গ্রামবাংলার ইতু পুজো !!
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ঃ
কার্তিক সংক্রান্তিতে শুভ সূচনা ইতু পুজোর। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে ঘট (ইতুর সরা বা পাত্র সহ) বিসর্জনের মধ্য দিয়ে ইতু পুজো বা ব্রতের সমাপ্তি ঘটে। লোক গবেষক ক্ষীরোদচন্দ্র মাহাতোর (পুরুলিয়া) মতে, “রাঢ়বঙ্গের তথাকথিত উচ্চবর্ণের মধ্যে এই পুজো প্রচলিত হয়েছে। মূলত সূর্যদেবকে বন্দনা করাই এর মূল ভাবনা।
সভ্যতার সূচনা লগ্নে কৃষি ব্যবস্থার যে ধারা তার প্রতীকী রূপ এই পুজোর মধ্যে নিহিত রয়েছে। মাটি অথবা পিতলের পাত্রে ৯ অথবা ১১ রকমের শস্য চারা, ফুল ও দুর্বা দিয়ে পাত্রটিকে সাজানো হয়। অগ্রহায়ণ মাসের প্রত্যেক রবিবার বাড়ির মহিলারা স্নান করে ভিজে কাপড়ে ওই পাত্রে জল দেন। তবে এ পুজোর কোনও মন্ত্র নেই।”
ধানের চারা, সর্ষে, হলুদ, কলমিলতা, বড় কড়ি, ছোট কড়ি, লবঙ্গ ইত্যাদি জলজ শস্যচারা পুকুর এবং জমি থেকে মহিলারা কার্তিক সংক্রান্তির দিন সংগ্রহ করেন। এর পরে সারা মাস ধরে চলে পুজো। আতপ চাল ও মিষ্টান্ন এই পুজোর নৈবেদ্য।
কৃষক সমাজের সঙ্গে যুক্ত পরিবারগুলিই বলতে গেলে ইতু পুজো টিকিয়ে রেখেছে। আধুনিক হাই-ফাই যুগে এ ধরনের পুজো বা প্রথা অর্থহীন মনে হলেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে--মানবজাতির বিকাশ সাধনের প্রাথমিক ধাপ এর মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে। ৯ বা ১১টি শস্যচারায় জল দেওয়ার মধ্যে উৎপাদন ও প্রজনন ধারার সঙ্কেত রয়েছে।
পুরুলিয়া, বাঁকুড়া ও ঝাড়খণ্ড লাগোয়া এলাকায় অগ্রহায়ণ মাস জুড়ে ইতু পুজোর চল রয়েছে। । এ ছাড়াও মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম, হুগলী এবং হাওড়াতেও ইতু পুজোর প্রচলন রয়েছে।
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিবেশ এবং চারা রোপণ ও তাকে লালন-পালন করার মানসিকতা গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে হাওড়া জেলা স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শিল্পী তপন কর তার সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ইতু’র আয়োজন শুরু করে দিয়েছিলেন বছর দুই ধরে! ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দারুণ আগ্রহও তৈরি হয়েছিল !
যাইহোক, এই পুজোর মধ্য দিয়ে সংসারের শ্রীবৃদ্ধি ও সন্তানাদি লাভের ইচ্ছা পূরণ হয় বলে গ্রামবাংলার কৃষিনির্ভর পরিবারের বিশ্বাস। অগ্রহায়ণ সংক্রান্তিতে সূর্যোদয়ের আগেই কড়া শীত উপেক্ষা করে মহিলারা পুকুর বা নদীতে ইতু’র ঘট ইত্যাদি জলে ভাসিয়ে দেন। কারণ, সূর্য উঠলেই পৌষ মাস ব্যাপী টুসু পরবের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় !









কোন মন্তব্য নেই