Header Ads

রাজ্য রাজনীতির কমিক রিলিফ বিমান-সোমেন !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ

রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপিকে অনেকটাই আশ্বস্ত করে নিজস্ব কমেডিয়ান ঢঙে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান তথা বিমান বসু কংগ্রেসের  সঙ্গে মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বললেন--আজকের এই মিছিলে টিএমসি ও বিজেপি’র একজনও নেই--যদি কেউ থেকেও থাকেন তাহলে মানে মানে কেটে পড়ুন ! বিমান বসুর ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি নিয়ে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না যদিও তবু সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর শ্রীমুখ-নিঃসৃত বাণীর রাজনৈতিক গুরুত্বকে অস্বীকার  করা যায় না। এই অসাধারণ মন্তব্যের পরেও সাংবাদিকরা যখন জানতে চাইলেন--মমতা চাইছেন বিজেপি’র বিরুদ্ধে সকলে  একসঙ্গে বিরোধিতা করুন, সেক্ষেত্রে সিপিএম কি তাঁর ডাকে সাড়া দেবে? উত্তরে তিনি তাঁর স্বভাবসিদ্ধ স্টাইলে জানালেন--যখন আমরা লক্ষ্য করব টিএমসি বিজেপি’র মতো হনুমান জয়ন্তী করছে না জন্মাষ্টমী করছে না--বিজেপির মতো রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে মেশাচ্ছে না তখনই আমরা এ ব্যাপারে ভেবে দেখতে পারি !


শূন্য কলসের বিকট আওয়াজ হয়তো একেই বলে ! গত লোকসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের মিলিত ভোটের শতকরা হার কত ছিল, কদিন আগের তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনেও তাঁরা বাঙালিকে তাদের পক্ষে কতটা জাগাতে পেরেছেন--এসব নিয়ে বিমানবাবুরা বিন্দুমাত্র ভাবেন না--ভেবে দেখার প্রয়োজন অনুভব করলে তাঁরা এই হাস্যকর প্রগলভতায় উন্মত্ত হতেন না। দুটি দলের মিলিত চেষ্টায় আজকের মিছিল একটু ভদ্রস্থ চেহারা পেতেই তাঁরা ভুলে গেলেন গত সাতদিন ধরে মমতার বিজেপি বিরোধী মিছিলে কত লোক হাঁটছে--এমন কী ক’দিন আগেও বিজেপি’র যে মহা মিছিল হয়ে গেল তার জনউচ্ছ্বাস পরিবর্তনের সময়ের দু’একটা মিছিলের পরে আর দেখা যায় নি। এটাও সত্যি যে, টিএমসি’র পদযাত্রায় মানুষের অংশগ্রহণ কিছুটা হলেও কমছে--দীর্ঘ আন্দোলনের এটাই বাস্তবতা। তবুও টিএমসি’র পাশে মানুষের ভিড় দেখে বিমানবাবুরা বিচলিত  হচ্ছেন--বুঝতে পারছেন বিজেপি বিরোধিতায় শুধু রাজ্যেই নয় গোটা দেশে টিএমসি একাই বিজেপি বিরোধী ব্যাটন হাতে তুলে নিয়েছে। প্রচণ্ড চাপে পড়লেই বিমানবাবুদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ প্রগলভতা চিরকালই মাত্রা ছাড়ায়--আজও সেটাই প্রত্যক্ষ করা গেল।

সোমেনবাবুও কিছু কম যান না। তিনিও বললেন--বিজেপিকে সরাতে পারে একমাত্র বাম-কংগ্রেসের মিলিত শক্তি ! একবারও  ভেবে দেখলেন না হাসতে হাসতে রাজ্যের মানুষের দম আটকে যাবে কিনা ! ভেবে দেখলেন না ২০১১ সাল থেকে বিধানসভা, পুরসভা, পঞ্চায়েত, লোকসভা, বিধানসভা উপনির্বাচনে এ রাজ্যে তাঁর সর্বভারতীয় দলের পারফরমেন্সটা ঠিক কেমন--মানুষের কাছে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা কতদূর নেমে গেছে--বিশ্বাসযোগ্যতাও কতটুকু তাঁরা ধরে রাখতে পেরেছেন ! শুধু বড় বড় ফাঁকা আওয়াজ দিয়ে যে টিএমসি বা বিজেপি বিরোধিতা করা যায় না--তার জন্যে প্রতিটি ইস্যুতে রাস্তায় নেমে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হয়--মমতার মতো রক্তাক্ত হতে হয়--কোন অবস্থাতেই রাস্তা ছেড়ে না পালিয়ে দ্বিগুণ তেজে আন্দোলনের রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়--এ ব্যাপারে তাঁদের চেতনা-চৈতন্য আর কাজ করছে না। তবু তারা টিএমসি’র সঙ্গে একসঙ্গে বিজেপি বিরোধিতায় না নেমে বামেদের হাত ধরেই এ রাজ্যে বিজেপিকে হারাবার স্বপ্ন দেখছেন ! এঁরা আত্মসমীক্ষার ধার ধারেন না--কি ভাবে কোন রাজনৈতিক প্যাঁচে মমতা তাঁদের কোমায় পাঠিয়ে দিতে পারলেন--কিসের জোরে বিজেপি তাদের জায়গাটা লুফে নিয়ে এ রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি হয়ে উঠল--তার সঠিক বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষমতা হারিয়ে শুধুমাত্র কণ্ঠস্বরটাই চড়া রাখার মধ্যে দিয়েই নিজের নিজের দলের প্রাসঙ্গিকতা  ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আগামী পাঁচ বছরেও তাঁরা কোমা থেকে উঠে আসতে পারবেন বলে মনে করার মতো কোন সঙ্কেত তাঁরা রাজ্যের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন নি। আগামী পুরসভা নির্বাচনই হোক বা রাজ্য বিধানসভা নির্বাচন--বাম-কংগ্রেস জোট যতগুলো আসনে লড়বে ততগুলো আসনে বিজেপি সুবিধে পাবে নিশ্চিতভাবেই।
বাম-কংগ্রেস--এই দুটি দলই এখন রাজ্য রাজনীতিতে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক--কারণ, ৫-৭% জন সমর্থন নিয়ে আর যাইহোক, এ রাজ্যে টিএমসি বা বিজেপি’র বিরুদ্ধে হামাগুড়িই দেওয়া যায় উঠে দাঁড়ানো যায় না। সুতরাং বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াইটা লড়তে হবে টিএমসিকেই।
কিন্তু সে লড়াই কতটা কঠিন হবে সে প্রসঙ্গে পরে লিখব। এখন কিন্তু বলতেই হচ্ছে--আগামী বিধানসভা নির্বাচন মারাত্মক কঠিন হতে চলেছে টিএমসি’র পক্ষেও। একেবারেই সহজ হবে না সে
লড়াই !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.