Header Ads

বিষাদের সুরে আজ বিজয়া দশমী !!

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : আশ্বিন মাসের শুক্লা পক্ষের দশমী তিথিতে শ্বশুরবাড়ি কৈলাসে পাড়ি দেন দেবী দুর্গা। বিষাদের সুরেই সেইদিনে বিজয়া পালন করেন মর্ত্যবাসী। কেন এমন রীতি, তার পৌরাণিক ব্যাখ্যায় নানা কাহিনীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
পুরাণে কথিত আছে, মহিষাসুরের সঙ্গে ৯ দিন ও ৯ রাত্রি যুদ্ধ করার পর দশম দিনে জয় লাভ করেন দেবী দুর্গা। সেই জয়কেই চিহ্নিত করে বিজয়া দশমী। তবে উত্তর ও মধ্য ভারতে এই দিনে যে দশেরা উদযাপিত হয়, তার তাৎপর্য ভিন্ন। বাল্মীকি রচিত রামায়ণে কথিত আছে, আশ্বিন মাসের শুক্লা পক্ষের দশমী তিথিতেই নাকি রাবনকে বধ করেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র। তাই এই দিনটিকে দশেরা বা দশহরা হিসেবে পালন করেন উত্তর ও মধ্য ভারতের মানুষ। 
আবার কালিদাসের রঘুবংশ ও তুলসিদাসের রামচরিতমানসে বলা হয়েছে যে আশ্বিনের তিরিশতম দিনে লঙ্কা জয় করে সস্ত্রীক অযোধ্যায় ফিরেছিলেন শ্রী রামচন্দ্র। সেই প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে ঘরে ঘরে জ্বলেছিল দীপ। সেই রীতিই দশেরা ও দীপাবলি রূপে পালন করা হয়।
দেবী দুর্গার বিদায়ের দিনে বিষাদের সুরেই বিজয়া দশমী পালন করে মর্ত্যবাসী। সধবা মহিলারা সিঁদূর খেলায় মেতে ওঠেন। আলিঙ্গনে আবদ্ধ হয় মানবকুল। চলে মিষ্টিমুখ। বিশ্ব সংসারে ঐক্য ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে পড়ে। আর এখানেই বিজয়া দশমীর বিশেষত্ব অন্যরকম বলে মনে করা হয়।
পুরাণ মতে, অপরাজিতা পূজা দুর্গাপূজার একটি অঙ্গ। দুর্গার অপর নাম অপরাজিতা। তবে এই দেবীর মূর্তি অন্যরকম। ইনি চতুর্ভূজা; হাতে শঙ্খ, চক্র, বর ও অভয়মুদ্রা; গায়ের রং নীল; ত্রিনয়না ও মাথায় চন্দ্রকলা। বিজয়াদশমীর দিন বিসর্জনের পর পূজামণ্ডপের ঈশানকোণে অষ্টদল পদ্ম এঁকে অপরাজিতার লতা রেখে এই দেবীর পূজা করা হয়। হংসনারায়ণ ভট্টাচার্যের মতে, ইনি "...বৈষ্ণবী শক্তি বিষ্ণুমায়া লক্ষ্মী ও শিবশিক্তি শিবানীর মিশ্রণে কল্পিতা।"
আজ বিষাদের সুরে বিজয়া দশমীর সকালে হয়তো অনেকেরই মনে পড়তে পারে মাইকেল মধুসূদন দত্ত’র এই বিখ্যাত কবিতাটিও-

বিজয়া-দশমী

“যেয়োনা, রজনি, আজি লয়ে তারাদলে!
গেলে তুমি দয়াময়ি, এ পরাণ যাবে ! –
উদিলে নির্দয় রবি উদয় – অচলে
নয়নের মণি মোর নয়ন হারাবে!
বার মাস তিতি , সত্যি , নিত্য অশ্রুজলে,
পেয়েছি উমায় আমি! কি সান্ত্বনা-ভাবে –
তিনটি দিনেতে, কহ , লো তারা-কুন্তলে,
এ দীর্ঘ  বিরহ-জ্বালা এ মন জুড়াবে?
তিন দিন স্বর্ণদীপ জ্বলিতেছে ঘরে
দূর করি অন্ধকার; শুনিতেছি বাণী –
মিষ্টতম এ সৃষ্টিতে এ কর্ণ-কুহরে!
দ্বিগুন আঁধার ঘর হবে, আমি জানি,
নিবাও এ দীপ যদি!” – কহিলা কাতরে
নবমীর নিশা-শেষে গিরীশের রাণী।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.