Header Ads

বিশ্বকবি বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির ধারক বাহক, সেই বাংলাকে অবহেলা করছে সরকারঃ কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ

২৬ দিন ব্যাপী বিধানসভা শেষ দিনে অসমিয়া ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে দিনভর আলোচনা


অমল গুপ্তঃ গুয়াহাটি, 
বিশ্বকবি রবীন্দ্ৰনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য দেশে সৰ্বপ্ৰথম নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির ধারক-বাহক হচ্ছেন কবিগুরু রবীন্দ্ৰনাথ ঠাকুর। সেই রবীন্দ্ৰনাথের জন্ম জয়ন্তীতে আগে অসমে শিক্ষা বৰ্ষে ছুটি দেওয়া হত। কিন্তু গত শিক্ষাবৰ্ষ থেকে ছুটি দেওয়া বন্ধ হয়েছে। মঙ্গলবার বিধানসভার অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰনাথ গোস্বামীর অভিনব কৰ্মসূচী ‘স্পিকারস ইনিসিয়েটিভ'-এর বিতৰ্কে অংশ গ্ৰহণ করে অসমের কলা সংস্কৃতি সংরক্ষণের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বরাকের কংগ্ৰেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ, কবিগুরু রবীন্দ্ৰনাথকে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতির পুরোধা বলে মন্তব্য করে বলেন, তাঁকে বাদ দেওয়ার অৰ্থ হচ্ছে বাংলা ভাষা-সংস্কৃতিকে অবজ্ঞা করা। আমরা চাইনা বিভিন্ন ভাষাভাষীর মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হোক। বরাকে নিজস্ব এক সংস্কৃতি রয়েছে। হিন্দু-মুসলিম উভয় জনগোষ্ঠীর নিজস্ব স্বকীয় বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰের মধ্যে ঐক্য সংহতির সেতু বন্ধন গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু গত দু'বছর থেকে দেখা যাচ্ছে বাঙালির সব থেকে বড় শারদীয় উৎসব দুৰ্গা পুজো এবং মহরমের সময় সরকারি ছুটি দেওয়া হচ্ছে না। এই ছুটি না দেওয়ার ফলে বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰের মধ্যে সম্প্ৰতি বিঘ্নিত হচ্ছে। বাংলা ভাষা আন্দোলনের জন্য বরাকের কয়েকজন যুবক-যুবতী আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। বরাকের ভাষা শহীদদের সরকার স্বীকৃতি দিলেও ভাষা শহীদদের নিকটাত্মীয়দের আৰ্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা সরকার ঘোষণা করেনি। শিলচর রেলওয়ে ষ্টেশনকে ভাষা শহীদ ষ্টেশন হিসাবে ঘোষণা করার জন্য বরাকে বহু আন্দোলন হয়েছে। কেন্দ্ৰীয় সরকারও ত্ৰিভাষা সূত্ৰ মেনে শেষ পৰ্যন্ত তা মেনেও নিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কোনও সদিচ্ছা লক্ষ্য করা যায়নি। মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়াল সব সময় বরাক-ব্ৰহ্মপুত্ৰ, পাহাড় সমতলের সম্প্ৰীতির কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবে সম্প্ৰীতির অভাব ঘটছে। ১৮৫৭ সালে ভারতবৰ্ষে মধ্যে সৰ্বপ্ৰথম বরাক উপত্যকায় লাতু মালেগড়ে সিপাই বিদ্ৰোহ হয়েছিল। ব্ৰিটিশদের সঙ্গে যুদ্ধ করে ভারতীয় স্বাধীনতা যোদ্ধারা মালেগড় দখল করেছিলেন। তার ফলে ২৬ জন শহীদ হন। সেই শহীদদের স্মৃতি রক্ষাৰ্থে রাজ্য সরকার মাত্ৰ ৫০ লক্ষ টাকা আৰ্থিক বরাদ্দের কথা ঘোষণা করেছে। তার পরিমাণ খুবই কম। উত্তর করিমগঞ্জের কংগ্ৰেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ জানান, স্বাধীনতা আন্দোলনকারিদের তরোয়াল, বন্দুক ইত্যাদি এখনও