Header Ads

শেষ দিন পর্যন্ত দলে রেখেছিলেন মমতা, স্নেহের দাম দিলেন না কানন, আক্ষেপ তৃণমূলে

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন জেনেও আগে থেকে বহিষ্কার করা হয়নি তাঁকে। কার্যত নেত্রীর নরম মনোভাবের কারণেই। ৮০-র দশকে রাজনীতিতে প্রবেশের পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ। ২০০১-এ তৃণমূলে যোগ। তারপর নেত্রীর বাড়িতে কালী পুজো হোক কিংবা ভাইফোঁটা, তাতে কাননের উপস্থিতি ছিল মাস্ট। যদিও গতবছর থেকে সেই নিয়মে ছেদ পড়ে। আর বুধবার থেকে আপাতত তা পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে গেল।
শোনা যায় স্ত্রী রত্না এবং শ্বশুর দুলাল দাস শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। একাধিকবার বুঝিয়েওছেন মমতা। প্রথমে মন্ত্রিত্ব পরে কলকাতার মেয়র পদ যায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। কিন্তু দলের সদস্যপদ রেখে দিয়ে বারবার শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সক্রিয় করার চেষ্টা করে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। নেত্রীর নির্দেশে কোনও সময় ফিরহাদ হাকিম, আবার কোনও সময় পার্থ চট্টোপাধ্যায় শোভন চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছেন। 
গত প্রায় একবছর ধরে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এরই মধ্যে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন দলের কাজ থেকে। কেন তিনি এই অবস্থান নিচ্ছেন সেই প্রশ্ন উঠছিল বারবার। অন্যদিকে এই প্রশ্নও উঠেছে, কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যবস্থা নিতে দেরি করছেন।
পরিবার সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোভন চট্টোপাধ্যায়কে একাধিকবার বুঝিয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্ত্রী রত্না চট্টোপাধ্যায়। তাঁকে সংশোধনের সুযোগও দিয়েছেন। দলের অনেকে আপত্তি করলেও, বিজেপির সঙ্গে তাঁর কথা চলছে জেনেও দল থেকে বহিষ্কার করেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে দলে দায়িত্ব কমিয়ে, মন্ত্রিত্ব ছেঁটে, শেষে মেয়র পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন।
ঘনিষ্ঠ মহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলতে শোনা গিয়েছে, বহু সুখ, দুঃখের সঙ্গী। সব সময় পাশে থেকেছে। সেই জন্যই হয়তো দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটা আগে নেওয়া যায়নি। তৃণমূলের অনেকেরই আক্ষেপ, স্নেহের দাম দিলেন না কানন।
তবে আজ সরাসরি নাম না করলেও, স্নেহের কাননকে দায়বদ্ধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার বার্তা দিলেন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন বিকেল ৫ টা নাগাদ দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায়। এরপর সন্ধেয় এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দায়বদ্ধতা না থাকলে রাজনীতি করা যায় না। যাঁরা রাজনীতি করেন , তাঁদের দায়বদ্ধতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বড়। একটা মানুষের রাজনীতি তখনই শোভা পায়, যখন, সমাজ পরিবারের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা থাকে। গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা থাকে। তিনি আরও বলেন রাজনৈতিক কারণে কে কী বলল, তাতে কিছু যায় আসে না।
শোভন চট্টোপাধ্যায় বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণ নিয়ে প্রথমেই উল্লেখ করেন পঞ্চায়েত নির্বাচনে গণতন্ত্র হরণ করার কথা। প্রসঙ্গত সেই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৪ শতাংশ আসনে জয়ী হয়েছিল। শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, দলের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। পাশাপাশি তিনি বলেন, মজবুত ভারত গড়ার লক্ষ্য নিয়েছেন মোদী। তবে তিনি কোনও রকমের নেতিবাচক রাজনীতি করতে চান না বলেও জানিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, শোভন চট্টোপাধ্যায় দীর্ঘ ৩৪ বছর রাজনীতি করেছেন। ৩ টি সরকারি দফতর ছাড়াও কলকাতার মেয়রের পদ সামলেছেন। অন্যদিকে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে শিক্ষাবিদ বলার পাশাপাশি তৃণমূল নেত্রী বলেও উল্লেখ করেন তাঁকে। 
মুকুল রায় তৃণমূল তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে বলেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী করার পিছনে, যাঁদের অবদান উল্লেখযোগ্য, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়ও। তিনি আরও বলেন, কলকাতা পুরসভায় ক্ষমতা হারাবে তৃণমূল। তাঁর দাবি, পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধীদলের মর্যাদাটাও পাবে না তৃণমূল।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.