Header Ads

২৩ জানুয়ারি নেতাজী সুভাষ চন্দ্ৰ বোসের জন্ম দিন অসমে বিভিন্ন কৰ্মসূচী, আন্দামানে বাঙালি বিপ্লবীরা অবহেলিত

গুয়াহাটিঃ আগামী ২৩ জানুয়ারি নেতজী সুভাষচন্দ্ৰ বোস ১২২তম জন্ম জয়ন্তি উদযাপন করা হবে সারা দেশে। প্ৰধানমন্ত্ৰী নরেন্দ্ৰ মোদি আন্দামানের রাজধানী পোৰ্ট ব্লেয়ারকে বাদ দিয়ে অন্য দ্বীপকে নেতাজী সুভাষ দ্বীপ হিসাবে ঘোষণা করেছেন। এই দিনটিকে দেশপ্ৰেম দিবস হিসাবে ঘোষণা করার জন্য ফরওয়াৰ্ড ব্লকের সম্পাদক প্ৰধান দেবব্ৰত বিশ্বাস দাবি করেছেন। গুয়াহাটির ব্যতিক্ৰম মাসডোর উদ্যোগে নেতাজী জয়ন্তি উপলক্ষে প্ৰদান বক্তা হিসাবে গুয়াহাটিতে উপস্থিত থাকবেন নেতাজীর ভাইপো চন্দ্ৰ কুমার বোস। কলকাতা থেকে এক বহুল প্ৰচারিত সংবাদ পত্ৰে ‘সম্পাদক সমীপেষু' শীৰ্ষক কলমে ১৭  জানুয়ারি, ২০১৯, কলকাতা ১ ঠিকানা থেকে অনুপ দাশগুপ্ত এক চিঠি লিখেছেন, তা হুবহু তুলে দেওয়া হল। এই চিঠিতে বাঙালি বিপ্লবীদের প্ৰতি আন্দামানের ঐতিহাসিক সেলুলার জেল কর্তৃপক্ষের বঞ্চনা অবহেলা তুলে ধরা হয়েছে। আন্দামানের সেলুলার জেলের পরিবেশিত তথ্যানুযায়ী পঞ্জাবের মোট ১০১ জন এবং বাংলার মোট ৪০৬ জন বন্দির নাম পাওয়া যায়। আমার লেখা ‘সেলুলার জেলে নিৰ্বাসিত বিপ্লবীদের কথা' গ্ৰন্থখানিতে এই তালিকা বিস্তারিত ভাবে দেওয়া আছে। সাভারকর (ছবিতে) ফ্ৰান্স পুলিশ কর্তৃক ধৃত হওয়ার পর যখন তাঁকে ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে ইংল্যাণ্ডে আনা হচ্ছিল, ইংলিশ চ্যানেলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে আবার ফ্ৰান্সে ফিরে যান। ব্ৰিটিশ সরকার ফ্ৰান্স কর্তৃপক্ষের সহায়তায় সাভারকরকে বন্দি করে ইংল্যাণ্ডে এবং পরে ভারতে নিয়ে এসে সেলুলার জেলে নিৰ্বাসন দেয়। ১৯০৯ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্ৰাপ্ত সৰ্দার গুরমুখ সিংহকে ১৯২২ সালে যখন সেলুলার জেলে থেকে মুক্ত করে প্ৰহরীবেষ্টিত অবস্থায়পাঞ্জাবের জেলে পাঠানো হচ্ছিল, তিনি পালিয়ে আফগানিস্তান হয়ে রাশিয়ায় চলে যান। পরবৰ্তী কালে সৰ্দার ভগৎ সিংহের সঙ্গে দ্বিতীয় লাহোর ষড়যন্ত্ৰ মামলায় (স্যাণ্ডারস হত্যা মামলা) অভিযুক্ত হয়ে আবার সেলুলার জেলে নিৰ্বাসিত হন এবং ১৯৩৭-৩৮ সালে মুক্তি পান। দীৰ্ঘ আত্মগোপন কালে ব্ৰিটিশ পুলিশের পক্ষে তাঁকে ধরা সম্ভব হয় নি। গদর পাৰ্টির প্ৰতিষ্ঠাতা, ২০১৯ সালে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেলুলার জেলে বন্দি পাঠানো বন্ধ হলে তাঁকে মাতৃভূমির জেলে ফেরত আনার ব্যবস্থা করার সময়, তিনি প্ৰহরীবেষ্টিত অবস্থায় ট্ৰেন থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান এবং ১৬ বছর আত্মগোপন করে থাকেন। বিপ্লবী শচীন সান্যাল বারাণসী যড়ষন্ত্ৰ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ১৯০৯ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডেদণ্ডিত হয়ে সেলুলার জেলে নিৰ্বাসিত হন। ১৯২১-এ তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে ১৯২৬ সালে কাকোরি রেল ডাকাতি মামলা অভিযুক্ত হয়ে তিনি সেলুলার জেলে পুনঃনিৰ্বাসিত হন এবং ১৯৩৭ সালে মুক্তি পান। বিপ্লবী নিখিল রঞ্জন গুহরায় শিবপুর ষড়যন্ত্ৰ মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ১৯০৯-এ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে সেলুলার জেলে নিৰ্বাসিত হন। ১৯২১ সালে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। পরে মুৰ্শিদাবাদ কান্দি বোমা মামলায় অভিযুক্ত হয়ে ১৯৩৩-এ তাঁকে