Header Ads

বহু কাঠখড় পুড়িয়ে জোট তো হল, কিন্তু কিছুতেই উদ্বেগ ঘুচছে না বাম-কংগ্রেসের !

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : বহু কষ্টে জোট হয়েছে বাম কংগ্রেসের। তবু উদ্বেগ যাচ্ছে না কিছুতেই। জোট হোক বা শুধুই আসন সমঝোতা, বাম-কংগ্রেসীদের উদ্বেগ, এত কিছুর পরও ভোট বাড়বে তো। না হলে মাঠে মারা যাবে যাবতীয় পরিকল্পনা। ফের প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়ে যাবে কংগ্রেস, সিপিএমসহ অন্যান্য বামদলগুলিও।
এখন এই জোটের মূল লক্ষ্য কোনও কেন্দ্রে জয় নয়। প্রধান লক্ষ্য হল উপনির্বাচনে তিন আসনে যতটা সম্ভব হারানো ভোট নিজেদের দিকে ফিরিয়ে আনা। মোটামুটি ভদ্রস্থ ভোট পেলেই বাম-কংগ্রেসের উদ্দেশ্য সাধিত হবে। এখন বাম-কংগ্রেসের কাছে কাঁটার মতো বিঁধছে ২০১৬-র বিধানসভা ও ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল।
বর্তমানে তিন বিধানসভা কেন্দ্রেই বাম ও কংগ্রেসের হাল খুবই খারাপ। বিশেষ করে লোকসভা নির্বাচনে যে ভোট শতাংশের রেকর্ড পাওয়া গিয়েছে, সেখানে শুধুই হতাশার ছবি। করিমপুর, কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুর সদরে কংগ্রেস পেয়েছিল যতাক্রমে ১০.৮৩, ৮.২২ ও ৫.১৩ শতাংশ ভোট। তেমনই সিপএম পেয়েছিল যথাক্রমে ৮.৬৩, ৮,৫২ ও ৫.০৬ শতাংশ ভোট।
এই সামান্য প্রাপ্তি নিয়ে কতটা ভোট বাড়ানো যেতে পারে মাত্র ছ-মাসের মধ্যে। এখন দেখার সেটাই। সেইসঙ্গে ২০১৬ বিধানসভা ভোটের নিরিখে করিমপুরে জিতেছিল তৃণমূল কংগ্রেস, কালিয়াগঞ্জে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী এবং খড়গপুরে বিজেপি। বর্তমানে সার্বিক বিচারে বিজেপি অনেক ভালো পজিশনে রয়েছে।
বিজেপি একাই খড়গপুর সদরে ভোট পেয়েছে ৫৮ শতাংশ, করিমপুর ও কালিয়াগঞ্জে পেয়েছে যথাক্রমে ৩৫.৮ ও ৫২.৬৯ শতাংশ। আর তৃণমূল করিমপুরে পেয়েছে ৪২.৮৯ শতাংশ আর কালিয়াগঞ্জ ও খড়গপুরে সদরে পেয়েছে যথাক্রমে ২৭.৫৩ ও ২৯.৯৮ শতাংশ ভোট। এই অবস্থায় বিজেপি এই জন্যই এগিয়ে--তিন জনের ভোট এক জায়গাতে আনলেও বিজেপি এগিয়ে থাকবে।
তৃণমূল বা বিজেপি বিরোধীদের ভরসার জায়গা একটাই ভোট সবসময় পাটিগণিত মেনে হয় না। এক্ষেত্রে তৃণমূলের যুক্তি, করিমপুর ছাড়া বূাকি দুই কেন্দ্র কোনওকালেই তৃণমূলের ছিল না। তাই ওই দুই কেন্দ্রে তাঁদের হারতে হলেও ক্ষতি বলা যাবে না। এদিকে লোকসভা ভোটে ভরাডুবি হয়েছে বাম-কংগ্রেসের। এই অবস্থা থেকে উঠতে গেলে এখন তিন কেন্দ্রেই ভোট বাড়াতে হবে।
আর এই ভোট টানার একটাই মন্ত্র। তা হল বামেদের শৃঙ্খলার সঙ্গে কংগ্রেসি আবেগকে বাঁধতে হবে। জোট এমনভাবেই বাঁধতে হবে যে, সেটা যেন ফলপ্রসূ হয়। শুধু লোকদেখানো জোট গঠন করে কোনও লাভ নেই। ভোটের আগে জোট করা মানেই মানুষ ভাববে সুবিধাবাদী জোট, তা ভেবেই নতুন ভাবনা-চিন্তা নিয়ে এগোতে হবে দলকে।
এদিকে বাংলার তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে বাম-কংগ্রেসের মধ্যে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে। দুটি কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী দেবে, একটি কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে বামেরা। এই অবস্থায় করিমপুরে কেন্দ্রে বাম প্রার্থীর নাম আগেই ঘোষণা করে দিয়েছিলেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। এবার কংগ্রেসও দুই প্রার্থীর নাম ঘোষণা করল।
কংগ্রেস অন্তর্বর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী অনুমোদন দেওযার পর সাধারণ সম্পাদক মুকুল ওয়াসনিক দুই কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। কংগ্রেস স্থানীয় প্রার্থী বেছে নিয়েছে। খড়গপুর সদরে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন চিত্তরঞ্জন মণ্ডল। আর কালিয়াগঞ্জে প্রার্থী হয়েছেন ধীতশ্রী রায়। 
দুদিন আগেই আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিমান বসু করিমপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। সিপিএম প্রার্থী গোলাম রাব্বি এবার এই কেন্দ্র থেকে উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলেও জানিয়েছেন। গোলাম রাব্বি পেশায় আইনজীবী। 
এবার উপনির্বাচনে দিন ঘোষণার আগে থেকেই জোট ও আসন ভাগাভাগি নিয়ে বাম ও কংগ্রেসের মধ্যে আলোচনা চলেছে। সোমেন মিত্র চিঠি দিয়েছিলেন আসন ভাগাভাগি নিয়ে। তা নিয়ে বামফ্রন্টে আলোচনা সারেন সূর্যকান্ত মিশ্র-বিমান বসুরা। সেখানেই ঠিক হয়ে যায় আসন রফার সূত্র। এরপর ৩০ ও ৩১ অক্টোবর আলিমুদ্দিনে বামফ্রন্টের বৈঠকে চূড়ান্ত হয় বাম প্রার্থীর নাম। 
২৫ নভেম্বর উপনির্বাচন কালিয়াগঞ্জ, করিমপুর এবং খড়গপুর সদর- তিনটি কেন্দ্রে উপনির্বাচন হবে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ৬ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র পরীক্ষা করা হবে ৭ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১১ নভেম্বর। আর ফলাফল প্রকাশ হবে ২৮ নভেম্বর।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.