Header Ads

গান্ধী সংকল্প পদ যাত্রা শুরু কাটিগড়া বিধান সভা কেন্দ্র থেকে

নয়াঠাহর প্রতিবেদন, কাটিগড়া : ভারতীয় জনতা পার্টি, জেলা শিলচর লোকসভা অন্তর্গত ৭টি বিধানসভার মধ্যে প্রথম পদযাত্রা কাটিগড়া বিধান সভা থেকে শুরু হলো। এউপলক্ষে বৃহস্পতিবার পশ্চিম কাটিগড়া অন্তর্গত দিগরখাল থেকে সকাল ১০টায় গান্ধী সংকল্প পদ যাত্রা শুরু হয়। এরআগে দিগরখাল ফুটবল ময়দানে এই সংকল্প যাত্রার উদ্যেশ্য ব্যাখ্যা করেন বিজেপি কাছাড় জেলা সভাপতি কৌশিক রাই। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় নির্ধারিত সময় থেকে কিছু দেরি করে সংকল্প পদ যাত্রা শুরু করা হয়। তবে যখন এই পদ যাত্রা শুরু হয় আশ্চর্য্যজনক ভাবে আকাশ থেকে পুষ্প বৃষ্টির মত বৃষ্টি হতে থাকে। সুশৃঙ্খল ভাবেই প্রথম দিনের যাত্রা সম্পন্ন হয়। দিগরখাল ৬নম্বর জাতীয় সড়ক হয়ে গুমড়া, এরপর গুমড়া থেকে খেলমা হয়ে লেভারপুতা জিপি অফিসের সম্মুখে ১ম পর্যায়ের পদযাত্রা শেষ হয়। 
এরপর লেভারপুতা জিপি অফিসের সম্মুখে দুপুরের আহার গ্রহন করার পর হরিনগর হয়ে রাজাটিলা কালীবাড়ি পর্যন্ত ১৮কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে এদিনের পদযাত্রা সমাপ্ত হয়। সূচী অনুযায়ী কাটিগড়া বাজার হয়ে চৌরঙ্গী বাজারে গিয়ে পদ যাত্রা সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য রাজাটিলা কালীবাড়িতে এদিনের মত পদযাত্রা সমাপ্ত ঘোষণা করেন সাংসদ রায়। লেভারপুতায় খাওয়া দাওয়া সেরে দ্বিতীয় পর্যায়ে পদযাত্রা শুরু করার সময় ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। কিন্তু বিজেপির তাবড় তাবড় নেতারা, সঙ্গে তৃণমূল স্তরের কার্য্যকর্তারা ভারী বৃষ্টিপাত উপেক্ষা করে রাজাটিলা কালীবাড়ি পর্যন্ত পদযাত্রা করে আসেন।
রাজাটিলা কালীবাড়ি প্রাঙ্গনে এদিনের পদ যাত্রা সমাপ্ত করে শিলচরের সাংসদ ডঃ রাজদীপ রায় বলেন, শিলচর লোকসভায় ৭টি বিধানসভায় এইরকম ১৪টি যাত্রা অনুষ্টিত হবে। এর একটি আজ সম্পন্ন হয়। আগামী দু-সপ্তাহ ধরে এই যাত্রা চলবে। তিনি বলেন, গান্ধীজির যে সংকল্প পুরা করতে হলে আগে গ্রাম সুন্দর করতে হবে। তাই গ্রাম থেকেই এর যাত্রা শুরু করা হয়। কারণ ভারতবর্ষের আশি শতাংশ মানুষ গ্রামে থাকে। আর গান্ধীজী এই কথা গুলো বুঝিয়ে সামাজিক একটা আন্দোলন করে ভারত বর্ষকে স্বাধীন করেছিলেন। যে গান্ধীজি কংগ্রেস থেকে আন্দোলন করে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর বলেছিলেন, কংগ্রেসকে এখন ভেঙে দিতে হবে। আর নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে ভারতবর্ষকে চালাতে হবে। কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ সেটা মেনে নিতে পারেন নি। গান্ধীজির কথা শুনেন নি। সেইজন্য গান্ধীজি শেষ বয়সে রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছিলেন। গান্ধীজি চেয়েছিলেন, গ্রামীন ভিত্তিক অর্থনৈতিক ভারতবর্ষ গড়ে উঠুক। কিন্তু তৎকালীন কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ বিশেষ করে জওহরলাল নেহেরু বিদেশে পড়াশুনা করেছেন, বিদেশে থেকেছেন। তাই নেহেরু বলেছেন, তিনি শহর ভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা করতে চান। তিনি চেয়েছিলেন, আমেরিকার সাথে প্রতিযোগিতা করতে। সাংসদ রায় আরও বলেন, নেহেরু ভুলে গিয়েছিলেন, ভারতবর্ষ যে একটা আলাদা দেশ। যে দেশে পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস আছে। যে ইউরোপ ও আমেরিকাতে মানুষ যখন গুহাতে থাকতো, তখন ভারতবর্ষের মুনিঋষিরা বেদ, পুরান, মহাভারত ও রামায়ন লিখেছিলেন। ভারতের সংস্কৃতি বা বিরাসত আছে। আমাদের ঐতিহ্য আছে সেটা অনেক অনেক বছরের পুরোনো। এটা আমাদের লজ্জার ব্যাপার নয়। আর গান্ধীজি আমাদেরকে শিখিয়েছেন যে,কিছু কিছু জায়গায় আমরা হয়তো অক্ষম হতে পারি। আর্থিক ভাবে অক্ষম হতে পারি। কিন্তু আমরা একসঙ্গে হয়ে গেলে, তাহলে আমাদের যা চিন্তা ধারা আছে, তা কোনো না কোনো