Header Ads

বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সংবাদ সম্মেলন, হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষাৰ্থে সরকারের কাছে দাবি

নয়া ঠাহর প্ৰতিবেদন, ঢাকাঃ বাংলাদেশ ২০১৮তে জাতীয় নির্বাচনের পরে শেখ হাসিনা সরকার তৃতীয় বার ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার বাংলাদেশে কমেনি বরং বেড়ে গেছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন কম করার কথা বলেছেন যদিও কিন্তু এর কোন কাজই হয়নি। এ মন্তব্য বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সংগঠনিক মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের। শুক্রবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত ভাবে এ তথ্য জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন যে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও একটি পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা এবং একটি সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক দাবী করে আসছে। কিন্তু সরকার সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনও সুস্পষ্ট বক্তব্য দেয়নি।
 গোবিন্দ বাবু এই সংবাদ সম্মেলনে হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সরকারের কাছে চারটি দাবি জানান। এ দাবিগুলো হল- জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচন পরবর্তী হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হিংসা ও নির্যাতন বন্ধ করা। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি আসন ও পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠা করা। একটা সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক প্রতিষ্ঠা করা এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী নিয়োগ করা। হিন্দুদের ওপর নির্যাতন মানবতাবিরোধী অপরাধ। ট্রাইব্যুনালে বিচার করে শাস্তি বিধান করা। ক্ষতিগ্রস্তদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।
সমস্ত পাঠ্যপুস্তকগুলিকে ধর্ম নিরপেক্ষ করা। দুর্গাপূজাতে তিনদিন, রথযাত্রাতে একদিন ও হরি ঠাকুরের জন্মদিনে একদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করে সংবিধানে বর্ণিত সমঅধিকার নিশ্চিত করা। এই দাবিগুলো আগামী ১৬ এপ্রিলের মধ্যে সরকারকে বাস্তবায়নের একটা সুস্পষ্ট ঘোষণা করার দাবি জানান তিনি। অন্যথায় ১৭ এপ্রিল হিন্দুরা বাংলাদেশের প্রত্যেক জেলায়, উপজেলায় সদরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি গ্রহণ করবে বলে ঘোষণা করেন তিনি (গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক)। উল্লেখ্য, সারা বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, হত্যা, মন্দির ও প্রতিমা ধ্বংস করা, জমি দখল এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিকার বিষয়ে এক সংবাদিক সম্মেলন হয়ে যায় শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে। জাতীয় নির্বাচনের পর বর্তমান শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসার পর মাত্র আড়াই মাসের মধ্যে ২৭ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে, মারপিটের ঘটনায় হিন্দুরা আহত হয়েছেন ৫৮ জন। এছাড়াও ২৫৪ টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। জমি দখলের ঘটনা ঘটেছে ১৪৩টি। শতাধিক মন্দির ও মূর্তি ভাঙ্গা হয়েছে। ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি শিকার হয়েছেন ৩৭ জন হিন্দু মহিলা। অপহরণ ও নিখোঁজ হয়েছেন ১৩ জন।
সংবাদিক সম্মেলনে গোবিন্দ বাবু বলেন- দিন দিন বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর নির্যাতন বেড়ে চলেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধী গ্রেফতার হলেও পরে ছাড়া পেয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যে। হিন্দু নির্যাতনের অপরাধীদের আজ পর্যন্ত শাস্তি হয়নি। ফলে তাদের সাহস বেড়ে গেছে। যার ফলে একের পর এক এরকম ভাবে হামলা হচ্ছে হিন্দুদের ওপর। গোটা দেশে ব্যাপকহারে হিন্দুদের জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে সাথে হিন্দুদের ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। বহু দোকানে আগুন লাগিয়ে লুটপাট চালানো হয়েছে। সাথে চাঁদার দাবি ও দেশ ত্যাগের মত হুমকির ঘটনাও অনেক ঘটেছে। দেশে হিন্দুদের নিরাপদ বসবাসের মতো অবস্থা নেই। বাংলাদেশে সকল ধর্মের মানুষের জন্য আলাদা ধর্ম শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টেন পর্যন্ত বাংলাদেশের সাহিত্যের বইতে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কিত প্রবন্ধ, কবিতা ও কাহিনী সংযোজন করে তা ছাত্র-ছাত্রীদের পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে। এদিনের সংবাদিক সম্মেলনে বাংলাদেশের জাতীয় হিন্দু মহাজোটের সাংগঠনিক মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামানিক বলেন- বাংলাদেশে যে হারে সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমণ চলছে তাতে হিন্দুরা উদ্বিগ্ন হবেন তা স্বাভাবিক। এ দেশে হিন্দু সম্প্রদায় যারা জীবন ঝুঁকি নিয়ে যাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে তারা আজ পর্যন্ত হিন্দুদের ওপর নির্যাতন নিপীড়নের বিষয় নিয়ে সংসদে কোনও কথাই বলেনি। সরকার হিন্দু সম্প্রদায়ের জীবন ও সম্পদ রক্ষার জন্য কার্যকর কোনও ভূমিকা গ্রহণ করেনি।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.