Header Ads

অসমের রাস উৎসব,উজনি ও নামনি আসামে ভিন্ন ভাবে রাস মহোৎসব পালন,

,
দেবযানী পাটিকর 
উজনি থেকে নামনি , রাজ্য জুড়ে পালিত হল রাস-উৎসব ।রাস মেলা দেখতে  ভীড় জমিয়েছে লোকেরা। উজনি অসমের মাজুলীর রাস  সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ,এর পাশাপাশি  পলাশবাড়ী ,বরপেটা ,নলবারী ,ছয়গাঁও,গোয়ালপাড়া,মির্জাতেও রাস উৎসব আনন্দের সাথে পালন করা  হয়েছে। রাস উৎসবের আয়োজক রাস সমিতির উদ্যোক্তারা বলেন যে প্রতিদিনই সন্ধ্যার পর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত  লোকের ভীড় পরিলক্ষিত হয়েছে মেলাতে। রাসে বর্ণাঢ্য কার্যসূচিতে পূজা অর্চনার সাথে সাথে বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন  করা হয়েছে এছাড়াও  সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সাথে সজাগতা সভার আয়োজন করা হয়। 




উল্লেখ্য যে আসামে অতীত দিনের থেকেই রাস পূর্ণিমাতে রাসলীলা পালন করা হয়ে আসছে। ১৭৬২ শতাব্দী থেকে মাজুলীর দক্ষিণপাট সত্রতে প্রথম মহোৎসব আরম্ভ হয়। আসামের সত্রতে ত বৈদিক ক্রিয়াকাণ্ড ও নাট্যরূপে রাস মহোৎসব উদযাপন করা হয়। দক্ষিণপাট সত্রের পর  গড়মুড, আউনাটি, বেঙ্গেনাবাড়ি, কমলাবাড়ী ভোগপুর ইত্যাদি সত্রে ছড়িয়ে  রাসলীলার প্রচলন হয় ।রাস শব্দের অর্থ হচ্ছে রস।এই রস থেকে রাসের  উৎপত্তি হয়েছে ।কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পালন করা হয় রাস উৎসব।হিন্দু শাস্ত্র মতে কৃষ্ণ গোপীদের সাথে লীলা করেছিলেন লীলা মানে নৃত্য । গোপীদের মন আকর্ষিত করার জন্য এই লীলা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ ।আজও মনে করা হয় যে বৃন্দাবনের গোপীনীরা শ্রীকৃষ্ণের জন্য অপেক্ষা করে আছেন  তাদের প্রাণপ্রিয় সখা কৃষ্ণের সাথে লীলা করার জন্য। তবে পন্ডিতেরা রাসের বিভিন্ন ধরনের ব্যাখ্যা করেছেন ।এদের মধ্যে দুইটি মত জনপ্রিয় বেশি। একটা হচ্ছে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে শ্রীকৃষ্ণ পাপমোচনের জন্য গঙ্গা স্নান করার স্বপ্ন দেখেছিলেন আর তার থেকেই শুরু হয় রাস। অন্য একটা প্রবাদ অনুসারে দূর্গা পূজার পরে পূর্ণিমায় বৃন্দাবনের গোপীদের সাথে লীলা করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ তার থেকেই রাসলীলার সূচনা হয় বলে অনেকে মনে করেন। 

                              


রাসলীলা উৎসবে শ্রীকৃষ্ণএর জন্মের থেকে কিশোর অবস্থা পর্যন্ত ঘটা শিহরণকারী জীবনবৃত্তান্ত উপস্থাপন করা হয়। তাত্ত্বিক রসের সম্মৃদ্ধ কথা রাসলীলার মাধ্যমে আত্মা থেকে পরমাত্মা তে। রাস মহোৎসব এ অভিনয় বা ভাওনা আর রাস উপলক্ষে করা নাম প্রসঙ্গ তিনটাই রাস উৎসবের সাথে জড়িত।  কিছু সত্রে একদিন ও কোনো সত্রে তিনদিন ধরে রাস উৎসব পালন করা হয়। সত্র সমূহে  দিহানাম ,গান-বাজনা, ওজাপালি ,নটুয়া ,কীর্তন ,গায়ন বায়ন ,নাম প্রসঙ্গ, নাচ , আদি অনুষ্ঠান পালন করা হয় । রাতে রাসলীলা প্রদর্শিত হয়। পরম্পরাগত ভাবে প্রচলিত সত্রে আর সত্রীয়া পরম্পরার মধ্যে প্রদর্শিত রাসলীলাতে পুরুষ আর নারী উভয়  চরিত্রে বর্তমানেও অভিনয় করে চলেছে পুরুষ অভিনেতা। 


                              অতীতের সত্র সমূহের নাম ঘরে রাসলীলা প্রদর্শন করা হতো। যদিও বর্তমান যুগে আধুনিক গতিধারাতে দর্শকের মন আকর্ষণ করার দিকে লক্ষ্য রেখে আধুনিক কলাকৌশল ব্যবস্থার দ্বারা মঞ্চে অভিনয় করা হয়। শংকরদেবের চিহ্ন যাত্রা মঞ্চাভিনয়ের প্রথম নিদর্শন ।এই ব্যবস্থার দ্বারা রাসকে আরো অধিক আকর্ষণীয় করার দিকে লক্ষ্য রেখে আধুনিক কলা কৌশল ব্যবস্থার দ্বারা মঞ্চতে রাস আরো অধিক আকর্ষণ রূপে প্রদর্শন করা হয়েছে। অবশ্য এখনোও অনেক  প্রাচীন সত্রতে এই প্রাচীন পরম্পরা রক্ষা করে চলছে, আর আগের রাস প্রদর্শনের  মূল স্থান  নামঘরে প্রদর্শন করে আসছে। উজনী আর নামনি আসামে রাস উৎসবের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। উজনী আসামের মত নামনী  অসম যেমন নলবারী, শুয়ালকুচি, হাওলি, টিহু ,পলাশবাবাড়ী তে ধুমধাম করে রাস উৎসব পালন করা হয়।                          



উজনীর রাস অভিনয় কেন্দ্রিক। অর্থাৎ মানুষ অভিনয় করে,  আর নামনীর রাস মূর্তি কেন্দ্রীক। মৃন্ময়ী মূর্তির দ্বারা শ্রীকৃষ্ণের জীবনের  বিভিন্ন অবস্থা  প্রদর্শন করা হয় ।যেমন কালীয় দমন, কংস বধ, দধি মন্থন ,বৃন্দাবনের রাসলীলা ,পুতনা বধ,ঝুলন ইত্যাদির বিভিন্ন মৃন্ময়ী মূর্তি দ্বারা উপস্থাপন করা হয়। এর সাথে  আসামের রাসে বিভিন্ন আলোকসজ্জায় প্রদর্শন স্থলী সাজিয়ে দর্শকের মন আকর্ষণ করা হয়।  যদিও মাজুলির রস সমগ্র পৃথিবীর এক অন্যান্য আকর্ষণ ও সমাদর রয়েছে। আর জন্য রাসের সময় দেশী-বিদেশী পর্যটকদের ভীড় দেখা যায়। অন্যদিকে মাজুলী বাসীর কাছে এটা হচ্ছে প্রধান আডম্বর পূর্ন ধর্মীয় উৎসব। এমন ভক্তি ভরা পূণ্যভূমি মাজুলির  সৃষ্টিকর্তার শ্রীকৃষ্ণের জীবন কাহিনী ভরা পবিত্র রাস উৎসব আসামের সাথে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে পরে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.