Header Ads

কিছু অজানা কথা, ভোজনবিলাসী রবীন্দ্রনাথ

দীপঙ্কর ঘোষ : মিষ্টি খুব প্রিয় ছিল কবির। তার প্রমাণ, সেন মহাশয়ের সন্দেশ ও জলযোগের পয়োধি খেয়ে দু’ছত্র লেখা এবং সেটাই আজও যেন কোটি টাকার বিজ্ঞাপন। কবির জন্য প্রায়ই নানা ধরনের মিষ্টি তৈরি করতেন মৃণালিনী – চিঁড়ের পুলি, দইয়ের মালপো, পাকা আমের মিঠাই ইত্যাদি। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “বাবার ফরমাশ মতো নতুন ধরনের মিষ্টি মাকে প্রায়ই করতে হত। সাধারণ গজার একটা নতুন সংস্করণ একবার তৈরি হল। তার নাম দেওয়া হল ‘পরিবন্ধ'। মিষ্টি না পেলে নিদেন পক্ষে একটু মধু খেতে হত কবিকে। আলি সাহেব লিখেছেন, “বস্তুত কী চা, কী মাছ-মাংস, কোনো জিনিসেই রবীন্দ্রনাথের আসক্তি ছিল না – যা সামান্য ছিল, সেটা মিষ্টি মিষ্টান্নের প্রতি। টোস্টের উপর প্রায় কোয়ার্টার ইঞ্চি মধুর পলস্তরা পেতে জীবনের প্রায় শেষ বৎসর অবধি তিনি পরম পরিতৃপ্তি সহকারে ঐ বস্তু খেয়েছেন।
সিলেট ও খাসিয়া সীমান্তে একরকম অতুলনীয় মধু পাওয়া যায়। এ মধু মৌমাছিরা সুদ্ধমাত্র কমলালেবুর ফুল থেকে সংগ্রহ করে। ছুটিতে দেশে যাওয়ার সময় গুরুদেব আমাকে বললেন, ‘পারিস যদি আমার জন্য কমলা মধু নিয়ে আসিস।’ আমি খুশী হয়ে বললুম, ‘নিশ্চয়ই আনব। কিন্তু কাশ্মীরের পদ্মমধু কি এর চেয়ে ভালো নয়?’ গুরুদেব স্মিত হাস্য করলেন। ভাবখানা, কিসে আর কিসে।”
খাওয়া নিয়ে খুঁতখুঁতুনিও রবীন্দ্রনাথের কম ছিল না। একবার কবির জন্মদিনে অমিতা দেবী সবরকম মোরব্বা দিয়ে তাতে কেকের একটু গন্ধ মিশিয়ে একরকম মিষ্টান্ন করে রবীন্দ্রনাথকে পাঠান। বিদেশি কেকের গন্ধ দেশী খাবারে কেন? কবি সেই খাবার মুখে তোলেননি। আবার একবার দুধ, চালবাটা, নতুন ফল-পাকুড় দিয়ে তিনিই রবীন্দ্রনাথকে ‘নবান্ন’ করে দিয়ে এসেছিলেন। সেটা মুখে ঠেকিয়েছিলেন মাত্র। তার পর দেখা হলে অমিতা দেবীকে বলেছিলেন, ওটা কি নবান্ন হয়েছিল? আবার অসুস্থ অবস্থায় যখন কবির মুখে অরুচি, তখন এই অমিতার হাতের গন্ধরাজ লেবুর গন্ধ দেওয়া সাদা কলাই ডাল, ধনেপাতা দিয়ে পাবদা মাছের পাতলা ঝোল, হিং ও জিরেভাজা দিয়ে ঝাল ছাড়া কচি পাঁঠার মাংসের ঝোল অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে খেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
খাদ্য পরিবেশনে রুচির অভাব থাকলেও তিনি সইতে পারতেন না। ‘য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র’-এ তিনি লিখেছেন, “ইংরেজদের খাবারের টেবিলে যে রকম আকারে মাংস এনে দেওয়া হয়, সেটা আমার কাছে দুঃখজনক। কেটে-কুটে মশলা দিয়ে মাংস তৈরি করে আনলে এরকম ভুলে যাওয়া যায় যে একটা সত্যিকারের জন্তু খেতে বসেছি, কিন্তু মুখ-পা বিশিষ্ট আস্ত প্রাণীকে অবিকৃত আকারে টেবিলে এনে দিলে একটা মৃতদেহ খেতে বসেছি বলে গা কেমন করতে থাকে।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.