Header Ads

ভারতে প্রথম অসমের শিক্ষা বিভাগ ১৯ টি ভাষায় ২ কোটি পাঠ্যপুঁথি সরবরাহ করে ঃ সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য



অমল গুপ্ত,গুয়াহাটি
অসমের মতাে বিভিন্ন জাতিগােষ্ঠীর ভাষা বৈচিত্র ভারতে আর কোথাও নেই। অসমের শিক্ষা বিভাগ ১৯টি ভাষায় ৯টি মাধ্যমের ২ কোটি ৯ লক্ষ পাঠ্যপুথি বিনামূল্যে সরবরাহ করে। যা প্রায় বেনজির। আজ অসম বিধানসভায় তৃতীয় দিনে শিক্ষামন্ত্রী সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য ৩৭,০৫০.২৩ লক্ষ টাকার (মাধ্যমিক এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়) ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর বিতর্কের জবাবে একথা বলেন। তিনি বলেন, শিক্ষা বিভাগের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার প্রতিশ্রুতি পূরণ করে চলেছে। কিন্তু বিরােধীদের কাছে সরকারের ভালাে কিছু চোখে পড়ে না। শুধুই সমালােচনা করে। তিনি বলেন, ভেঞ্চার স্কুলগুলিকে প্রাদেশিকরণ করার ক্ষেত্রে তাদের সরকার সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বেতনের টাকাও ব্যবস্থা করেছে। ৪১ হাজার ৫৩৪ জন চুক্তিভিত্তিক শিক্ষক আছে। ৪৭ হাজার ৮০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। ২০১৬ সালের পর ১৩ হাজার ২৩ জন শিক্ষককে স্থায়ীকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৫ হাজার ২৯৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে প্রাদেশিকীকরণ করার জন্য অতিরিক্ত পুঁজি সংগ্রহের চেষ্টা হচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষক আনুপাতিক হার ঠিক রাখার জন্য যে স্কুলে ছাত্র সংখ্যা খুবই কম, এবং কাছে ভিতে থাকা যে স্কুলের ছাত্র সংখ্যা খুব বেশি এই দুটি স্কুলকে মিলিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসে শিক্ষাবর্ষে এই কাজ শুরু হবে। অভিযােগ করা হয়, তিনি শিক্ষক নিয়ােগ করছেন না। কিন্তু সরকার ইতিমধ্যে মাধ্যমিক স্কুলের ৪৬২ জন অধ্যক্ষ এবং হাইস্কুলগুলিতে ৫৫৪ জন প্রধান শিক্ষককে নিযুক্তি দিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের বদলিকরণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা অনেকেই মানতে চাইছেন না। ধুবড়ি, মরিগাঁও প্রভৃতি জেলার চর অঞ্চলগুলিতে টেট শিক্ষকরা নিযুক্তিপত্রে তাদের জেলায় থাকার কথা উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু নিয়ােগপত্র পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুর্গম জেলা ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র বদলির দাবি জানিয়ে আবেদন করে যাচ্ছে। যা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, অসমে কোনও কাপড়ের কল নেই। ছাত্রছাত্রীদের নির্দিষ্ট মানদণ্ডের ভিত্তিতে ইউনিফর্ম দেওয়ার চেষ্ট চলছে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী চক্র হাইকোর্টে ছয়-ছয়টি রিট আবেদন করে সরকারের ইউনিফর্ম বিতরণের ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করেছে। সরকার উন্নতমানের ইউনিফর্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে বদ্ধপরিকর। আগের সরকারের সময় ছাত্রছাত্রীদের গ্রেস নম্বর দিয়ে তাদের বাহ্যিক সফলতা দেখাবার চেষ্টা করেছিল। তার সরকার গ্রেস নম্বর না দিয়ে সংখ্যাতথ্য নয়, গুণমত মান বজায় রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। স্টার মার্ক পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের ল্যাপটপ দেবার সিদ্ধান্ত থেকে সরকার সরে আসেনি। যে সব ছাত্রছাত্রী অন লাইনের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে, প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষায় বসতে চাইছে। তাদের জন্য সরকার সফ্টওয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাদ্রাসা বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক নিয়ােগের ক্ষেত্রে আদালতগুলিতে মামলার মাধ্যমে বাধার সৃষ্টি করা হয়েছিল। সেই বাধা দূর হয়েছে। সরকার মামলায় জিতেছে। এবার নিযুক্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে। ২০১২ থেকে রাজ্যে টেট পরীক্ষা চলছে। ডিসেম্বরে ৯ হাজার শিক্ষক নেওয়ার জন্য টেট পরীক্ষা নেওয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রী আরবি ভাষা শিক্ষার শিক্ষানুষ্ঠানগুলিতে এসটিএসসি পদ সংরক্ষণের প্রস্তাব দেন। | শিক্ষা বিভাগের ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর ১২ জন সদস্য বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন। কংগ্রেস পরিষদীয় নেতা, বিরােধী দলপতি দেবব্রত শইকিয়া বিতর্কের শুরুতে অংশগ্রহণ করে বলেন, শিক্ষা বিভাগের অ্যাকশন টেকেন