Header Ads

বঙ্গবন্ধু মুজিবের কথা এখনও স্পষ্ট কানে বাজে : রতীন বসু

সুধৃতি দত্ত, নয়া দিল্লি : মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরেই, ভারতীয় টেবিল টেনিসের একটি দল শুভেচ্ছা মিশনে প্রতিবেশী রাষ্ট্রে গিয়েছিল। দলটি রাষ্ট্রনায়ক মুজিবুর রহমানের সাথে তার বাসস্থলে সাক্ষাৎ করে। নিজের মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালবাসার ভিত্তিতে নবগঠিত দেশের কিংবদন্তি নেতা সফররত ভারতীয় টেবিল টেনিস প্রতিনিধি দলের উদ্দেশে বলেছিলেন খেলাধুলা দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। ভবিষ্যতেও পারস্পরিক খেলাধুলার মাত্রা যেন আরো বেশি হয় বলে মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের জাতির জনক। "আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে শেখ হাসিনাও সেদিন ছিলেন সে সাক্ষাৎপর্বে।" বলেন, বেঙ্গল টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি রতীন বসু নয়া ঠাহরের সাথে এক কথোপকথন পর্বে।  
পরবর্তীকালের চারবারের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সেদিন বাবার আদেশে সন্মান সহকারে বাসার জন্য একটি মোড়া আগে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সফরত ক্রীড়া প্রতিনিধি দলের নেতা রতীনবাবুকে।
টিটি ব্যাট নিয়ে প্রাক্তন লোকসভা স্পিকার সোমনাথ চ্যাটার্জি ।
রতীনবাবু বেঙ্গল টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সাথে ছয় দশকেরও বেশি সময় প্রশাসক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। ঐতির্যমন্ডিত সংস্থার সাথে রতীনবাবুর যোগাযোগ ঘটে পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকে। যাত্রার শুরু হয় এক তরুণ টিটি খেলোয়াড় হিসাবে। সে যোগসূত্র ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে সক্রিয়ভাবে অব্যাহত ছিল।
তিনি প্রায় দেড় দশক ধরে টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোমনাথ চ্যাটার্জির মতো বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। "টেবিল টেনিসের প্রতি সোমনাথবাবুর ভালোবাসার কথা আজও মনে পড়ে," বলেন রতীনবাবু। তিনি আরো বলেন, সোমনাথদাকে রাজনৈতিক ব্যস্ততা সত্ত্বেও টেবিল টেনিস সংস্থার কাজের জন্য সর্বদা পাওয়া যেত। সোমথবাবু সংস্থার সভাপতি থাকাকালীন রতীনবাবু দীর্ঘদিন উপ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব নির্বাহ করেছেন।বেঙ্গল টিটি সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি পি সি গোয়েঙ্কার কথা রতীনবাবু আজও শ্রদ্ধাসহ স্মরণ করেন।    
প্রথমবার জয়লক্ষী কাপ (১৯৭২) জেতার পর বেঙ্গল টীম।ট্রফি সাথে খেলোয়াড় রুপা ব্যানার্জি (মধ্যে), ইন্দু পুরি (বামে) ও কল্পনা তিওয়ারি (ডানদিকে)। পেছনে ডানদিকে রতীন বসু। 
রতীনবাবু ক্রীড়া সংগঠক ও প্রশাসক হিসাবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম তৈরির ইতিহাসের এক জীবন্ত সাক্ষী। সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মুখ্যমন্ত্রীত্বেরকালে স্টেডিয়াম নির্মিত হয়। ক্রীড়া মন্ত্রী ছিলেন তুষারকান্তি ঘোষ।  যিনি শত ঘোষ নামে উত্তর কলকাতার পুরোনো লোকদের কাছে অতি পরিচিত। 
