Header Ads

আজ কার্তিক পুজো !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ

কার্তিকেয় বা কার্তিক হিন্দু যুদ্ধদেবতা। তিনি শিব ও দুর্গার সন্তান। কার্তিক বৈদিক দেবতা নন; তিনি পৌরাণিক দেবতা। প্রাচীন ভারতে সর্বত্র কার্তিক পূজা প্রচলিত ছিল। উত্তর ভারতে ইনি এক প্রাচীন দেবতা রূপে পরিগণিত হন। অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীর মতো কার্তিকও একাধিক নামে অভিহিত হন। যথা – কৃত্তিকাসুত, আম্বিকেয়, নমুচি, স্কন্দ, শিখিধ্বজ, অগ্নিজ, বাহুলেয়, ক্রৌঞ্চারতি, শরজ, তারকারি, শক্তিপাণি, বিশাখ, ষড়ানন, গুহ, ষান্মাতুর, কুমার, সৌরসেন, দেবসেনাপতি ইত্যাদি।
ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দক্ষিণ ভারতে কার্তিকের পূজা অধিক জনপ্রিয়। তামিল ও মালয়ালম ভাষায় কার্তিক মুরুগান বা মায়ূরী কন্দসামী নামে এবং কন্নড় ও তেলুগু ভাষায় তিনি সুব্রহ্মণ্যম নামে পরিচিত।

তামিল বিশ্বাস অনুযায়ী মুরুগান তামিলদেশের (তামিলনাড়ু) রক্ষাকর্তা। দক্ষিণ ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও মরিশাস – যেখানে যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠীর প্রভাব বিদ্যমান সেখানেই মুরুগানের পূজা প্রচলিত। শ্রীলঙ্কার দক্ষিণাংশে কার্তিকেয়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত কথারাগম (সিংহলি ভাষায় "কথারাগম দেবালয়") মন্দিরে হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বাংলায় কার্তিক সংক্রান্তির সাংবাৎসরিক কার্তিক পূজার আয়োজন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের হুগলি-বর্ধমান জেলার চুঁচুড়া-বাঁশবেড়িয়া-কাটোয়া অঞ্চলের কার্তিক পূজা বিশেষ প্রসিদ্ধ। এছাড়া বাংলার নিষিদ্ধপল্লীতেও কার্তিক পূজা বিশেষ জনপ্রিয়।
কাব্যে কার্তিক :--
কুমারসম্ভবম্ বিশিষ্ট সংস্কৃত কবি ও নাট্যকার কালিদাস বিরচিত একটি কাব্য। এই কাব্যের মূল উপজীব্য তারকাসুর বধের নিমিত্ত শিব ও পার্বতীর পুত্ররূপে কার্তিকেয়ের জন্মবিবরণ। কাব্যটির রচনাকাল সঠিক জানা না গেলেও এটিকে গুপ্তযুগের রচনা বলে মনে করা হয়। কাব্যের বিষয়বস্তু গৃহীত হয়েছে রামায়ণ, মহাভারত ও বিভিন্ন পুরাণগ্রন্থ থেকে। সপ্তদশ সর্গবিশিষ্ট এই কাব্যের অষ্টম বা নবম সর্গের পরবর্তী অংশটিকে অনেক বিশেষজ্ঞই পরবর্তীকালের প্রক্ষিপ্ত সংযোজন মনে করে থাকেন। কাব্যের কিছু অংশ অশ্লীলতা দোষে দুষ্ট। কুমারসম্ভবম্ নামটির অর্থ হল "কার্তিকেয়ের জন্মবৃত্তান্ত"। উল্লেখ্য, "কুমার" হিন্দু দেবসেনাপতি কার্তিকেয়ের অপর নাম এবং সংস্কৃত ভাষায় "সম্ভব" কথাটির অর্থ জন্ম। জ্যোতিভূষণ চাকীর মতে, কাব্যটির নামকরণের উৎস হল বাল্মীকি রচিত রামায়ণের নিম্নোক্ত শ্লোকটি:
এষ তে রামগঙ্গায়াঃ বিস্তরোহভিহিতো ময়া।
কুমারসম্ভবশ্চৈব ধন্য পুণ্যস্তয়ৈব চ।। (১।৩৭।৩১)
বঙ্গানুবাদ: "রাম ! এই আমি (বিশ্বামিত্র) তোমাকে গঙ্গার বৃত্তান্ত ও কার্ত্তিকেয়ের উৎপত্তি সবিস্তারে কহিলাম। এই পৃথিবীতে যে মনুষ্য কার্তিকেয়ের ভক্ত হয়, সে দীর্ঘ আয়ু ও পুত্র-পৌত্র লাভ করিয়া তাঁহার সহিত এক লোকে বাস করিয়া থাকে।"
হিন্দুপুরাণে কার্তিকেয়ের একাধিক নাম প্রচলিত রয়েছে। অধ্যাপিকা অমিতা চক্রবর্তীর মতে, এই সকল নামের মধ্যে থেকে কুমার নামটির গ্রহণ তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি মৎস্যপুরাণের একটি শ্লোকের উল্লেখ করে দেখিয়েছেন "কুৎসিৎ দৈত্যদের নিধনকর্তাই হলেন
কু-মার"!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.