Header Ads

অযোধ্যা !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : অযোধ্যানগরীর হাজার খানেক বছরের ইতিহাস অনুসন্ধান করলে পাওয়া যেতেই পারে। তা থেকে একটা বিষয়ে নিশ্চিত বিশ্বাসে পৌঁছানো যায় যে, অযোধ্যা হঠাৎ করে জল থেকে ভেসে ওঠা নগরী নয়। সুতরাং ওই জনপদের একটা ধারাবাহিক জনপ্রবাহের ইতিহাসও কল্পকথা নয়। 
বংশপরম্পরায় প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বহু ঘটনা বা ইতিহাস মুখ থেকে শ্রুতি থেকে স্মৃতি হয়ে অবশেষে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকে। বেশ কিছু অলিখিত থেকে গেলেও শ্রুতি পরম্পরায় বহু ঘটনা বা ইতিহাস বেঁচে থাকে। তার অনেকটাই মানুষের বিশ্বাস হিসেবে চিহ্নিত হয়। 
অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ যে ফাঁকা জমিতে তৈরি হয়নি কোন অ-ইসলামিক স্থাপত্যকে ধ্বংস করে বা ধ্বংসাবশেষের ওপর কোন শক্তিশালী সামন্ততন্ত্রের সক্রিয় প্রোৎসাহনে তৈরি হয়েছিল এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। প্রাচীন ইতিহাসের সিংহভাগই কিছু ধ্বংসাবশেষ, কিছু শিলাখণ্ড, কিছু জনপ্রবাহে ভেসে আসা তথ্য-কথা-কাহিনী নির্ভর। তবু তাকে ইতিহাস বলেই মেনে নিতে হয়। 
বাবরি মসজিদের নিচে যে অবশিষ্ট ৫০ স্তম্ভের বিশাল স্থাপত্যের অস্তিত্ব উঠে এসেছে (তা নিশ্চিতভাবেই বাবরি মসজিদ তৈরির পর সুরঙ্গ কেটে তৈরি হয়নি, মসজিদ তৈরির অনেক আগেই তার অস্তিত্ব ছিল) এবং যেসব মূর্তি ইত্যাদি পাওয়া গেছে (চারকোল পরীক্ষায় যদি সে সবের সময় ৫০০ বছর বা তার কম হয় তাহলে তো জবর দখলের বিষয়ে কোন সন্দেহ-ই থাকার কথা নয়) তা যে কোনভাবেই মুসলিম স্থাপত্যের অংশ বা প্রমাণ নয় তাও প্রমাণিত। বিশেষ করে ওই স্থাপত্যের সময়কালকে দশম থেকে দ্বাদশ শতকের বলে মনা করা হচ্ছে যখন তখন ঐ অযোধ্যা নগরীতে মুসলিম স্থাপত্যের কল্পনাটাও উদ্ভট কল্পনারই নামান্তর। 
ধরে নিলাম ওটা রামমিন্দর বা হিন্দুমন্দির ছিল না। ধরে নিচ্ছি বৌদ্ধবিহার-ই ছিল (বিশেষ করে ঐ সময় হিন্দু এবং বৌদ্ধ স্থাপত্য ছাড়া উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য কি কিছু ছিল?)--তাহলেও কি এটা প্রমাণ হয় না অন্যের ধর্মস্থান জবরদখল করেই বাবরি মসজিদ নির্মিত হয়েছিল? 
যে কোন সত্যকে বা যুক্তিকে বিশেষ উদ্দেশ্যে লাগাতার নেতিবাচক অপযুক্তি ও এঁড়ে তর্কে মিথ্যে প্রমাণ করা যে একেবারে যায় না তা নয়--কিন্তু শেষ বিচারে অপযুক্তি ও এঁড়ে তর্ক সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। অযোধ্যা মামলায় সেটাই ফের আর একবার স্পষ্ট হল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.