেরা এ সবই জানে কিন্তু কাউকে জানতে দেয় না, শ্যামাপ্রসাদকে সাম্প্রদায়িক চিহ্নিত করে !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ

সংসদীয় গণতন্ত্রকে ‘‘শুয়োরের খোঁয়াড়’’ বলে যারা মনে করে তাদের কাছে প্রজাতন্ত্র-এর (বা গণতন্ত্র) আইডিয়াল মডেল হল ‘পিপলস্ রিপাব্লিক অফ চায়না’। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গোটা বিশ্বের সামনে চীনকে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চীন’ বলে পরিচিত করায়। গণপ্রজাতন্ত্রী--কিন্তু সে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র-এর বিন্দুমাত্র অস্তিত্ব নেই। প্রজাতন্ত্র বা গণতন্ত্র শব্দের অর্থ মানে বইতে যা-ই লেখা থাকুক না কেন--বিভিন্ন মতাদর্শের সরকার বা রাজনৈতিক দল তার অর্থ নিজেদের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রেখে তৈরি করে নেয়। চীনের গণপ্রজাতন্ত্রের মডেলকে সামনে রেখেই এদেশের কমিউনিস্টরা সংসদীয় রাজনীতিতে বা ‘শুয়োরের খোঁয়াড়ে’ নিজেদের মানিয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা যে করে গেছে তা প্রায় সাড়ে তিন দশকের বাম রাজত্বের ইতিহাসের দিকে তাকালেই বুঝতে কোন অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। কমিউনিস্টদের জাতীয়তাবোধ মানেই হল ‘গণপ্রজাতন্ত্রী চায়না’র জাতীয়তাবোধ ! এটা তারা বার বার প্রমাণ করে চলেছে স্বাধীনতার অনেক আগে থেকে এখনও পর্যন্ত। 

স্বাধীনতার আগে ১৯৪৩ সালেই পি সি যোশীর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি সম্মেলনে পাকিস্তানের পক্ষে সুনির্দিষ্ট স্পষ্ট প্রস্তাব নিয়েছিলেন কমিউনিস্ট নেতারা এবং আওয়াজ তুলেছিলেন--‘পাকিস্তান মানতে হবে তবেই ভারত স্বাধীন হবে!’
কিন্তু যখন তারা দেখলেন ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান-এর গ্রাসে চলে যাচ্ছে ‘গ্রেটার বেঙ্গল’ তখন শ্যামাপ্রসাদের বঙ্গবিভাজনের  দাবিকে সমর্থন করা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না। তাই বাংলা বিধানসভায় জ্যোতি বসু, রতনলাল ব্রাহ্মণ, রূাপনারায়ণ রায়-এঁদের মতো নেতারা বঙ্গ ভাগের পক্ষে ভোট দিলেন এবং দলীয় বুদ্ধিজীবিদের দিয়ে যে ইতিহাস লেখালেন তাতে শ্যামাপ্রসাদকে সাম্প্রদায়িক চিহ্নিত করলেন। দেশ ভাগের ইতিহাসে কমিউনিস্টদের ভূমিকা ভুলিয়ে দেওয়ার কাজে তাদের আঁতেল বুদ্ধিজীবিদের নিরন্তর সক্রিয় রাখার ব্যাপারে কোনরকম শৈথিল্য তারা দেখায় নি। কিন্তু ইতিহাস মাত্র একজনই লেখেন না--আড়ালে-আবডালে অসংখ্য মানুষ ইতিহাস লিখে রেখে যান--এইসব ইতিহাসই এক সময় সত্যকে সামনে তুলে ধরে।
কিন্তু যে কমিউনিস্টরা তাদের পার্টি সম্মেলনে পাকিস্তানের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল এবং ‘পাকিস্তান মানতে হবে তবেই ভারত স্বাধীন হবে’ শ্লোগান তুলেছিল সেই শ্লোগানের কালি শুকোবার আগেই সদ্য বিচ্ছিন্ন পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিল--আজও পাকিস্তানে কমিউনিস্ট পার্টি নিষিদ্ধ ! তবু ভারতের কমিউনিস্ট নেতারা পাকিস্তানের মুসলিমদের এদেশের নাগরিকত্ব কেন দেওয়া হবেনা--এই প্রশ্নে আগুনে নিয়মিত ঘৃতাহূতি দিয়ে চলেছেন ! চীনের গণপ্রজাতন্ত্রী কমিউনিস্ট সরকার ‘তিয়ান-আন-মেন স্কোয়ার’-এর ঘটনা নিয়ে, মুসলিম অধ্যুষিত সিনকিয়াং প্রদেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মুসলিম বিদ্রোহীদের হত্যা লীলা চালানো নিয়ে, তিব্বতে এবং হংকংয়ে বুলডোজার চালানো নিয়ে এদেশের কমিউনিস্ট নেতা ও আঁতেলরা একটা শব্দও উচ্চারণ করেন না, ফেসবুকে পদ্য লেখেন না, সভা সেমিনারের আয়োজনও করেন না, ফিল্ম বানান না, নাটকও লেখেন না ! এদের যত শোকতাপ ব্যথা-বেদনা তিনটি ইসলামিক রাষ্ট্রের মুসলিমদের  এদেশে কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না তা-ই নিয়ে !
