Header Ads

সরকারি অনুদান ও দুর্গা পুজো !

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : প্রায় প্রত্যেকটি ক্লাব বা পুজো কমিটি যে ভাবেই হোক পুজো চালাবার মতো খরচ তুলে নেয় বিভিন্ন সূত্রে। কয়েকশো ক্লাব আছে যারা বিশ-পঁচিশ লাখ থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে আসছে। কোথা থেকে কোন পথ দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ টাকা আসা যাওয়া করে তা আয়কর দপ্তর জানবার ইচ্ছে প্রকাশ করা মাত্র রাজ্য জুড়ে হৈ-হৈ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কোটি কোটি টাকার পুজো বহু লোকের কালো টাকাকে শিউলি-সাদা করে দিচ্ছে--প্রচুর জাঁকজমক হচ্ছে--‘এ বলে আমায় দেখ তো ও বলে আমায় দেখ’-এর মারাত্মক প্রতিযোগিতাই এখন মুখ্য--তন্ননিষ্ঠ ঐতিহ্যরক্ষার পুজো নয়। এত বিপুল টাকার আদ্যশ্রাদ্ধ হয়--কিন্তু তার চারপাশের চাপ-চাপ অন্ধকারে এই ‘‘উৎসব’’-এর এতটুকু আলোও পৌঁছয় না। সেলেবরা সাজুগুজু করে মণ্ডপে মণ্ডপে শিল্পকলা-থিম বিশেষজ্ঞ হিসেবে ঠোঁটের কোণে একফালি একাদশীর চাঁদের মতো হাসি ঝুলিয়ে নম্বর টুকতে থাকেন--অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোন দাদার পুজোকে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পরাতে হবে আগেভাগে জেনে বুঝেই !
এইসব পুজো কমিটিগুলিকে জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে কোটি কোটি টাকা খয়রাতি বন্টনের মধ্যে বিন্দুমাত্র শালীনতা আমি অন্ততঃ খুঁজে পাই না। 
প্রবীণ পেনশনারদের বার্দ্ধক্যের গভীর সঙ্কটে আর একটু ঠেলে দিয়ে--সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ও ডিএ হজম করে নিয়েএই দানসাগরী রাজনীতি আমাকে শুধু বিস্মিতই করে না--প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ করে তোলে। ক্লাব বা বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলো চাঁদার বই হাতে যেখানে সেখানে গিয়ে দাঁড়াতে পারে--ফতোয়া জারি করে হাজার হাজার টাকা গলায় গামছা পেঁচিয়ে আদায় করতে পারে--তাদের পুজো আটকায় না। 
কিন্তু একে একে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কত পারিবারিক পুজো শুধুমাত্র সামর্থ্যের অভাবে। ২৫-৩০ হাজার টাকায় যথাসম্ভব নিয়মনিষ্ঠার সঙ্গেই দুর্গাপুজোর আয়োজন সম্ভব। কিন্তু যাদের পক্ষে আর এই টাকাটার ব্যবস্থাও করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের বাড়ির পুজো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত ছিল এইসব সামর্থ্য হারানো পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানো। একটা পরিবারের পুজো মানে একটা গোটা পাড়ার পুজো। নিয়ম-নিষ্ঠার এই পুজোগুলোকেই সরকারের সাহায্য করাটা উচিত বলে আমার মনে হয়েছে। জানি, আমার সঙ্গে অনেকেই সহমত হবেন না--আমি তর্কও করব না কারুর সঙ্গে। 
কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চিত করে--প্রবীণ পেনশন নির্ভর মানুষদের বঞ্চিত করে এই ধরণের খয়রাতির রাজনীতিকেও আমি কোনবিচারেই ভাল চোখে দেখতে পারছি না। কিন্তু আমার ভাল লাগা মন্দ লাগা নিয়ে কারই বা কি এসে যাচ্ছে--এবং এটাই তো একমাত্র সত্যি !!

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.