Header Ads

সকলকে একজোট হয়ে দিল্লিতে বদল আনার আহ্বান তৃণমূল সুপ্ৰিমো মমতার

নয়া ঠাহর প্ৰতিবেদন, কলকাতাঃ ব্রিগেডে ইউনাইটেড ইন্ডিয়া সমাবেশে শনিবার জড়ো হন সারা দেশের বিজেপি বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা, তামিলনাড়ুর ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন, অরুণ শৌরি, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা নেতা হেমন্ত সোরেন। এ ছাড়াও ব্রিগেড সমাবেশে ছিলেন- এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার, কংগ্রেস প্রতিনিধি অভিষেক মনু সিংভি, বহুজন সমাজ পার্টির প্রতিনিধি সতীশ মিশ্র, ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা, সমাজবাদী পার্টি নেতা এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব এবং দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া, আপ নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল সহ আরও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এদিনের সমাবেশে উপস্থিত সব রাজনৈতিক দলের নেতা প্ৰতিনিধিদের বক্তব্যের শেষে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্ৰী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘লড়াই করে দিল্লিতে বদল আনতে হবে। আগামী দিনে বলতে হবে মোদি সরকারের এক্সপায়ারি ডেট হয়েছে।’’ প্ৰধানমন্ত্ৰীকে তীব্ৰ কটাক্ষ করেন তৃণমূল চেয়ারপাৰ্সন। বাংলার মাটি পবিত্ৰ মাটি। সাহিত্যিক, শিল্পী নাট্যকার বাংলার মাটি স্বাধীনতার আন্দোলনে পথ দেখিয়েছে। ভারতবৰ্ষে যখনই কোনও বিপদ এসেছে বাংলার মাটি পথ দেখিয়েছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্ৰী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কথা উল্লেখ করে বলেন- ৭০ বছরে পাকিস্তান যা করতে পারেনি মোদী সরকার ৫ বছরে তা করে দিয়েছে। প্ৰসঙ্গক্ৰমে আরও বলেন- বাজারে লেগেছে আগুন, জাগুন বাংলা জাগুন। ব্যাংক, সিবাই, ট্যাক্স চারদিকে কেবল ধস, শুধু বিজেপি বস! তা কখনও হতে পারে না। ২৩ থেকে ২৪টি দল এসেছে সমাবেশে। মোদিকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন- চাষীর খাজনা মেটাচ্ছি আমরা, বিমা করে দেওয়া হয়েছে আর মোদি বাবুরা ছবি বিলোচ্ছেন। যেন উনি একা সৎ, বাকিরা অসৎ। আপনি কাউকে ছাড়েননি, আপনাকে কেন ছাড়বো। এভাবেই এদিন মোদি সরকারকে তোপ দাগেন তিনি। অসমের প্ৰসঙ্গ টেনে তিনি বলেন-  অসমে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল করে চলছে অত্যাচার। দেশের প্ৰয়োজনে সবাইকে একজোট হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। অরুণাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গেগং আপাং সমাবেশের মঞ্চে বলেন- সমাবেশে সারা দেশের রত্নরা একজোট হয়েছেন। সবাইকে একজোট হয়ে মোদীর অপশাসন শেষ করতে হবে। মিজোরামের জোরাম ন্যাশনালিস্ট পাৰ্টির নেতা তথা বিরোধী নেতা লালডুহোমা বলেন- বৰ্তমানে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে সারা দেশ জ্বলছে। এই বিল পাস হলে ভারতে বসবাসযোগ্য পরিস্থিতি থাকবে না। ১৯-এ ধৰ্ম নিরপেক্ষ সরকার হবে। সাম্প্ৰদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। বিজেপিকে