Header Ads

আসা-যাওয়ার পথের ধারে কাটমানি’র গান

বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায় : হ্যাঁ, লোকে হাসছে-লোক হাসানোর মতো ঘটনা দেখলে লোকে হাসবে না কেন ! ঘটা করে কখনো রাজ্য দপ্তরে কখনো একেবারে দিল্লির কেন্দ্রীয় দপ্তরে যাদের উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে গলায় পদ্মলাঞ্ছিত উত্তরীয় পরিয়ে দলে সাদরে বরণ করে দেওয়া হচ্ছে-কয়েকদিন যেতে না যেতেই তারা নিজের নিজের ‘‘আসল’’ প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছে ! কয়েক দিন বা কয়েক ঘন্টার জন্যে যেসব পুরসভা-পঞ্চায়েত-জেলাপরিষদ দখলের সাড়ম্বর ঘোষণা করা হচ্ছে সেগুলোর দলবদলু কুশীলবদের পাল্টা ডিগবাজিতে হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এসব দেখেশুনে লোকের হাসি পাওয়া স্বাভাবিক। এমন কী এও শোনা যাচ্ছে শুভ্রাংশু রায় নাকি বাবার হাত ছেড়ে ফের পিসি’র শ্রীচরণে শরণ নিতে পারেন !
মানুষ বুঝতে চাইছে-এসব হচ্ছেটা কি ! তৃণমূল থেকে যারা বিজেপিতে দৌড়ে চলে যাচ্ছেন-তারাই আবার ছুটতে ছুটতে ফিরে আসছেন কেন?
আসলে কাটমানিকেলো থেকে রিলিফ পাওয়ার তাগিদে যারা বিজেপি’র হাতে রাজ্যপাট তুলে দিতে চিয়েছিল তারা বোধহয় ভবিষ্যতের কথাটা তলিয়ে ভাবে নি। বিজেপি’র সরকার কেন্দ্রে রাজ্যে নয়। রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন সবই তৃণমূলের হাতে। যারা বিজেপি’র হাতে রাজ-পাট সঁপে দিতে হুড়োহুড়ি শুরু করে দিয়েছিল তাদের ট্র্যাক রেকর্ড এতটাই খারাপ ও আইনি বিচারে বিপজ্জনক যে দলবদল করলেও তাদের হাজত বাস ঠেকানোর ক্ষমতা রাজ্য বিজেপি’র হাতে নেই। এই গুরুত্বপূর্ণ বার্তাটা দলবদলুদের কানে পৌঁছুনো মাত্র তারা আর কাল বিলম্ব না করে পাল্টা ডিগবাজিতে নিজের নিজের কোটরে ফিরে আসছে। মুখের ওপর আাঁধার ঘনাচ্ছে বিজেপি নেতাদের। 
মুকুল রায়-কৈলাশ বিজয়বর্গীয় এবং দিলীপ ঘোষ মহাশয়গণ এখনোপর্যন্ত দলবদলের সম্পূর্ণ এপিসোডের ভিডিও ক্লীপিংস দেখে কি ভাবছেন তা মানুষ জানে না। তবে সাধারণ মানুষ তাদের সাধারণ বিচারবুদ্ধিতে এঁদের রাজনৈতিক প্রতিভাকে প্রশংসা করতে পারছে না।  এত তাড়াহুড়োর কোন প্রয়োজন ছিল বলে রাজনৈতিক মহলের অনেকেই মনে করছেন না। 
বিজেপি কেন মাত্র দুই থেকে ১৮ টি লোকসভা আসন দখল করতে পারল-এটা তারা একেবারেই জানেন না বা বোঝেন না তা কিন্তু নয়। এঁরা কেন ১৮ পেলেন এবং তৃণমূল কেন ১২ হারাল-সেটা উভয়েই বুঝতে পারছেন-পারলেও রাতারাতি সব দখল করে নেওয়ার আগ্রাসী রাজনীতি থেকে যে বিজেপিও মুক্ত নয়-এটাই বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানুষকে বিশেষভাবে ভাবাচ্ছে। 
১৮ জন সাংসদের মধ্যে যদি দু’জনকে পূর্ণমন্ত্রী ও কম করেও তিনজনকে প্রতিমন্ত্রী করে আগামী দেড় বছর বিজেপি গোট রাজ্য দাপিয়ে বেড়াবার কথা ভাবতে পারত তাহলে ইতিমধ্যেই রাজ্যের প্রায় ১৪৫ বিধানসভার বহু বিধায়কই বিজেপিতে নাম লেখানোর বার্তা দিয়ে দিতেন-এদের সঙ্গে বহু পঞ্চায়েত-পুরসভা-পঞ্চায়েত সমিতি ও কয়েকটা জেলাপরিষদও দখলে নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এমনিতেই তৈরি হয়ে যেত। কারণ, যেসব বিধায়ক নিজের নিজের কেন্দ্রে গোহারা হেরেছেন এবং যারা দলের সন্দেহের তালিকায় রয়েছেন তাদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার জন্যেই বিজেপি’র আশ্রয় নেওয়ার কথা ভাবতেই হত। এই পুরো প্রক্রিয়াটা দেড় বছরের মধ্যে-অর্থাৎ ২০২১-এর নির্বাচনের আগেই  ‍সুচারুভাবেই সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।  
কাটমানিকোলোতে যারা চিহ্নিত হয়ে গেছে-সেই বিপুল সংখ্যক দলীয় সম্পদদের সঙ্গে নিয়ে আর এক পা-ও এগোনো সম্ভব নয় তৃণমূলের পক্ষে-পচা ও দাগী আলু দলের পক্ষে কোন যুক্তিতেই লাভদায়ক হতে পারে না। কারণ, তারা ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে নিজেদের প্রভাব প্রতিপত্তি মান-সম্মান সব কিছু হারিয়ে ফেলেছে। এক কথায় বলতে গেলে একটা বিপুল সংখ্যক দলীয় কর্মী-নেতা দলের অস্বস্তিকর বোঝা হয়ে ওঠার ফলে এমনিতেই বড়সড় একটা শূন্যতা তৈরি হয়ে গেছে--যেখানে এই মুহূর্তে বিজেপি ছাড়া আর কারুর পক্ষে পা রাখা সম্ভব নয়। কারণ, কংগ্রেস শুধু রাজ্যভিত্তিতেই নয়-কেন্দ্রীয় প্রেক্ষাপটেও প্রায় অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে-বাম তথা সিপিএমও কোমা থেকে উঠে বসতে পারে নি। সুতরাং সুবর্ণ সুযোগ বিজেপির-ই --যদি  রাজ্যে সেই সুযোগ কাজে লাগাবার মতো বোধবুদ্ধিসম্পন্ন নেতৃত্ব তাদের থাকে তবেই। যে গুলো এমনিতেই হাতের তালুতে উঠে আসা শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র সেগুলোকে ছিনতাই করার উৎকট আগ্রহ মানুষের ভাল লাগবে কেন?
বিজেপি এখনো বুঝে উঠতে পারে নি পায়ের নিচের মাটি শক্ত করার জন্য এই মুহূর্তে কাদের দিকে হাত বাড়ানো দরকার। শিক্ষিত ভদ্র রাজনীতি সচেতন সামাজিক প্রতিষ্ঠাসম্পন্ন মানুষদের যদি দলের পাশে টানতে পারে তাহলে বিজেপি’র গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে পারে-তা না হলে তাদেরও বাড়া ভাতে ছাই পড়তে বেশি দেরি হবে না ! যা হচ্ছে তা যদি হতেই থাকে লোকে হাসবেই !

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.