এক ব্যক্তির কাছে গচ্ছিত রয়েছে। তা সরকারিভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্ৰুয়ারি বাংলাদেশের ঢাকায় বাংলাভাষা রক্ষার জন্য আন্দোলন করে বরকত, সেলিমরা প্ৰাণ দিয়েছিলেন। সেই বাংলা ভাষার প্ৰতি অবহেলা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অসম সরকার গত ২১ ফেব্ৰুয়ারি ‘আন্তৰ্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'এ এক বৃক্ষের ছবিতে ৪৮ টি ভাষার নাম সন্নিবিষ্ট করেছে। কিন্তু সেখানে বাংলা ভাষার কথা উল্লেখই করা হয় নি। ধুতি-পাঞ্জাবি পরে বাঙালি বাবু সেজে কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ ভাষণের শেষে অতুল প্ৰসাদ সেনের বিখ্যাত গানটি– বল বল বল সবে শত বীনা বেনু রবে.....ভারত আবার জগত সভায় শ্ৰেষ্ঠ আসন লবে ......গেয়ে শোনান।
 অসমিয়া ভাষা সংস্কৃতি সংরক্ষণের ওপর বিতৰ্কে অংশগ্ৰহণ করে কংগ্ৰেসের আব্দুল খালেক শ্ৰীমন্ত শংকরদেব, আজান ফকির প্ৰমুখ প্ৰাতঃস্মরণীদের শিল্প কলা সংরক্ষণের ওপর জোর দেন। বলেন, শংকরদেব অসমে নাট্য আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন। বরপেটাকে দ্বিতীয় সত্ৰ নগরী হিসাবে ঘোষণার দাবি জানান। শান্তি সম্প্ৰীতির দূত আজান ফকিরের এক স্মারক ক্ষেত্ৰ গুয়াহাটিতে গড়ে তোলার দাবি জানান। অসমিয়া সিনেমার দূরবস্থার কথা তুলে ধরে বলেন, অসমিয়া শিল্পীদের অবস্থা খুব করুণ। জ্যোতি চিত্ৰবন উন্নয়ন বরাদ্দের দাবি জানান। অসমিয়া ভাষা সংস্কৃতির সঙ্গে অন্যান্য ভাষা সংস্কৃতির সমন্বয়ের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের সাংস্কৃতিক আদান প্ৰদানের কথাও বলেন। তিনি বলেন, তাদের কলগাছিয়াতেও বিহু উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভ্ৰাম্যমান থিয়েটারের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভ্ৰাম্যমান শিল্পীদের অবস্থা বড় শোচনীয়। এআইইউডিএফ-র আমিনুল ইসলাম বলেন, ধৰ্মীয় মোড়কে অসমিয়া সংস্কৃতিকে মুড়ে দেওয়ার চেষ্টা হলে অসমিয়া সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে পড়বে। বিজেপির আঙুরলতা ডেকা শংকরদেবের বটদ্ৰবা উন্নয়নে রাজ্য সরকার ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করায় গভীর সন্তোষ প্ৰকাশ করে বলেন, আগে আমরা স্বপ্ন দেখতেও ভয় পেতাম, এখন সরকার সব শিল্পী সংস্কৃতি উন্নয়নে যথাসাধ্য করছে। জ্যোতি চিত্ৰবনকে শক্তিশালী হিসাবে গড়ে তোলার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি রাজ্যে ২৯টি ভ্ৰাম্যমান থিয়েটারের কথা উল্লেখ করে বলেন, সে নিজেও এই থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন, প্ৰায় ১৬-১৭ শো শিল্পী আছেন। তাদের আৰ্থিক দূরবস্থা মোচনের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের জীবন বীমার ব্যবস্থা করে দিতে হবে সরকারকে। শ্ৰীমন্ত শংকরদেবের বৃন্দাবনী বস্ত্ৰের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিদেশের মাটি থেকে এই বৃন্দাবনী বস্ত্ৰকে অসমে আনতে হবে। যা স্বচক্ষে দেখে আমরা ধন্য হতে পারি। বিজেপির রনোজ পেগু বলেন, নৃতত্ত্ববিদরা বলেছেন, উত্তরপূবাঞ্চল মানব জাতির এক বৰ্ণময় উপহার। তাই এ অঞ্চলে মানব সংগ্ৰাহালয় স্থাপন করতে হবে। অগপ-র গুণীন্দ্ৰ নাথ বরপেটায় এক সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় স্থাপনের