ভাবে কার্যকারী করতে পারবো। সাংসদ ডঃ রাজদীপ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজি গান্ধীজির কথা বলে উনি আমাদেরকে বলছেন, আজকে আমাদের সংকল্প, আমরা একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিককে বর্জন করবো। তিনি মহিলাদের উদ্যেশ্য করে অনুরোধ জানান, তাদের স্বামীরা যখন বাজারে যাবেন, ঐ সময় বাজারের বেগ হাতে ধরিয়ে দিতে। যাতে বাজার থেকে প্লাস্টিক বাড়িতে না আসে। আবর্জনা ফেলার জন্য ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করতে বলেন। যাহাতে নিজের গ্রামকে সুন্দর করা যায়। আর শহরকেও সুন্দর করতে লাগবে। 
উদাহরণ দিতে গিয়ে ডঃ রায় মেঘালয় রাজ্যের একটি গ্রামের কথা উল্লেখ করেন, ঐ গ্রাম এশিয়া মহাদেশের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্ন গ্রাম। যদি পাশ্ববর্তী রাজ্যে এইরকম গ্রাম থাকতে পারে তাহলে আমাদের রাজ্যে কেন এমন গ্রাম হতে পারে না। এমন কথা বলেন সাংসদ। তাই সবার যেন নিজের দায়িত্ব থাকা উচিত যে আমাদের গ্রাম-শহরকে সুন্দর করবো। নাগরিক পঞ্জি নবায়ন প্রসঙ্গে যাদের নাম উঠে নি। উনারা ভয়,শঙ্কিত না হওয়ার কথা বলেন সাংসদ রাজদীপ। কোনো ধরনের অনৈতিক পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কারণ মোদীজি, রাজনাথ সিংজী, অমিত শাহজী সবাই স্পষ্ট ভাবে বলেছেন, এবার শীতকালীন অধিবেশন শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই  নাগরিকত্ব বিল উত্থাপন করা হবে। যারা প্রকৃত ভারতবাসী, বিশেষ করে মুসলমান ভারতবাসীর মধ্যে অনেক প্রকৃত ভারতবাসী আছেন, তারা এই দেশেই থাকবেন। আর ২০১৪সালের ৩১ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশ থেকে যারা হিন্দু পূর্ব পাকিস্থান, বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে এই দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাদেরকে এই দেশে থাকার ব্যবস্থা করে দেবে ভারত সরকার। এরজন্য রেজিস্ট্রেশন করাতে হবে। তাই কেউ যদি জিগ্যেস করে, তখন নির্ভয়ে বিদেশি লিখাতে বলেন রায়। তিনি বলেন, আমরা আগে এরকম করেনি বলেই আজ এই অবস্থায় অবনতি হয়েছি। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, কেউ দেশ ছাড়া হবে না।
এদিনে স্থানে স্থানে বিজেপি সমর্থকরা সাংসদ ডঃ রাজদীপ রায়, কাছাড় জেলা সভাপতি কৌশিক রাই, বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন দেরকে ফুল, শঙ্খ বাজিয়ে স্বাগত জানান। পাশাপাশি চা-বিস্কুট, কোথায়ও জল পানের ব্যবস্থা করেছেন। শিলচরের সাংসদ ডঃ রাজদীপ রায়, কাটিগড়া বিধায়ক অমরচাঁদ জৈন, কাছাড় বিজেপির সভাপতি কৌশিক রাই ছাড়াও এদিনের গান্ধী সংকল্প পদ যাত্রায় উপস্থিত ছিলেন শিলচরের বিধায়ক দিলীপ কুমার পাল, বড়খলার বিধায়ক কিশোর নাথ, উধারবন্দের বিধায়ক মিহির কান্তি সোম, বরাক উপত্যকার সাংগঠনিক সম্পাদক নিত্য গোপাল দে, কাছাড় বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কনাদ পুরকায়স্থ, কাছাড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অমিতাভ রাই, উপ- সভানেত্রী লাভলী চক্রবর্তী, দক্ষিণ কাটিগড়া জেলা পরিষদ সদস্য অসীম দত্ত, পশ্চিম কাটিগড়া প্রাক্তন জেলা পরিষদ সদস্য সুব্রত চক্রবর্তী, যুবমোর্চা প্রদেশ সম্পাদক জয়ন্ত চক্রবর্তী প্রমুখ। এছাড়াও জেলাস্তর ও কাটিগড়া-কালাইন মণ্ডল, বিভিন্ন আয়ামের কর্মকর্তারা, এপি সভাপতি কার্তিক তাঁতী, এপি জিপি নির্বাচিত প্রতিনিধি সহ দলীয় নেতৃত্বের সাথে প্রায় পাঁচ শতাধিক কর্মী সমর্থক গান্ধী সংকল্প পদ যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। অন্যদিকে রাজাটিলা কালীবাড়ি, কাটিগড়া কালীবাড়ি, চৌরঙ্গী সত্যনারায়ণ মন্দিরের উন্নয়ন কল্পে সাংসদ রায় অর্থ মঞ্জুর করবেন বলে কথা দেন। আমতলায় স্থানীয়রা সড়ক ও জল সমস্যা নিয়ে সাংসদকে জানালে তিনি সমস্যা সমাধান করে দিবেন বলে আশ্বাস দেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.