তরোয়ালের বন্দুকের ডগায় আমাদের দেশপ্রেম নয়
ড০ প্রশান্ত চক্রবর্তী
অনেকে বলছে~এ-দেশে নাকি রাতারাতি দেশপ্রেম উথলে উঠেছে!
আজ্ঞে না, মোটেও না। দেশের প্রতি মানুষের চিরন্তন আবেগটি আসলে চাপা ছিল। ধামাচাপা দেওয়া হয়েছিল। সুকৌশলে। সত্তর বছর ধরে একটি ক্ষমতালিপ্সু পরিবার আর তাদের রাজনৈতিক দালালেরা দেশভাবনাকেই লোপাট করে লুণ্ঠনকেই রাজনৈতিক কালচার হিসেবে প্রজেক্ট করেছিল। নানা কায়দায়। তারসাথে "রক্তের বিনিময়ে পরিবর্তন"-এ বিশ্বাসী বিষাক্ত বাম কমিউনিস্টরা মানুষের মুখ ঘুরিয়ে দিয়েছিল রাশিয়ার দিকে, ভিয়েতনাম, কিউবার দিকে। যেন স্বর্গরাজ্য ওখানেই। রাশিয়া মুখ থুবড়ে পড়ার পর এদের বুকের ভেতর চিন-চিন...! এর সাথে আরব মুলকের কাল্পনিক ধর্মরাজ্য স্থাপনের মৌলবাদ। তথাকথিত ধর্মরাষ্ট্র বিশ্বজোড়া হবে। একজনই উপাস্য হবেন। সবাই এক "ধর্ম" নেবে (বাধ্য হবে নিতে। যেমন তরোয়ালের মাথায় চৌদ্দশ বছর ধরে ধর্ম বাড়ানো হয়েছে)...ধর্মের নামে মরলে(জিহাদ?!) মরার পর বাহাত্তর হুরি সেবা করবে...! কমিউনিস্টরাও এরকম স্বপ্ন দ্যাখে। তাদের মৌলবাদ একসময় সারা বিশ্বে ছেয়ে যাবে...!!! ১৯৩০-এ রাশিয়ায় গিয়ে রবীন্দ্রনাথ চমকে গেছিলেন। পুত্র রথীন্দ্রনাথকে সেই বিস্ময় ব্যক্তও করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী গবেষণায় দেখা যায় রবীন্দ্রনাথকে আসল রাশিয়া দেখানো হয়নি। তিনি তো রাশিয়ার ভাষা জানতেনও না। ফলত দোভাষীর মাধ্যমে বুঝতে হয়েছিল, যা তাঁকে ভুজংভাজুং দিয়ে বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু ক্রান্তদর্শী কবি বুঝেছিলেন কোথাও একটা ফাঁকিবাজি আছে। তাই আশঙ্কা ব্যক্ত করেছিলেন "ছাঁচে-ঢালা মনুষ্যত্ব" টেকে না। ছাঁচ ফেটে চৌচির হয়ে যায়। হলোও তাই। গেল শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে টুকরো টুকরো হয়ে গেল রাশিয়া। কমিউনিস্ট মৌলবাদীদের তীর্থ। বাঁকা চাঁদ আর কাস্তের মধ্যে মিল আছে না? ওই যে কাজাকস্তান, তুর্কেমিনিস্তান, আরমেনিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান ("স্তান" তো সংস্কৃত "স্থান" থেকে এসেছে, পাকিস্তান তাও পরের ধনে পোদ্দারি মারে। আরে বেটারা তোদের দেশের নামটিও আমাদের সভ্যতার)সবই বাঁকা চাঁদ নিয়ে কেটে পড়ল। ভাঙা কাস্তে পড়ে রইল মস্কোর পথে। এ তো ইতিহাসের মার।
না, আমাদের দেশ রাজ্যবিস্তার পররাজ্যদখলের কালচারটি বহন করেনি। সেসব রাজতন্ত্রে ছিল। ভারত সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেছে। কাল্পনিক হিন্দুরাজত্ব সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবেএমন কূটকল্পচিত্র কোনো হিন্দুস্থানি মানুষ কোনোকালেই দ্যাখেনি। আরে, পেটের ভেতর তো নেপাল, ভুটান রয়েছে। কই, ভারত তো দখল করেনি। নয়দিনে পাকিস্তানকে ঠান্ডা করে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিল ভারত। কই, বাংলাদেশকে নিজের প্রদেশ বানায়নি। শ্রীলংকার তামিল উগ্রবাদীদের নিকেশ করেছে, দখল করেনি। না, দখল করে রাষ্ট্র বাড়াব এই নীতিতে এই দেশ বিশ্বাস করেনি, করে না। বরং আশ্রয় দেয় সকলকে। "শকহুনদল পাঠান মোগল" এসেছিল। যায়নি। বরং উৎপাত করছে এদেরই বংশধরেরা। রবীন্দ্রনাথ যতই বলুন "এক দেহে হলো লীন" সবাই লীন হয়নি। হয়নি বলেই আজ কাশ্মীর সমস্যা। ইরানের পার্সিদের এই দেশই আশ্রয় দিয়েছে।