আবার সেলুলার জেলে পাঠানো হয় এবং ১৯৩৭ সালে মাতৃভূমিতে ফেরত এনে কারারুদ্ধ করা হয়। ত্ৰৈলোক্য মহারাজ (চক্ৰবৰ্তী) সেলুলার জেলে ১০ বছরের সাজা নিয়ে বন্দি হওয়ার পরে ছাড়া পেলেও পাক-ভারতের বিভিন্ন জেলে তাঁর বন্দি জীবন প্ৰায় ৩০ বছর। যদি কোনও বন্দিকে বীর বলতে হয়, তাহলে অবশ্যেই উপরুক্ত সকলকেই বীর আখ্যা দেওয়া উচিত। যাবজ্জীবন কারাবাসের কথা বারবার উল্লেখ করে সাভারকরকে উচ্চাসনে বসানো হয়েছে। কিন্তু সেলুলার জেলে নিৰ্বাসিত প্ৰায় ২০০ জন বিপ্লবী যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত ছিলেন। অবশ্য কাউকেই এত দিন জেলে থাকতে হয়নি। যেমন, ১৯০৯ সালে যাঁদের সেলুলার জেলে নিৰ্বাসিত করা হয়েছিল, তাঁরা তৎকালীন সরকার সেলুলার জেলে নিৰ্বাসন বন্ধ করায় ১৯২১ সালে মুক্তি পান। আবার, ১৯৩২-এ যে বিপ্লবীদের সেলুলার জেলে নিৰ্বাসিত করা হয়েছিল, তাঁরা তৎকালীন সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৩৭-৩৮ সালে মুক্তি পেয়ে যান। তাই এই কৃতিত্বের দাবিদার প্ৰায় ২০০ জন, কিন্তু সেলুলার জেলে প্ৰদৰ্শিত ‘আলো এবং ধ্বনি' অনুষ্ঠানে এঁদের কারও উল্লেখ নেই। ১৯৩৩ সালের ঐতিহাসিক অনশন ধৰ্মঘটে (৪৫ দিন) জোর করে দুধ খাওয়ানোর কারণে তিন জন বিপ্লবী শ্বাসনালীতে দুধ প্ৰবেশ করায় শহিদ হন। দুঃখের বিষয়, ‘আলো এবং ধ্বনি' অনুষ্ঠানে মহাবীর সিংহের নাম উল্লিখিত থাকলেও, বাংলার দুই বীর মোহিত মৈত্ৰ এবং মনোকৃষ্ণ নমোদাস-এর উল্লেখ নেই। স্বাধীনতার ৫০ তম বৰ্ষে সেলুলার জেলের অত্যাচারে নিহত ছ'জন শহিদের আবক্ষ মৰ্মরমূৰ্তি উন্মোচন করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্ৰপতি মাননীয় কে আর নারায়ণন। আন্দামান নিৰ্বাসিত রাজনৈতিক বন্দি মৈত্ৰী চক্ৰের তৎকালীন সম্পাদক বিপ্লবী জ্যোতিষচন্দ্ৰ মজুমাদার তাঁর ভাষণে ওই পাৰ্ককে ‘শহিদ পাৰ্ক' হিসাবে নামকরণ করেন। কিন্তু কে বা কারা পরে ওই পাৰ্কের নাম পরিবৰ্তন করে ‘সাভারকর পাৰ্ক' সাইনবোৰ্ড লাগিয়ে দিয়েছেন। সেলুলার জেলকে ধ্বংস করে স্বাধীন ভারত সরকার গোবিন্দ বল্লভ পন্থ হাসপাতাল নিৰ্মাণে ব্ৰতী হয়। চারটি উইং ভেঙেও ফেলা হয়। আন্দামান নিৰ্বাসিত রাজনৈতিক বন্দি মৈত্ৰী চক্ৰের বিপ্লবীগণ এর বিরুদ্ধে সরব হন এবং দীৰ্ঘ ১৩ বছর আন্দোলন করে অবশিষ্ট তিনটি উইং ও সেণ্ট্ৰাল টাওয়ার রক্ষা করে সেলুলার জেলকে জাতীয় স্মারক হিসেবে চিহিত করান। এই ঘটনার স্বীকৃতি হিসেবে সেলুরার জেলে ঢোকার মুখে একটি স্বীকৃতিস্তম্ভের প্ৰস্তাব দেওয়া হয়েছিল এবং তা গৃহীতও হয়েছিল, কিন্তু আজ পৰ্যন্ত সেটা হয়ে ওঠেনি। বরঞ্চ তার জায়গায় সাভারকরের উদ্দেশে অমরজ্যোতি স্তম্ভ স্থাপিত হয়েছে। বিপ্লবী বারীন্দ্ৰ কুমার ঘোষ ও পুলিন বিহারি দাসের আবক্ষ মৰ্মরমূৰ্তি পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০০৬ সালের ২০ মাৰ্চ আন্দামান কর্তৃপক্ষকে প্ৰদান করেন। আজ পৰ্যন্ত সেই মূৰ্তি দু'টি স্থাপন তো দূরের কথা, বক্সবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তই হয়নি। এই ভাবে বিকৃত তথ্যোর মাধ্যমে অন্যান্য বীর বন্দিদের তাচ্ছিল্য করে এক জনকে বীর বানানো হয়েছে এবং আন্দামানের এয়ারপোৰ্টকে ‘বীর সাভারকর এয়ারপোৰ্ট' নামকরণ করা হয়েছে। যদিও এই সমস্ত কিছু বৰ্তমান সরকারের আমলে হয়নি, বরঞ্চ অনেক কিছুই পূৰ্ববতী সরকারগুলির আমলে হয়েছে, তাই এই লেখা কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, কেবল ঐতিহাসিক সত্যের স্বাৰ্থে। 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.