স্বাধীনতার পর দিনই যখন পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দিল সেই দিনই রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানের (পূর্ব+পশ্চিম) বড় বড় কমিউনিস্ট নেতারা পালিয়ে এলেন এই ভারতেই। এখানেই তারা সাচ্চা কমিউনিস্ট হয়ে  দাপটের সঙ্গে রাজনীতি শুরু করলেন। পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির দুই জাঁদরেল মুসলিম নেতা সাজ্জাদ জাহির ও তাঁর ভাই আলি জাহিরকে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হলে নেহরুর অনুরোধে তাদের ভারতে চলে যাওয়ার শর্তে ছেড়ে দেওয়া হয়। ভারতে এসে তারা নতুন উদ্যোমে কমিউনিস্ট নেতা হিসেবেই রাজনীতি শুরু করেন।
এ দেশের কমিউনিস্ট নেতা-আঁতেলরা এসবই জানেন--কিন্তু সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা দলেরই পরবর্তী প্রজন্মের কর্মী-সমর্থকদের কখনো সত্যিটা জানতে দেন নি--যা কিছু জানিয়েছেন তা তাদের তৈরি বিকৃত অসত্য ইতিহাস মাত্র ! পাকিস্তান তথা মুসলিমদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্যে যে কমিউনিস্ট পার্টি মিছিল করেছে পার্টি সম্মেলনে পাকিস্তানের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করেছে সেই পাকিস্তানে কমিউনিস্টদেরই ঠাঁই হল না--দেশের পক্ষে ক্ষতিকর বিবেচনা করে চরম হেনস্থা ও অপমানের সঙ্গে বিতাড়িত হল রাতারাতি ! আত্মনিয়ন্ত্রণের দাবি তো দূরের কথা তারা হয় পালিয়ে এলেন না হয় নিজেদের রঙ রাতারাতি পাল্টে ফেললেন। তারপরেও আজ পর্যন্ত ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিগুলো পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটা রেজেলিউশনও নিতে পারে নি। কারণ, ভারতে তাদের দাপুটে রাজনীতির পুঁজি বলতে সংখ্যালঘু ও উদ্বাস্তু রাজনীতি।
যদিও উদ্বাস্তুরা ইতিমধ্যেই এদের  উদ্বাস্তু দরদী ভূমিকা ঠিক কোন্ স্তরের তা বুঝে গিয়েছে। সংখ্যালঘু সেন্টিমেন্ট ছাড়া এই দেউলিয়া দলটির এই মুহূর্তে আর কোন সম্বলই নেই। তাই চরম কোণঠাসা অবস্থা থেকে উঠে আসার জন্যে তাদের হাতে সংখ্যালঘু তাস ছাড়া কিছু না থাকায় তারা নাগরিক সংশোধনী আইনটিকেই প্রাণপণে আঁকড়ে ধরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু বার বার মানুষকে নির্বোধ ভাবা যায় কিন্তু চিরকাল তাদের নির্বোধ ভাবাও যায় না নির্বোধ বানানোও যায় না !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.