Header Ads

সোমবার থেকে সংস্কার, নইলে অনির্দিষ্টকালের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হবে পোয়ামারা-চোরাইবাড়ি জাতীয় সড়ক, হুঁশিয়ারি

করিমগঞ্জ (অসম), ২১ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : পূর্ত দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বিষ্ণুপ্রসাদ দাসের আশ্বাস যদি বাস্তবে পরিণত না-হয়, তা-হলে তাঁদের আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। জানিয়েছেন, নাগরিক অধিকার মঞ্চের সম্পাদক জয়নুল হক। তিনি বলেন, অসম-ত্রিপুরা ৮ নম্বর জাতীয় সড়ক দীর্ঘদিন ধরে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। করিমগঞ্জের পোয়ামারা থেকে চোরাইবাড়ি পর্যন্ত দীর্ঘ রাস্তায় বিশাল বিশাল গর্ত। ওই রাস্তায় যাতায়াতকারীরা প্রতিদিন যমদুয়ার দেখে আসেন। রাস্তা সংস্কারের দাবিতে বহু লেখালেখি হয়েছে, আবেদন-নিবেদন করা হয়েছে। এর পর লাগাতার আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছে। তবু সরকার কিংবা বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের টনক লড়ছে না।
তিনি জানান, গতকাল এই জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবিতে পাথারকান্দি ও নিলামবাজার কলেজের ছাত্ররা অনশন ধর্মঘট, সড়ক অবরোধের ডাক দিয়েছিল। এই কর্মসূচির ফলে নিলামবাজারের পরিবেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। অবরোধের ফলে জাতীয় সড়কের দু দিকে অসংখ্য গাড়িঘোড়া আটকে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বিষ্ণুপ্রসাদ দাস। তিনি এসে আন্দোলনকারীদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন, এই সড়ক সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে  অর্থ মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার‌ও হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় জনৈক ঠিকাদার কাজের বরাত পেয়েছেন। আগামী সোমবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে। জয়নুল হক বলেন, ইঞজিনিয়ারের কথা মতো ২৫ তারিখ থেকে সংস্কারের কাজ শুরু না হলে, তারা জাতীয় সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। আর এর সম্পূর্ণ দায়ভার বর্তাবে বিভাগীয় আধিকারিকদের উপর।
এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির পর আজ তাঁদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে নাগরিক অধিকার মঞ্চের সম্পাদক জয়নুল, নিলামবাজার ও পাথারকান্দি কলেজের ছাত্র ইকবাল হুসেন, ফয়জুল করিম খান, সন্তু ঘোষ, অনুপম দেবরা দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, প্রতিবারের মতো এবার‌ও যদি প্রতিশ্রুতি অসার বলে পরিণত হয়ে তা-হলে ভুক্তভোগী বৃহত্তর এলাকার জনসাধারণকে নিয়ে জোরদার আন্দোলনে ঝাঁপাবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পূর্ব নির্ধারিত কার্যক্রম অনুযায়ী গতকাল সকাল ১০টা থেকে নিলামবাজার ও পাথারকান্দি কলেজের ছাত্ররা নিলামবাজার সার্কল অফিসের
সামনে অনশন ধর্মঘটে বসেন। তাঁদের দাবি, পোয়ামারা থেকে চোরাইবাড়ি (অসমের অংশ) পর্যন্ত ৮ নম্বর জাতীয় সড়কের শীঘ্র সংস্কার করতে হবে। ছাত্রদের অনশন কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছিল স্থানীয় নাগরিক অধিকার মঞ্চ, মডেল এনজিও, বরাক অর্গানাইজেশন এনজিও-সহ বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন। এদিন বিকেল চারটে পর্যন্ত জেলা প্রশাসন এবং বিভাগীয় তরফ থেকে কোনও গুরুত্ব না পেয়ে আন্দোলনকারী ছাত্ররা আচমকা নিলামবাজার সার্কল অফিসের সামনে জাতীয় সড়কে অবরোধ গড়ে তুলেন। রাজ্যর সরকার