Header Ads

অরুণাচলের দুৰ্গম পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়া নিয়ে দানা বাধছে রহস্য

ছবি, সৌঃ আন্তর্জাল
নয়া ঠাহর প্ৰতিবেদন, গুয়াহাটিঃ অরুণাচলপ্ৰদেশের পশ্চিম সিয়াংয়ে গত ৩ জুন যেভাবে ভারতীয় বায়ুসেনার আন্তোনভ এএন৩২ বিমানটি দুৰ্ঘটনা হল, দশ বছর আগে ২০০৯ সালের জুনেও ওই দুৰ্গম এলাকায় ভেঙে পড়েছিল বায়ুসেনার একটি এএন৩২ যুদ্ধবিমান। তাতেও কেউ বাঁচেন নি। প্ৰাণ হারিয়েছিলেন ১৩ জন যাত্ৰী। ২০১০ আগস্টের ৬ তারিখে পবন হংস হেলিকপ্টার দুৰ্ঘটনা হয়। হেলিকপ্টারে ৫ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। ২০১০সালের ১৯ নভেম্বর ভারতীয় বায়ুসেনার এমআই১৭ হেলিকপ্টার তাওয়াঙের কাছে দুৰ্ঘটনা হয়। তাতে বায়ুসেনার লেফটেন্যান্ট কৰ্নাল সমেত ১৯ জন প্ৰাণ হারান। ২০১১ সালে একমাসে ২টি হেলিকপ্টার দুৰ্ঘটনা সংঘটিত হয়। প্ৰথম দুৰ্ঘটনায় ১৭ জন প্ৰাণ হারান, দ্বিতীয় দুৰ্ঘটনায় তখনকার অরুণাচলপ্ৰদেশের মুখ্যমন্ত্ৰী দৰ্জি খান্ডু মারা যান। হেলিকপ্টারটি টেক অফ করার ২০ মিনিট পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। এরপর অরুণাচল চিন সীমান্তে সেলা পাস এলাকা থেকে খান্ডুর দেহ উদ্ধার করা হয়। ২০১১ সালের ১৯ এপ্ৰিল এমআই১৭ পবন হনস হেলিকপ্টার তাওয়াঙে অবতরণের সময় দুৰ্ঘটনাগ্ৰস্থ হয়। তাতে দুটি শিশু সমেত ১৭ জনের দুৰ্ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়। পরে ২০১৫ সালের ৪ আগস্ট পবন হনস-এর আরেকটি হেলিকপ্টার নিখোঁজ হয়। এরপর ৮ দিন পর ১২ আগস্ট ওই হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। তাতে ৩ জনের মৃত্যু হয়। দু বছর পর ২০১৭ জুলাইয়ে পাপুম পোর জেলার সাগালি এলাকায় উদ্ধার অভিযানে নেমে নিখোঁজ হয় একটি হেলিকপ্টার। একদিন পর ওই হেলিকপ্টারটির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। তাতে যে ৩জন ছিলেন সকলকেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ২০১৬ তেও চেন্নাই থেকে আন্দামান-নিকোবর যাওয়ার পথে বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ হয়ে যায় একটি এএন-৩২। সেটিরও কোনও হদিশ মেলেনি। ২০১৭ সালের অক্টোবরে তাওয়াঙের কাছে ভারতীয় বায়ুসেনার এমআই-১৭ বি ৫ হেলিকপ্টার দুৰ্ঘটনায় ৫ জন ক্ৰু সদস্য এবং দুজন সেনা অফিসার মৃত্যু হয়। রহস্যজনকভাবে দুৰ্ঘটনাগুলি সংঘটিত হয়েছে। গত ১০ বছরে দুৰ্গম ওই এলাকায় বিমান দুৰ্ঘটনায় ৫০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। অরুণাচলের দুৰ্গম এলাকাগুলিকে বারমুডা ট্ৰায়াঙ্গেল বলে এক অজানা আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনাগুলি কো-ইনসিডেন্স, না কি অন্য কিছু? না অতিপ্ৰাকৃতিক বিষয়? এই সমস্ত প্ৰশ্নই ক্ৰমশ রহস্য ঘনাচ্ছে। অরুণাচলপ্ৰদেশের জঙ্গলে ঘেরা এলাকা লিপোতে যেখানে বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার হয়। জায়গাটি গভীর উপত্যকা, ঘন জঙ্গলে ঘেরা এলাকা, টানা বৃষ্টি ও কম দৃশ্যমানতার কারণে বায়ুসেনা বাহিনীর উদ্ধার অভিযান চালাতে সমস্যা হয়েছিল। সেখানে লাইট হেলকপ্টার ও নামানোর মতও অনুকূল পরিবেশ নেই। তাই উদ্ধার অভিযানে স্থানীয় ৫জন শিকারীকে নিয়োগ করেছিল উদ্ধারকারীর দল। প্ৰকৃতি সেখানে অ্যাতোটাই দুৰ্গম যে কোনও ভাবেই ঠিকমতো উদ্ধারকাজ করা সম্ভব হয়নি। তল্লাশি অভিযানে নামে বায়ুসেনার সি-১৩০ জে বিমান, সুখোইএসইউ-৩০, নৌসেনার পি৮-আই বিমান। অভিযানে অংশ নেয় সেনা হেলিকপ্টারও। ইসরো-র উপগ্ৰহ চিত্ৰ এবং ড্ৰোনের সাহায্যও নেওয়া হয়। বেশ কয়েকদিন ধরে রাতেও তল্লাশি অভিযান চালানো হয়েছিল। সেনা সূত্ৰে জানা যায়, দুৰ্গম পাহাড়ি এলাকা এবং প্ৰতিকূল আবহাওয়া সেনাবাহিনীর কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তারপরেও হাল না ছেড়ে বিমানের খোঁজ দিতে পারলে ৫ লক্ষ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করা হয় বায়ুসেনার তরফে। তারপর অবশেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলায় অরুণাচলপ্ৰদেশের লিপোয় এমআই-১৭ বিমানে আন্তোনভ বিমানটির ধ্বংশাবশেষ চোখে পড়ে। দুৰ্ঘটনা স্থল দেখে বোঝাই যাচ্ছিল বিমানের আর কেউ বেঁচে নেই। বৃহস্পতিবার বায়ুসেনার তরফে তা নিশ্চিত করা হয়। এরপরই শহিদদের পরিজনদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। তারা বায়ুসেনা থেকে এএন-৩২ বিমানকে বাদ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। বৃহস্পতিবার বিমানের ব্ল্যাক বক্সটিও উদ্ধার করা হয়েছে। তা থেকেই দুৰ্ঘটনার কারণ জানা যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।   

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.