বিএসএফ জওয়ানকে ভুল করে গুলি ! অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলবে বাংলাদেশ
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : বাংলাদেশ বর্ডার পুলিসের গুলিতে বিএসএফ জওয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় ভুল স্বীকার করল বাংলাদেশ। সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ্দুজ্জামান খান জানিয়েছেন ভুল করে গুলি চালিয়েছিল বিজিবি। এই ঘটনায় যাতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে কোনও প্রভাব না পড়ে সেজন্য তিনি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, জলসীমা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন যে ভারতীয় মৎস্যজীবী তাকে গ্রেফতার করা হলেও পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিএসএফের হেড কনস্টেবল বিজয় ভান সিংকে বিজিবির গুলি করার ঘটনা নিছক ভুলের কারণে হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও পুরো ঘটনাটি ফ্ল্যাগ মিটিং চলাকালীন ঘটেছে। একে-৪৭ থেকে গুলি করা হয়েছিল । এই ঘটনায় জখম হয়েছিলেন আরও এক বিএসএফ কর্মী। মুর্শিদাবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ঘটেছিল এই ঘটনা। ভারতীয় মৎস্যজীবীদের গ্রেফতার নিয়েই শুরু হয়েছিল গণ্ডগোল।
এই ঘটনাকে অত্যন্ত দুঃখ জনক বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন পুরো বিষয়টি নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলবেন। বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে নির্ধারিত সময়ের বৈঠকে কোনও পরিবর্তন হবে না বলেই জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় যাতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি না ঘটে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে সামাজিক মাধ্যমে কিছু ভারতবিদ্বেষী কটূভাষ্যবিলাসী বাংলাদেশী বাংলাদেশ বর্ডার পুলিসের ইচ্ছাকৃত গুলি চালনার (সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাটিকে ‘ভুল বশতঃ’ বলে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামলেও) ঘটনাকে বিজিডি'র আত্মরক্ষার নাটক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করে চলেছে। কেউ কেউ ভারতীয় জওয়ানের হত্যাকাণ্ডে উৎকট উল্লাস প্রকাশের পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডকে নানান কুৎসিত যুক্তিতে বৈধতা দেওয়ারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্যতই স্পষ্ট হয়েছে ভারতীয় বিএসএফের দিক থেকে কোনরকম প্ররোচনা ছিল না--আক্রমণ তো বহু দূরের কথা।
যদিও বাংলাদেশের রাজশাহী সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবির গুলিতে একজন ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষী বাহিনী বা বিএসএফ সদস্য নিহত হবার ঘটনাটি বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমে খুব একটা গুরুত্ব না পেলেও ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। ভারতের বহুল প্রচারিত সংবাদ মাধ্যমগুলোতে শুক্রবার প্রথম পাতায় স্থান করে নিয়েছে এই খবরটি।
ঘটনা সম্পর্কে ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোতে বিএসএফ-এর দেয়া ভাষ্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। যদিও একই সংবাদে তারা বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর ভাষ্যও যুক্ত করেছে। তবে বিজিবি এবং বিএসএফ-এর দাবি পরস্পরবিরোধী। বিজিবি কর্মকর্তারা বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, প্রথমে বিএসএফ-এর তরফ থেকেই গুলি করা হয়, অন্যদিকে বিএসএফ বলছে তাদের জওয়ানরা গুলি করে নি।
ভারতের অন্যতম শীর্ষ সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রথম পৃষ্ঠায় চার কলাম জুড়ে প্রধান শিরোনাম হয়েছে এই খবর। রিপোর্টে বলা হয়, পতাকা বৈঠকের পর বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা বিএসএফকে গুলি করেছে এবং এতে এক জওয়ান নিহত হয়েছে। বিএসএফকে উদ্ধৃত করে টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, কোন রকম উস্কানি ছাড়াই গুলি ছোঁড়া হয়েছে এবং এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ভারতের তিনজন জেলে মাছ ধরার সময় পদ্মানদীর সীমান্ত পেরিয়ে মাছ ধরার জন্য বাংলাদেশে ঢুকেছিল। প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয় যে মুর্শিদাবাদের অনেক এলাকায় নদীতে সীমান্ত পিলার দৃশ্যমান নয়। ফলে ধারণার উপর ভিত্তি করে সীমান্ত ধরে নেয় জেলেরা। সেজন্য বিভিন্ন সময় ভারত এবং বাংলাদেশের জেলেরা নদীর মাঝখানে সীমান্ত অতিক্রম করে। কলকাতার আনন্দবাজার শিরোনাম করেছে, "পদ্মার বুকে গুলি, মৃত্যু জওয়ানের।" পত্রিকাটি তাদের প্রথম পাতায় উপরের দিকে বেশ গুরুত্বের সাথে এই সংবাদটি পরিবেশন করেছে।
বিএসএফকে উদ্ধৃত করে আনন্দবাজার লিখেছে, "আটক হওয়ার পরে মৎস্যজীবীরা বলেছিলেন যে, ভারতীয় সীমান্ত-রক্ষীদের অনুমতি নিয়েই পদ্মার ওই অংশে মাছ ধরতে এসেছেন তাঁরা। শুনে বিজিবি-র জওয়ানেরা প্রণবকে আটকে রেখে অন্য দু'জনকে বলেন, ''তোরা বিএসএফকে ডেকে আন। তার পরে ওকে ছাড়ব।'' ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে গুলিতে নিরাপত্তা বাহিনীর কারও এভাবে মৃত্যুর নজির স্মরণকালে নেই বলে উল্লেখ করে আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিএসএফকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি বলেছে, পতাকা বৈঠকে বাংলাদেশের সীমান্ত-রক্ষীরা ভারতীয় জেলেকে ছাড়তে
অস্বীকৃতি জানায় এবং বিএসএফ সদস্যদের ঘিরে ফেলার চেষ্টা করে। পরিস্থিতির অবনতি আঁচ করে বিএসএফ সদস্যরা যখন ফিরে যাচ্ছিল তখন বিজিবি গুলি ছোঁড়ে বলে উল্লেখ করে এনডিটিভি।
কলকাতার বাংলা দৈনিক 'এই সময়' তাদের প্রথম পাতায় এই সংবাদটিকে স্থান দিয়ে শিরোনাম করেছে, "বাংলাদেশের গুলিতে হত এক জওয়ান।" এই প্রতিবেদনের একটি অংশে বলা হয়েছে, গুলি চালানো ছাড়াও বিজিবি এক ভারতীয় মৎস্যজীবীকে জোর করে আটকে রেখেছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ বিষয়টি নিয়ে অনেক ভারতীয় মন্তব্য করেছেন। এদের মধ্যে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। অভ্রদীপ দত্ত নামে একজন টুইট করেছেন, "পতাকা বৈঠকের পর বিজিবি কিভাবে গুলি করার সাহস পেল? বাংলাদেশীদের সমস্যা কোথায়?" হরিশ চৌহান টুইটারে লিখেছেন, "বাংলাদেশকে কঠিন শিক্ষা দেবার সময় এসেছে। নরেন্দ্র মোদী স্যার চুপ কেন?" মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নামে এক ভারতীয় নাগরিক টুইট করেছেন, "দুই পক্ষের দিক থেকে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। বিজয় ভান সিং-এর আত্মত্যাগের জন্য স্যালুট।"
কোন মন্তব্য নেই