মুর্দাবাদ, পূর্তমন্ত্রী মুর্দাবাদ, জেলা প্রশাসন মুর্দাবাদ, এনএইচ পূর্ত বিভাগ মুর্দাবাদ ইত্যাদি স্লোগানে আন্দোলনকারী কলেজ ছাত্ররা এলাকার পরিবেশ উত্তাল করে তুলেন। স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মকর্তারা ছাত্রদের আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে শামিল হ‌ওয়ায় প্রতিবাদী কর্মসূচি ব্যাপক রূপ ধারণ করে। নিলামবাজার ও পাথারকান্দি কলেজের ছাত্র সহ প্রায় পাঁচ শতাধিক স্থানীয় জনতা জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবিতে অবরোধে শামিল হন। আন্দোলনকারীদের তীব্র বিক্ষোভে নিলামবাজার বাজার এলাকার পরিবেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। পরে অবস্থা সামাল দিতে মোতায়েন করা হয় সিআরপিএফ। অতি ব্য স্ততম অসম-ত্রিপুরা ৮ নম্বর জাতীয় সড়কটি আচমকা অবরোধের ফলে সড়কের দুই পাশে শত শত লরি-সহ ছোট-বড় যাত্রীবাহী গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। জাতীয় সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এনএইচ পূর্ত বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বিষ্ণুপ্রসাদ দাস। বিভাগীয় কর্তা অবরোধস্থলে পৌঁছতেই তাঁকে আন্দোলনকারীদের চরম বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়। বিভাগীয় আধিকারিক গো ব্যাক, অকর্মণ্য এনএইচ পূর্ত বিভাগ মুর্দাবাদ স্লোগান দিয়ে এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে বিব্রত করে তোলা হয়। আন্দোলনকারীদের তুমুল বিক্ষোভে একসময় পরিস্থিতি প্রবল উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠলেও, কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিবেশ শান্ত হলে এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার বিষ্ণুপ্রসাদ দাস আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে বলেন, সড়ক সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যে  অর্থ মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে, ওয়ার্ক অর্ডার‌ও হয়ে গিয়েছে এবং এর বরাত পেয়েছেছেন স্থানীয় এক ঠিকাদার। আগামী সোমবার থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হয়ে যাবে।আন্দোলনকারীরা প্রতিবারের মতো এবার‌ও প্রতিশ্রুতিতে সন্তুষ্ট না হয়ে সড়ক অবরোধে অনড় থাকেন। তাঁদের একটাই দাবি, আমরা আর মিথ্যাত প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পড়তে চাই না। সংস্কারের কাজ এই মূহূর্ত থেকে শুরু করতে হবে। এই দাবি জানিয়ে বিভাগীয় আধিকারিকদের সামনে আন্দোলনকারীরা তাঁদের বিক্ষোভ প্রদর্শন আর‌ও জোরদার করে তুলেন। বিভাগীয় কার্যনির্বাহী অভিযন্তা বিষ্ণুপ্রসাদ দাস দফায় দফায় তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করে নিশ্চয়তা দেন যে, ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু হবেই। এর কোনও হেরফের হবে না।তবে আন্দোলনকারী কলেজ ছাত্র-সহ স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মকর্তারা নাকি পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন, কথা মতো ২৫ তারিখ থেকে
সংস্কার কাজ শুরু না হলে, তারা জাতীয় সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। আর এর সম্পূর্ণ দায়ভার বর্তাবে বিভাগীয় আধিকারিকদের উপর। শেষে বিভাগীয় তরফ থেকে আশ্বাস পেয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা পর সন্ধ্যাভ ছয়টা নাগাদ আন্দোলনকারীরা জাতীয় সড়ক অবরোধমুক্ত করলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সৌজন্য : হিন্দুস্থান সমাচার

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.