প্রতিবেদনগুলি সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। এআইইউডিএফের রফিকুল ইসলাম শিক্ষার বর্তমান মানদণ্ড নিয়ে প্রশ্ন তােলেন। তিনি বলেন, অনেক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষককে দিয়ে চালানাে হচ্ছে। শূন্যপদগুলি পূরণ করা হচ্ছে না। ভেঞ্চার স্কুলের শিক্ষকরা ১০-১৫ মাস ধরে বেতন পান না। মিড-ডে মিলের ক্ষেত্রে এআইইউডিএফের সদস্যের পরামর্শ,বাইরের কোনাে সংস্থা থেকে খাদ্যের ব্যবস্থা না করে ছাত্রছাত্রীদের মায়েদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ডে টাকা জমা দিয়ে এই খাদ্যের ব্যবস্থা করা হােক। মায়েরা ছেলেমেয়েদের জন্য কখনােই খারাপ খাবার দেবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এই ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা বলছেন অথচ বিদ্যালয়গুলিতে কম্পিউটার শিক্ষার কোনাে ব্যবস্থা নেই। কংগ্রেসের কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ শিক্ষাগুরুদের মর্যাদা রক্ষাকরা হচ্ছে না। অনেকেই শিক্ষাগুরুর সঙ্গে চোরেদের তুলনা করা থাকেন। প্রধান শিক্ষকরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বলে অভিযােগ করেন। ৪০ হাজার টেট শিক্ষক টেট শিক্ষক আন্দোলনে নেমেছেন। চুক্তি ভিত্তিক শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ করা হচ্ছে না। আজ ১৮-১৯ মাস হয়েগেল ছাত্রছাত্রীদের ইউনিফর্ম দেওয়া হল না। গুণােৎসব হল, অথচ বিদ্যালয়গুলির কোনাে উন্নয়ন হল না। বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামাে উন্নয়নের জন্য ৯৩০ কোটি টাকা ধার্য্য করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামাের কোনাে উন্নতি হয়নি। তিনি বলেন, মানসিকতার পরিবর্তন ছাড়া সিস্টেমের পরিবর্তন হবে না। শুধু রাস্তাঘাট, সেতু উন্নয়ন করলে চলবে না। শিক্ষার উন্নয়ন দিয়েই জাতির পরিচয় হয়। অগপ’র পবীন্দ্ৰ ডেকা অভিযােগ করেন, বিদ্যালয়ে ভুগােল এবং ইতিহাস তুলে দেওয়ার ফলে ছাত্রছাত্রীদের জ্ঞানের অভাব ঘটেছে। তিনি শংকরদেব, চৈতন্য দেব, গােপীনাথ বরদলৈ, মহম্মদ সাদুল্লার সাহেব প্রমুখদের জীবনী গ্রন্থ প্রকাশের পরামর্শ দেন।হাইস্কুলগুলির পরিকাঠামাে উন্নয়নের জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়কে ১৫ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়ার দাবি জানান। বিজেপি সদস্য সঞ্জয় কৃষাণ চা বাগানের বিদ্যালয়গুলির নানা দুরবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, চা বাগানের ম্যানেজাররা শিক্ষক নিয়ােগ ঠিক মতাে করতে পারেন না। চা বাগানের বিদ্যালয়গুলিতে বিশুদ্ধ পানীয় জন নেই। শৌচালয়গুলির অবস্থা শােচনীয়। স্বচ্ছতার বড় অভাব। অবিলম্বে প্রতিটি বিদ্যালয়গুলিতে স্বাস্থ্য সম্মত প্রস্রাবাগার নির্মাণের দাবি জানান। নির্দল সমর্থক ভূবন পেগু সরকারের শিক্ষা নীতির প্রশংসা করে বলেন, সরকার বিদ্যালয়গুলির সংস্কারের জন্য ৯৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এই টাকা যথাযথ ব্যয় করার জন্য বিধায়কদের জড়িত করে কমিটি গঠনের দাবি জানান। কংগ্রেসের নুরুল হুদা বিদ্যালয়গুলির পরিকাঠামাে উন্নয়নের দাবি জানান। গুণােৎসব হয়েছে। কিন্তু উন্নতি নেই। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল কুমার মহন্ত সংস্কৃত শিক্ষার ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, জার্মানরাও সংস্কৃত শিক্ষার উপর ভিত্তি করে উন্নয়নের শিখরে উঠেছে। বিশ্বে সংস্কৃত ভাষার গুরুত্ব আছে। বিদ্যালয়গুলিতে সংস্কৃত শিক্ষার পাঠ্যক্রম চালু করার পরামর্শ দেন। এআইইউডিএফের আমিনুল ইসলাম ১৪ বছরের কম বয়সী শিশু ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে অভিযােগ করেন। যার ফলে শিক্ষার অধিকার আইন লংঘিত হচ্ছে। বিজেপির সদস্য গুরুজ্যোতি দাস অভিযােগ করেন, সরকারি শিক্ষকরা মােটা অংকের বেতন পান কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানদণ্ড যথেষ্ট হচ্ছে না। | আজ বিধানসভায় অধ্যক্ষ হীতেন্দ্রনাথ গােস্বামী ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে অসম বিনিয়ােজন (নং ৪) বিধেয়ক, ২০১৯ বিলটি গিলােটিনে পাশ করিয়ে দেন। কেবল শিক্ষা বিভাগের উপর আলােচনা হয়।।
মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনােয়াল, অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা, অগপ’র মন্ত্রী অতুল বরা প্রমুখ দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকে যােগ দেওয়ার জন্য দিল্লিতে ছিলেন। অর্থমন্ত্রীর পক্ষে আসাম বিনিয়ােজন বিল উত্থাপন করেন পরিষদীয় মন্ত্রী চন্দ্রমােহন পাটোয়ারী।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.