Header Ads

বাঙালী নারীবাদী কবি কামিনী রায়ের ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকী

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : আজ, ১২ অক্টোবর, শনিবার। আজকের দিনটি কীসের জন্য বিখ্যাত তা হয়তো অনেকেরই অজানা। আজ বিখ্যাত বাঙালি কবি ও ভারতের ইতিহাসে সম্মানসহ স্নাতক প্রাপ্ত প্রথম মহিলা কামিনী রায়ের ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকী।
 আজকের দিনে, অর্থাৎ ১২ ই অক্টোবর ১৮৬৪ সালে পূর্ববঙ্গের বাকেরগঞ্জের বাসণ্ডা গ্রামে জন্ম হয় বিখ্যাত কবি কামিনী রায়ের। নারীবাদী লেখিকা ও সমাজকর্মী হিসেবে তাঁর পরিচিতি বেশি। তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ডিগ্রিধারী তিনি। 
তাঁর বেশিরভাগ লেখা "জনৈক বঙ্গমহিলা" ছদ্মনামে প্রকাশিত পায়। প্রথম জীবনে কামিনী রায়ের প্রাথমিক শিক্ষার ভার তাঁর বাবা চণ্ডীচরণ সেন নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার বেথুন স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে এফ. এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর বেথুন কলেজ থেকেই ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে সংস্কৃত ভাষায় ভারতের প্রথম নারী হিসেবে সাম্মানিক স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর ১৮৮৬ সালেই তিনি বেথুন স্কুলে শিক্ষিকা পদে নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে বেথুন কলেজে তিনি অধ্যাপনাও করেন।
সময়টা ছিল উনবিংশ শতক। যে যুগে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের রীতি-নীতি ছিল জোরদার। নারীদের স্থান যেখানে ছিল খুবই স্বল্প। প্রায় ছিল না বললেই চলে। শিক্ষা থেকে শুরু করে নারীদের স্বাধীনতা, জীবনের অগ্রসরে 'পুরুষতান্ত্রিক সমাজ' ট্যাগ লাইন তাঁদের কাছে বাধা হয়ে দাঁড়াত। সেই যুগে দাঁড়িয়ে কামিনী রায় ছিলেন নারীবাদে বিশ্বাসী। সমস্ত মহিলার অধিকারের পক্ষে ছিলেন। সবকিছুকে তুচ্ছ করে তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর জীবনের পথে। 
তাঁর লেখা অনেক প্রবন্ধেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। ছোট থেকে গণিতের প্রতি আগ্রহী হলেও কামিনী রায় অল্প বয়সেই কবিতা লেখা শুরু করেছিলেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৮৮৯ সালে প্রথম প্রকাশ পায় 'আলো ছায়া' কবিতাটি। যা তখনকার সমাজে বেশ আলোচিত।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে, তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের নারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করবেন। তিনি লিখেছিলেন-"কেন একজন মহিলাকে ঘরের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে রাখা হবে? কেন সমাজে তার উপযুক্ত স্থান অস্বীকার করা হবে?" 
১৯২৬ সালে বাঙালি মহিলাদের ভোটাধিকারের জন্য কাজ করেছিলেন তিনি। কামিনী রায়ের রচিত কবিতাগুলোতে জীবনের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, আনন্দ-বেদনার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। 
তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সংস্কৃত সাহিত্য দ্বারা নিজের জীবনে বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল- আলো ও ছায়া, নির্মাল্য, পৌরাণিকী, মাল্য ও নির্মাল্য, জীবন পথে, একলব্য ইত্যাদি। 
এছাড়াও, ১৯০৫ সালে শিশুদের জন্য গুঞ্জন নামের কবিতা রচনা করেন তিনি। ১৯২৯ সালে সাহিত্যে কৃতিত্বের জন্য কামিনী রায়কে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় জগত্তারিণী পদক দিয়ে সম্মানিত করা হয়। ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.