কাশ্মীরে বন্দিদশায় বিনা চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যু হয়েছিল শ্যামাপ্ৰসাদের
নয়া ঠাহর ওয়েব ডেস্কঃ জনসংঘের প্ৰতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্ৰসাদ মুখোপাধ্যায় বিরোধিতা করেছিলেন সংবিধানের ৩৭০ ধারা এবং জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ মৰ্যাদা দেওয়ার। তৎকালীন কংগ্ৰেস সরকারের কাছে তাঁর প্ৰশ্ন ছিল, কেন সেখানে ঢুকতে হলে বিশেষ অনুমতি নেওয়ার প্ৰয়োজন। তারই প্ৰতিবাদে কাশ্মীরে ঢুকতে গিয়ে তাঁকে গ্ৰেফতার করা হয় এবং জেল বন্দি থাকার সময় তাঁর মৃত্যু হয়।
ছবি, সৌঃ আন্তৰ্জাল
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে পরেই পাকিস্তানি হামলাকারীরা কাশ্মীরে ঢোকে। আকাশ পথে দুৰ্লঙ্ঘ্য পাৰ্বত্য অঞ্চলের বাধা পার হয়ে ভারতীয় সেনারা তাদের প্ৰতিহত করে। এরপর প্ৰতিপক্ষকে তাড়া করে ভারতীয় সেনারা যখন এগোতে শুরু করেন ঠিক তখনই নেহরু রাষ্ট্ৰসংঘে বিষয়টি উত্থাপন করেন। ফলত নেহরুর এই ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ দানা বাধে রাজনৈতিক মহলে। উরি বরাবর ঘোষিত হয় যুদ্ধবিরতি। তৈরি হয় প্ৰকৃত নিয়ন্ত্ৰণ রেখা। অন্যদিকে, শ্ৰীনগরে মুখ্যমন্ত্ৰীর দায়িত্ব নেন জম্মু ও কাশ্মীরের প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী ওমর আবদুল্লার নানা শেখ আবদুল্লা।
কিন্তু জানা যায় রাজ্যের ক্ষমতা হাতে পেতে না পেতেই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা আওয়াজ তুলে নেহরুকে ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করেন। এরপর মূলত শেখ আবদুল্লার চাপেই সেখানে পারমিট প্ৰথা চালু হয়। সংবিধানে ৩৭০ ধারা সংযোজনের সূত্ৰেই ফের জম্মু-কাশ্মীর বিশেষ সুবিধা ভোগ করতে শুরু করে।
কাশ্মীরের বিশেষ সুবিধা প্ৰাপ্তির বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু করেন শ্যামাপ্ৰসাদ মুখোপাধ্যায়। তারই প্ৰতিবাদস্বরুপ বিনা পারমিটেই একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তিনি কাশ্মীরে পা রাখেন। ১৯৫৩ সালে ১০ মে দিল্লি থেকে ট্ৰেনে তিনি পাঠানকোটের দিকে রওনা দেন। জম্মু ও কাশ্মীরে প্ৰবেশ করতেই শেখ আবদুল্লার পুলিশ তাঁকে গ্ৰেফতার করে। সেখান থেকে তিনি আর বেরিয়ে আসতে পারেন না। রাজনৈতিক একাংশ বিশ্লষকদের মতে এটাই ছিল নেহরু এবং শেখ আবদুল্লার মিলিত ষড়যন্ত্ৰ। বৰ্ষীয়ান বিজেপি নেতা অটল বিহাররী বাজপেয়ীরও একই অভিযোগ ছিল। বাজপেয়ী সমেত পুরনো জনসঙ্ঘীদের অনেকের মত, যদি শ্যামাপ্ৰসাদকে কাশ্মীরে ঢোকার আগে গ্ৰেফতার করা হত, তাহলে প্ৰশ্ন উঠত। যেটা নেহরু চাননি। কিন্তু তখনও জম্মু ও কাশ্মীর সুপ্ৰিম কোৰ্টের আওতাধীন হয়নি। উপত্যকার আইন ছিল পুরনো আমলের আইন। সেই অনুসারে সেখানে আইন অমান্যের অভিযোগে গ্ৰেফতার হলে মুক্তি পাওয়া কঠিন ছিল।
শ্যামাপ্ৰসাদের গ্ৰেফতারি থেকেও বন্দি অবস্থায় মৃত্যু নিয়ে যথেষ্ট বিতৰ্ক রয়েছে। নেহরু বিরোধীদের মতে টিলার ওপর ক্ষুদ্ৰ কুটিরকে একেবারে সাব-জেলে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। তাছাড়া হাৰ্টের রোগী শ্যামাপ্ৰসাদ হাঁটাচলা করার আবেদন জানালে তা ও নামঞ্জুর করেছিল শেখ আবদুল্লার পুলিশ। তবে তার চেয়েও বড় অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় নেহরু স্বয়ং অবসর বিনোদনের জন্য কাশ্মীরে গিয়েছিলেন। তবু তাঁর মন্ত্ৰীসভার এক গুরুত্বপূৰ্ণ প্ৰাক্তন সদস্যের সঙ্গে কারাগারে গিয়ে দেখা করার সৌজন্যটুকুও তিনি দেখাননি। ওই সময় শ্যামাপ্ৰসাদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেশের একজন সাংসদ বিনা বিচারে আটক থাকা সত্ত্বেও তাঁর হাৰ্ট অ্যাটাককে নাকি গুরুত্বই দেয়নি জম্মু কাশ্মীর প্ৰশাসন, এমনই অভিযোগ রয়েছে। আজও নানা মহলে দাবি ওঠে, বিনা চিকিৎসায় অবহেলায় শ্যামাপ্ৰসাদের শারীরিক অবস্থার দ্ৰুত অবনতি হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
২৩ জুন তাঁর মৃত্যুর কথা ঘোষণা করা হয়। তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ এখনও ধোঁয়াশা হয়েই রয়ে গেছে। ছেলের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চেয়ে তৎকালীন প্ৰধানমন্ত্ৰীর কাছে যোগমায়া দেবী আবেদন করেছিলেন। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। সেই আবেদন নাকচ করে দেন জওহরলাল নেহরু স্বয়ং।
কোন মন্তব্য নেই