দাবি জানান। তিনি বরপেটা নাট্যমন্দিরের শোচনীয় পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। অগপ-র বৃন্দাবন গোস্বামী অসমে এক সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, প্ৰতিটি নামঘরকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে হবে। প্ৰতিটি নামঘরে ২৫ বছরের কম  যুবকদের নিয়ে গায়ন বায়নের দল প্ৰস্তুত করতে হবে। তিনি ভুপেন হাজরিকার স্বপ্ন তাঁর নামে যে কেন্দ্ৰ গড়ে তোলা হচ্ছে তা জলাজমি বলে আপত্তি এসেছে। তবে তা অবিলম্বে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। অগপ-র সত্যব্ৰত কলিতা বলেন, অসমে ‘কালীয়া', ‘উজাপালী', ‘শুকনানী' প্ৰভৃতি শিল্পীদের দূরাবস্থার কথা তুলে ধরেন। রাজ্যে সিনেমা হলগুলির সংস্কারের জন্য ২৫ লক্ষ টাকা এবং সিনেমা হল স্থাপনের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছিল কিন্তু এখনও তা ঘোষণা হয়েই থেকে গেছে। তিনি সরকারী নিয়ন্ত্ৰিত টিভি চ্যানাল স্থাপনের দাবি জানান। বিজেপি বিধায়ক রূপক শৰ্মা অপেশাদারী নাট্যগোষ্ঠীর জন্য সরকারী পৰ্যায়ে মঞ্চ নিৰ্মাণ করার দাবি জানান, যাতে কম পয়সায় নাটক মঞ্চস্থ করতে পারে। বিপিএফ-র কমল সিং নাৰ্জারি বাথৌ সংস্কৃতি বোড়ো সমাজের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। কোকরাঝাড় এবং যোরহাটে দুটি সঙ্গীত কলেজ আছে তা প্ৰাদেশিকীকরণ করতে হবে। গুরুদেব কালীচরণ ব্ৰহ্মের নামে কাজী গাঁওয়ে এক আবক্ষ মুৰ্তি স্থাপনের দাবি জানান। বিজেপির সুমন হরিপ্ৰিয়া ‘হেরিটেজ টুরিজম' প্ৰসারের ওপর জোর দেন। তিনি গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাই আহোম ভাষা কেন্দ্ৰ স্থাপনের দাবি জানান। কংগ্ৰেসের অজন্তা নেওগ অপেশাদার নাট্যগোষ্ঠীর নাট্যকৰ্মীদের আৰ্থিক সাহায্য বৃদ্ধির দাবি জানান। বিজেপির বীরভদ্ৰ হাগজের ডিমা হাসাও জেলায় নবপ্ৰস্ত যুগের ঐতিহাসিক সম্পদগুলি সংরক্ষণের দাবি জানান। বিজেপি বিধায়ক ক্ৰমে গুরুজ্যোতি দাস, গণেশ লিম্বু, মানসিং রংপী, বিনন্দ শইকিয়া, অশোক শৰ্মা, পল্লব লোচন দাস এবং নিৰ্দল ভূবন পেগু প্ৰমুখ অংশগ্ৰহণ করেন। সাংস্কৃতিক পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী নব দলে বলেন, প্ৰত্যেকের পরামৰ্শ তারা শুনেছেন। তা নোট করা হয়েছে । ৯০ দিনের মধ্যে পরামৰ্শগুলি নিয়ে এক প্ৰতিবেদন দাখিল করবেন। অধ্যক্ষ হিতেন্দ্ৰ নাথ গোস্বামী এদিনের আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্ৰসূ হয়েছে বলে মন্তব্য করে সবার সহযোগিতা পাওয়ায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, বিধানসভার সদস্যদের দাবি মেনে সুরা ট্ৰ্যাজেডির ঘটনাস্থল গোলাঘাট এবং যোরহাটে আগামী ২৮ ফেব্ৰুয়ারি এক সৰ্বদলীয় প্ৰতিনিধি দল যাবে বলে সদনকে জানান। ২৬ দিন ব্যাপী বিধানসভা শেষ দিনে সংসদীয় পরিক্ৰমা মন্ত্ৰী চন্দ্ৰমোহন পাটোয়ারি অরুণাচল প্ৰদেশের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে কোনও অসমিয়া মানুষকে আক্ৰমণের ঘটনা সরকারের নজরে নেই। এদিন বিধানসভায় ‘ দি আসাম কো-অপারেটিভ সোসাইটি (এ্যমেণ্ডমেণ্ট) বিল, ২০১৯, ‘দি আসাম টি প্লেনটেশ্যনস প্ৰ'ভিডেণ্ট ফাণ্ড এণ্ড পেন্সন ফাণ্ড ডিপোজিট লিঙ্কড ইন্সিওরেন্স ফাণ্ড স্কিম (এ্যমেণ্ডমেণ্ট) বিল, ২০১৯ পেশ করা হয়।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.