উদারচিত্ত মনস্বী কাজী আবদুল ওদুদ বলেছিলেন~ মুসলমানেরা "রাজসিক, হিন্দুরা সাত্ত্বিক"। হ্যাঁ এটাই সবচেয়ে বড় দার্শনিক পার্থক্য। এইদেশের মানুষ দেশকে তাই মায়ের মতন মনে করে। দেশ এখানে একটি ভাবসত্তা। ভারতমাতা। ইউরোপের সবজাতি মিলে "নেশন" নয়। ওই "নেশন" তো জোড়াতাপ্পি দেওয়া রাজনৈতিক আঁতাত। আমাদের দেশ ভাবনার চরম প্রকাশ ঘটেছে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের "বন্দে মাতরম" গানে। পুরো গানে। প্রথম সাত লাইনের খণ্ডিত রূপে পাবেন না সেটা। রবীন্দ্রনাথের "জনগণমন" সম্পূর্ণ গানেও একই ভাবের বিস্তার। তো, এই দেশের মানুষ দেশপ্রেমকে সত্ত্বগুণ দিয়ে অনুভব করে। তমঃ বা রজঃ দিয়ে নয়। "রণধারাবাহী জয়গান গাহি উন্মাদ কলরবে" নয়। তরোয়ালের, বন্দুকের ডগায় আমাদের দেশপ্রেম নয়। সেটা তো ওই উন্মাদরা বিশ্বাস করে~মৌলবাদী আর কমিউনিস্টরা।
•••
লেখকের নিজস্ব অভিমত
না, আমাদের দেশ রাজ্যবিস্তার পররাজ্যদখলের কালচারটি বহন করেনি। সেসব রাজতন্ত্রে ছিল। ভারত সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করেছে। কাল্পনিক হিন্দুরাজত্ব সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবেএমন কূটকল্পচিত্র কোনো হিন্দুস্থানি মানুষ কোনোকালেই দ্যাখেনি। আরে, পেটের ভেতর তো নেপাল, ভুটান রয়েছে। কই, ভারত তো দখল করেনি। নয়দিনে পাকিস্তানকে ঠান্ডা করে বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিল ভারত। কই, বাংলাদেশকে নিজের প্রদেশ বানায়নি। শ্রীলংকার তামিল উগ্রবাদীদের নিকেশ করেছে, দখল করেনি। না, দখল করে রাষ্ট্র বাড়াব এই নীতিতে এই দেশ বিশ্বাস করেনি, করে না। বরং আশ্রয় দেয় সকলকে। "শকহুনদল পাঠান মোগল" এসেছিল। যায়নি। বরং উৎপাত করছে এদেরই বংশধরেরা। রবীন্দ্রনাথ যতই বলুন "এক দেহে হলো লীন" সবাই লীন হয়নি। হয়নি বলেই আজ কাশ্মীর সমস্যা। ইরানের পার্সিদের এই দেশই আশ্রয় দিয়েছে।
উদারচিত্ত মনস্বী কাজী আবদুল ওদুদ বলেছিলেন~ মুসলমানেরা "রাজসিক, হিন্দুরা সাত্ত্বিক"। হ্যাঁ এটাই সবচেয়ে বড় দার্শনিক পার্থক্য। এইদেশের মানুষ দেশকে তাই মায়ের মতন মনে করে। দেশ এখানে একটি ভাবসত্তা। ভারতমাতা। ইউরোপের সবজাতি মিলে "নেশন" নয়। ওই "নেশন" তো জোড়াতাপ্পি দেওয়া রাজনৈতিক আঁতাত। আমাদের দেশ ভাবনার চরম প্রকাশ ঘটেছে ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের "বন্দে মাতরম" গানে। পুরো গানে। প্রথম সাত লাইনের খণ্ডিত রূপে পাবেন না সেটা। রবীন্দ্রনাথের "জনগণমন" সম্পূর্ণ গানেও একই ভাবের বিস্তার। তো, এই দেশের মানুষ দেশপ্রেমকে সত্ত্বগুণ দিয়ে অনুভব করে। তমঃ বা রজঃ দিয়ে নয়। "রণধারাবাহী জয়গান গাহি উন্মাদ কলরবে" নয়। তরোয়ালের, বন্দুকের ডগায় আমাদের দেশপ্রেম নয়। সেটা তো ওই উন্মাদরা বিশ্বাস করে~মৌলবাদী আর কমিউনিস্টরা।
•••
লেখকের নিজস্ব অভিমত
কোন মন্তব্য নেই