Header Ads

১৯ দিনের গণতান্ত্রিক রসিকতার সাক্ষী থাকল দেশ !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়
রাজনৈতিক স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতা থেকে যে চেষ্টা করলেও শিবসেনা বেরিয়ে আসতে পারবে না তা ফের একবার স্পষ্ট করে দিল উদ্ধব ঠাকরের নেতৃত্বাধীন শিবসেনা দল। রাজ্যের মানুষ স্পষ্টতঃই বিজেপি-সেনা জোটকে ক্ষমতায় দেখতে চাইলেও মূলতঃ শিবসেনার ডন-টাইপ যুক্তিহীন ঔদ্ধত্যের কারণেই জোট সরকার গঠনের নিশ্চিত সম্ভাবনা ভেস্তে গেল। 

আর একটা জোটও ছিল নির্বাচনের ময়দানে--এনসিপি-কংগ্রেস জোট--যাদের সঙ্গে দীর্ঘকালীন মতাদর্শগত স্পষ্ট দূরত্ব ছিল শিবসেনার সঙ্গে। এই জোট নির্বাচনী প্রচারে রীতিমতো রণং দেহী মেজাজে সেনা-বিজেপি জোটের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে কসুর করে নি। মহারাষ্ট্রে শিবসেনাকে প্রত্যক্ষ সমর্থন দেওয়া কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর পক্ষে সম্ভব ছিল না--দিলে রাজ্যে কংগ্রেস কর্পূর হয়ে যেত। সেনার মুখ্যমন্ত্রীকে মেনে নেওয়া যে রাজনৈতিক আত্মহত্যার সামিল হবে সেটা সনিয়া-শিণ্ডে-অ্যান্টনি-খাড়গে’র বুঝতে অসুবিধের ছিল না। ছিল না বলেই ১৯ দিনের গণতান্ত্রিক রসিকতার দীর্ঘ সময়ের মধ্যে কংগ্রেস-এনসিপি জোটের চেয়ে অনেক কম আসনে জয়ী শিবসেনাকে সরাসরি বা পরোক্ষে সমর্থনের স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে পারেন নি সনিয়া গান্ধী। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর তিনি নিমরাজি হয়েছিলেন এনসিপির কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করার শর্তে বাইরে থেকে বিজেপি বিরোধী জোট সরকারকে সমর্থন দিতে।
ডন-টাইপ জেদের বশে বিজেপির প্রায় অর্দ্ধেক আসনে জয়ী শিবসেনা মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবিতে যে অনড় মনোভাব নিল তার চেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রসিকতা আর হয় না। রাজ্যের জনাদেশকে সরাসরি উপেক্ষা করে যে রাজনৈতিক স্বৈরাচারী মনোভাবে অটল থাকল সেনা তাতে তাদের মুখে আর যা-ই শোভা পাক না কেন গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার সম্পর্কে কোন লেকচার শোভা পাচ্ছে না। কংগ্রেসের মুখেও গণতান্ত্রিক শিষ্টাচার শোভনতা নিয়ে একইভাবে কোনরকম লেকচার শোভা পায় না। ১৯ দিন বিজেপি বিরোধী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মোটেও খুব কম সময় নয়। কিন্তু শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রীত্বের চেয়ারের প্রতি উৎকট লোভ--শিবসেনার সঙ্গে কংগ্রেস-এনসিপি’র দীর্ঘকালীন মতাদর্শগত বিরাট দূরত্ব এবং সকলে ভুলে গেলেও শরদ পাওয়ারের সেই বিদেশিনী সনিয়াকে নেত্রী মানতে না পেরে কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ায় সনিয়ার হেনস্থার কথা সনিয়ার ভুলে না যাওয়া--এসব যথেষ্টর চেয়ে অনেক বেশি জটিল প্রতিবন্ধকতা যা ১৯ দিন কাল হরণের পরেও আরও বেশ কিছুদিন কালহরণের দিকেই এগিয়ে যাওয়াকে আটকাতেই রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতি শাসনের সুপারিশ পাঠাতে বাধ্য হলেন।
কংগ্রেসকে রাজ্যপাল ডাকেন নি--কেন ডাকবেন? সময় অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও শিবসেনা যখন আরও তিনদিন সময় চাইল তখনই তো স্পষ্ট হয়ে গেল এনসিপি-কংগ্রেস শিবসেনাকে সময়ের মধ্যে সমর্থনের কথা ঘোষনা না করে তাদের সিদ্ধান্তহীনতাকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে। এসসিপি-ও বিকেল পর্যন্ত রাজ্যপালকে কংগ্রেসের নিশ্চিত সমর্থনের আশ্বাস দিতে পারে নি। শিবসেনার মুখ্যমন্ত্রীকে কংগ্রেস যে সমর্থন করবে না এবং বাইরে থেকে সমর্থন করবে এটা কংগ্রেস স্পষ্ট করে দিয়েছিল। কংগ্রেসের ঐ শর্তে যে শিবসেনা সরকার গঠনে অংশ নেবে না সেটা তো প্রথম থেকেই স্পষ্ট ছিল। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে কম আসন পাওয়া কংগ্রেসকে সরকার গঠনে আমন্ত্রণ জানিয়ে গণতান্ত্রিক রসিকতাকে আরও দীর্ঘায়িত কেন করবেন রাজ্যপাল? কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারে শিবসেনা যে কিছুতেই থাকবে না রাজ্যপাল কেন মহারাষ্ট্রের যে কোনও লোকেরই তা অজানা ছিল না।
এখন রাজ্যপাল বা বিজেপি’র ‘‘অসাংবিধানিক অগণতান্ত্রিক’’ প্রবণতা নিয়ে যতই কঠোর সমালোচনার চেষ্টা করা হোক না কেন--আর একবার বিজেপিবিরোধীরা তাদের চরম রাজনৈতিক অপদার্থতা প্রমাণ করলেন। তারা বোঝালেন--বিজেপিকে ঠেকাবার মতো রাজনৈতিক মেধা তাদের একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের এই অক্ষমতা ও অসহায়তাকে বিজেপি নিজেদের স্বার্থ পূরণে যেমন ইচ্ছে ব্যবহার করবেই--গণতন্ত্র আর সংবিধানের আওয়াজ তুলে কান্নাকাটি করলে কোন লাভই হবে না !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.