Header Ads

'তালি এক হাতে বাজে না', তিস হাজারি সংঘর্ষ ইস্যুতে মন্তব্য শীর্ষ আদালতের !!


বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় 
 
গত শনিবার দিল্লির তিস হাজারি কোর্টে হওয়া পুলিশ ও আইনজীবীদের মধ্যকার সংঘর্ষে দুই পক্ষই সমান দোষী বলে জানাল সুপ্রিম কোর্ট। এই বিষয়ে শীর্ষ আধালত বলে, "এক হাতে কেউ তালি বাজাতে পারে না। সমস্যা দুই তরফের থেকেই উৎপন্ন হয়েছে। আমরা এর থেকে বেশি কিছু বলব না। আমরা একটাই কারণে চুপ রয়েছি। এখানে কেউ এটা বলতে পারবে না যে ওই পক্ষ এটা করেছিল বলে আমরা এভাবে আচরণ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।"


আদালতে সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশের সদর দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখান পুলিশকর্মীরা। তাঁরা বেশ কয়েক ঘণ্টা দফতর ঘেরাও করে রাখেন। এদিন তারা তাঁদের উর্দিতে কালো ব্যান্ডও লাগান ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে।

প্রসঙ্গত, ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার ধর্মঘট ডেকেছিলেন আইনজীবীরা। আর সেই ধর্মঘটের একদিন পরেই প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন পুলিশকর্মীরাও। এর আগে দিল্লির তিস হাজারি আদালত চত্বরে আইনজীবীদের সঙ্গে পুলিশের খণ্ডযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। রবিবার ছুটির দিনে দিল্লি হাইকোর্টের তরফে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে এই বিষয়টি নিয়ে বিশেষ শুনানি করা হয়। দিল্লি হাইকোর্টের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এস পি গর্গের নেতৃত্বে করা হবে এই বিচারবিভাগীয় তদন্ত। তাঁকে সহায়তা করবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি ও সিবিআই।
শনিবার হওয়া এই খণ্ডযুদ্ধের ঘটনায় দুই আইনজীবী গুরুতর জখম হয়েছেন বলে দাবি করেছে বার অ্যাসোসিয়েশন। এদের মধ্যে এক আইনজীবীর বুকে গুলি লেগেছে এবং তিনি অস্ত্রোপচারের পরে আইসিইউতে আছেন, দাবি করেছে সংস্থা। দিল্লি পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মক জখম অন্য আইনজীবীর হাতের দুটি আঙুল বাদ দিতে হয়েছে। এদিকে দিল্লি পুলিশের দাবি তাদের ৬টি জিপে আগুন লাগানো হয়েছিল, পুরো ঘটনায় জখম হন ২০ জন পুলিশ আধিকারিক।
আদালত চত্বরে সামান্য গাড়ি পার্কিংয়ের বিবাদকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া এই খণ্ডযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে তীব্র উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈও। রবিবার দিল্লিতে নিজের বাসভবনে দিল্লি পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তা, আইনজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেন প্রধান বিচারপতি।

এদিকে এক চাঞ্চল্যকর সিসিটিভি ফুটেজ থেকে দেখা যাচ্ছে--একজন মহিলা পুলিশ আধিকারিক হাত জোড় করে আইনজীবীদের শান্ত করার আবেদন জানাচ্ছেন। কিন্তু তাঁর সেই আবেদন তোয়াক্কা না করে উত্তেজিত আইনজীবীরা তাঁকে ঘিরে ফেলে গাড়িতে আগুন লাগাতে এগিয়ে যাচ্ছেন। গত শনিবার দিল্লির তিস হাজারি কোর্টে পুলিশের সঙ্গে আইনজীবীদের সংঘর্ষের এমনই ছবি উঠে এল। সৌজন্যে একটি নতুন সিসিটিভি ফুটেজ।
প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ওই মহিলা পুলিশকর্মী পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। সঙ্গে চারজন পুলিশ কর্মী। সেই সময় সেখানে উত্তেজিত আইনজীবীদের একটি দল উপস্থিত হয়। ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, চারদিকে আগুন। তার মধ্যে দাঁড়িয়ে ওই মহিলা পুলিশ আধিকারিক হাতজোড় করে মিনতি করছেন আইনজীবীদের কাছে। কিন্তু এরপরই উন্মত্ত আইনজীবীর দল‌ তাঁর এবং বাকি পুলিশদের উপরে চড়াও হচ্ছেন। এবং তাঁকে ধাক্কা মেরে সেখান থেকে সরিয়ে দিতে থাকে। এর আগে তিস হাজারি কোর্টে একটি ঘরের বাইরে কয়েক জন আইনজীবীর গাড়িতে আগুন লাগানোর চেষ্টা করারও একটি ভিডিয়ো সামনে এল শুক্রবার। সেই ভিডিয়োতে দেখা যায় একদল পুলিশ কর্মীকে দেখা যায় উন্মত্ত আইনজীবীদের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে।
মঙ্গলবার দিল্লি পুলিশ কর্মীদের সম্মিলিত বিক্ষোভ প্রদর্শনের পরে ওই ক্লিপগুলির সত্যতা যাচাই করে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই বিক্ষোভে জুনিয়র পুলিশ কর্মীরা তাঁদের সিনিয়রদের বিরুদ্ধে তাঁদের রক্ষা করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ জানিয়েছিলেন।
এদিকে প্রকাশ্যে আসা এই ভিডিয়োটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে এক পুলিশ কর্মী জানিয়েছেন, ওই মহিলা পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে চরম দুর্বব্যহার করেছেন আইনজীবীরা। তাঁর কলার ও কাঁধ ধরে টেনে নিয়ে যান তাঁরা। এছাড়াও তাঁকে অশ্রাব্য গালাগালিও করেন অভিযুক্ত আইনজীবীরা। ওই পুলিশ কর্মীর কথায়, আদালতের বাইরে ওই মহিলা আধিকারিক কাঁদছিলেন। পরে ওই মহিলা আধিকারিক ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান, তাঁকে কীভাবে নিগ্রহ করা হয়েছিল শনিবার।
জাতীয় মহিলা কমিশনের সভাপতি রেখা শর্মা বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সভাপতিকে একটি চিঠি লিখে শনিবার ওই মহিলা আধিকারিকের নিগ্রহে অভিযুক্ত আইনজীবীদের উপরে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.