রতীনবাবু মনে রেখেছেন ১৯৭৫ সালে প্রথমবারের মতো ভারতে বিশ্ব টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপে আয়োজনের কথা। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় আইকনিক ইনডোর স্টেডিয়ামটি তৈরি করা হয়। রতীনদাকে টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশন তরফ থেকে নির্মাণ কাজে সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। "আমি প্রায় প্রতিদিনই মুখ্যমন্ত্রী ও ক্রীড়ামন্ত্রীকে স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করতাম।"
রতীনবাবু ১৯৮০ সালে কলকাতা মহানগরে প্রথম এশীয় টেবিল টেনিস চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজক কমিটির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন।
টেবিল টেনিসের প্রতি আবেগেই আমাকে এত বছর বেঁধে রেখেছিলো, তিনি বলেন। "প্রথমদিকে স্ত্রীর এ খেলার প্রতি আমার আবেগ সম্পর্কে কিছুটা অনুযোগ ছিলেন। যদিও, পরে তিনি টিটির প্রতি আমার টান মেনে নিয়েছিলেন," রতীনবাবু বলেন। স্ত্রীর তিরোধানের পর, একমাত্র মেয়ে বাবাকে দেখাশোনা করার জন্য দিল্লি এনসিআর-এর বৈশালিতে নিয়ে আসেন।
রতীন বসু সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে আলটিমেট টিটি প্রতিযোগিতার তৃতীয় সংস্করণে।
কলকাতার একজন নামী টিটি প্রশাসক হিসাবে তার আফসোসের কথা বলতে গিয়ে রতীনবাবুর আক্ষেপ, "আমরা কলকাতায় টিটি সংস্থার জন্য আজও এক স্থায়ী ভবন নির্মাণ করতে পারিনি"।প্রায় ৮৫ বছরের পুরানো টিটি সংস্থাটি এখনো এক ভাড়াবাড়ি থেকে চালিত হয়। 
ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (সিএবি) এর মতো আইকনিক সংস্থার সাথে যখন তুলনা করা হয় তখন এক সমর্পিত ক্রীড়া প্রশাসক হিসেবে আফসোস হওয়াটা স্বাভাবিক। কিংবদন্তি ক্রিকেট প্রশাসক জগমোহন ডালমিয়া রতীনদাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন। কোনও খেলার প্রতি সততা, নিষ্টা এবং নিখাদ ভালোবাসা হলো প্রাথমিক শর্ত এক কর্তবনিষ্ঠ প্রশাসক হওয়ার, রতীনবাবুর মূল্যায়ন।রতীনদা স্মরণ করেন টিটি জগতের বন্ধু গোপী ঘোষ এবং প্রবীর মিত্রের মতো নামি প্রশাসকদের কথা। রতীনবাবু আজও মনে রেখেছেন বেঙ্গল টিটি টিমের প্রথম জয়লক্ষী কাপ জয়লাভের কথা। সে টিমের খেলোয়াড় রুপা ব্যানার্জি, ইন্দু পুরি ও কল্পনা তিওয়ারিদেরকেও। 
প্রায় পাঁচ দশকের বিভিন্ন রকমের টেবিল টেনিস বলের অনন্য সংগ্রহ রয়েছে তাঁর উত্তর কলকাতার বাগবাজারের বাড়িতে। "বিভিন্ন রকমের বলগুলোর কথা এখানেও মনে টানে," তিনি বলেন কথাপ্রসঙ্গে। 
রতীনবাবু প্রায় তিন দশক ধরে রাজ্য টিটি দলের ম্যানেজারের ভূমিকাও পালন করেছেন। তাঁর সময় বেঙ্গল টেবিল টেনিস দল ৯৭টি স্বর্ণ, ২৭০টি রুপো ও ৩৫০টি ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল। এক সন্ধ্যায়, অশীতিপর রতীনবাবু সহজ-সরল শিশুসুলভ হাসি মিশিয়ে পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, "জানেন তো ! আমাকে গোল্ডি ম্যানেজার হিসাবে ডাকা হতো "।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.