মমতাকে চূড়ান্ত বার্তা শোভন-বৈশাখীর, কান্নায় ভেঙে পড়ে জানালেন ইস্তফার সিদ্ধান্ত
বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : সরকার ও তৃণমূলের কাছ থেকে চরম অপমানিত হয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়লেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষোভ উগরে দিলেন প্রাক্তন মেয়র-মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। ২৩ জুলাই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকের এতদিন পর সাংবাদিক বৈঠক ডেকে মুখ খুললেন তাঁরা। এমনকী শুধু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই নয়, কলেজ থেকে ইস্তফার সিদ্ধান্তও নিয়ে নিলেন বৈশাখী।
বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে বৈশাখী বলেন, শোভন তৃণমূলে না ফেরায় তাঁর কেরিয়ার শেষের চক্রান্ত হচ্ছে। দুদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁকে চূড়ান্ত অপমান করা হয়েছে। তাঁর উপর লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার তকমা। তাই তাঁকে পদ থেকে সরানোর আগেই ইস্তফার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বৃহস্পতিবারই আমি আচার্যের সঙ্গে দেখা করব।
বৈশাখীর কথায় স্পষ্ট, তিনি মিল্লি আল আমিন কলেজ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্ত পাকাপাকিভাবেই নিয়ে নিয়েছে। এ থেকেই পরিষ্কার পার্থ-শোভন বৈঠক সফল হয়নি। এদিনের পর শোভনের সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব আর বেড়ে গেল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। শোভনের কণ্ঠেও শোনা গেল সেই সুর। শোভন বলেন, কোথায় যাব সময় এলেই স্থির হবে।
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তিনি প্রশ্ন তোলেন, দলে না ফিরলে বৈশাখীর চাকরি যাবে এমন শর্ত ছিল নাকি। এদিন শোভন-পার্থর বৈঠক নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন বৈশাখী। শোভনকে পাশে নিয়েই তিনি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধেও মুখ খুলে তিনি বলেন, সম্প্রতি ‘দিদিকে বলো' কর্মসূচি নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আমি দিদিকে বলতে চাই, আমাকে কি এভাবে অপমানিত করে সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিন বৈশাখী সাংবাদিক বৈঠকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এরপর শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ২৩ জুলাই পার্থদা হঠাৎ এসে উপস্থিত হয়েছিলেন। পার্থদা আমার সহকর্মী, আমরা একসঙ্গে দল করেছি। তাই তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আমার কোন আপত্তি ছিল না। সেদিন দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে। বৈশাখীও ছিল। স্বভাবতই কথার সময় উঠেছে বৈশাখীর প্রসঙ্গও। পার্থদা নিজে কথা দিয়েছেন, বৈশাখীর দায়িত্ব তাঁর। তাঁকে সসম্মানে পদে রাখা হবে। কিন্তু তারপরও পদে পদে অপমান চলছে। এরপর তিনি বলেন, এরপর তিনি কী করবেন, কোথায় যাবেন, তা সময় এলেই বুঝতে পারবেন।
পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও শিক্ষা দফতরের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ করেছিলেন বৈশাখী ও শোভন। সেই অভিযোগ সমূলে উৎখাত করলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলেছিলেন বৈশাখী। তার প্রত্যুত্তরে পার্থ বলেন, হাইহাউ করে কাঁদছেন কেন, আমাকে তো বললেই হত। কেউ কোনও চক্রান্ত করেনি। সবই মিথ্যা অভিযোগ।
শোভন-বৈশাখীর অভিযোগের পর পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, শোভন এখনও দলেই রয়েছেন। তিনি দলের বিধায়ক, কাউন্সিলর। তাই তাঁকে ফেরানোর কোনও প্রশ্নই নেই। হ্যাঁ শোভনকে সক্রিয় করতে গিয়েছিলাম দলে। আর তাতে কোনও শর্তও ছিল না। পার্থ বলেন, আমি সেদিন মন্ত্রী বা শিক্ষা দফতরের প্রধান হয়ে শোভনের বাড়িতে যাইনি। আমি গিয়েছিলাম পার্থদা হিসেবে। আমরা একই দলের সদস্য। সেহেতু আমাদের মধ্যে কথা থাকতেই পারে। দুজন রাজনীতিকের মধ্যে কথা হলে তো রাজনৈতিক কথা হবেই। তা-ই হয়েছে।
তারপরই তিনি বলেন, আমাকে এখনও রক্ষকই মনে করবেন বৈশাখী, নাকি ভক্ষক মনে করবেন, এটা তাঁর ব্যাপার। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, তাঁর বিরুদ্ধে কোনও চক্রান্ত হয়নি। কান্নার কী কাছে, তিনি এসে বললেই পারতেন কী সমস্যা, শিক্ষা দফতর দেখবে কীভাবে সাহায্য করা যায়।
পার্থ এ প্রসঙ্গে বলেন, বৈশাখী এফিসিয়েন্ট বলেই তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমি বলব আবেগতাড়িত হয়ে ক্ষোভের বসে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। পদত্যাগ না করে নিজের দায়িত্ব পালন করুন। আমার তরফ থেকে আমি চেষ্টা করেছি, আবারও করব। তবে কেউ যদি আরও বড় জায়গা পায়, তিনি তো যেতেই পারেন।
কোন মন্তব্য নেই