হঠাতে আগামী লোকসভা নির্বাচনে সবাই একজোট হয়ে লড়তে হবে, মন্তব্য করেন এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার। আমাদের জোট মানুষের সঙ্গে সেখানে মোদী-অমিত শাহের জোট এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং সিবিআইয়ের সঙ্গে। ব্রিগেডের সভায় এই মন্তব্য করেন সমাজবাদী পার্টি নেতা এবং উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব। কেন্দ্রের থেকে অনেক ভাল কাজ করেছে পশ্চিমবঙ্গ এবং অন্ধ্রপ্রদেশ, ব্রিগেডের সভায় এই মন্তব্য করলেন তেলগু দেশম নেতা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু। ঘৃণামিশ্রিত অপরাধে মদত দেওয়ার অভিযোগে বিজেপিকে দুষলেন চন্দ্রবাবু। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কারচুপির অভিযোগ করেন চন্দ্রবাবু নাইডু। তিনি আরও বলেন- ২০১৯-এ নতুন প্রধানমন্ত্রী দেখবে ভারত। আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল সমাবেশের মঞ্চে বলেছেন- ৭০ বছরে পাকিস্তান যেই ক্ষতি করতে পারেনি, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি তাই করে দেখিয়েছে। জেডিএস নেতা তথা কৰ্নাটকের মুখ্যমন্ত্ৰী এইচ ডি কুমারস্বামী বিজেপিকে কাগুজে বাঘ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এদিনের ব্রিগেড সমাবেশে নরেন্দ্র মোদীর তীব্র সমালোচনা করেছেন ডিএমকে নেতা স্ট্যালিন। বলেছেন- কালো টাকা নিয়ে দেশের মানুষের সঙ্গে মিথ্যাচার করেছেন নরেন্দ্র মোদি। কালো টাকা উদ্ধার করে দেশের সব নাগরিককে ১৫ লক্ষ করে টাকা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কোথায় গেল সেই ১৫ লক্ষ টাকা, প্ৰশ্ন তোলেন তিনি। মমতাদিকে ভয় পান নরেন্দ্র মোদি। অমিত শাহ-ও বাংলায় পা দিতে ভয় পান, কারণ তিনি জানেন এখানে মমতাদি আছেন। ১৯-এর লোকসভা নিৰ্বাচনকে তিনি দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্ৰাম বলে আখ্যা দিয়েছেন। বহুজন সমাজ পার্টির নেতা সতীশ মিশ্র বলেন-এনডিএ সরকারকে আর সহ্য করা যাচ্ছে না, এদের দ্রুত সরাতে হবে। জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ফারুক আবদুল্লা বলেছেন - দেশের ধর্মের নামে বিভাজন চলছে, আসল রামের সঙ্গে ‘মহব্বত’ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী কে হবে তা পরে ঠিক করা যাবে। সবার আগে সব নেতাদের একজোট হতে হবে। এদিনের বিগ্ৰেড সমাবেশে অসম থেকে অগপ-র প্ৰাক্তন মুখ্যমন্ত্ৰী প্ৰফুল্ল কুমার মহন্ত এবং এআইইউডিএফ-এর সভাপতি বদরুদ্দিন আজমলও উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সমাবেশ শুরু হয় গানের মধ্যে দিয়েই। সমাবেশ শেষ হয় জাতীয় সংগীত ‘জন গণ মন’ গানটি  দিয়ে। সকাল এগারোটা নাগাদ মঞ্চে ছিলেন সংগীত শিল্পী কবীর সুমন, নচিকেতা, ইন্দ্ৰনীল, সৌমিত্র। গান দিয়েই শুরু হয় এদিনের ব্রিগেড সমাবেশ। এদিন সকাল ১০ টা থেকেই ব্ৰিগেড প্যারেড গ্ৰাউন্ডে সমৰ্থকদের ঢুকে যেতে অনুরোধ জানানো হয় দলের পক্ষ থেকে। তাই সকাল সকাল পশ্চিমবঙ্গের নানা প্ৰান্ত থেকে দলর কৰ্মী সমৰ্থকরা একে একে সমাবেশে জড়ো হতে শুরু করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা কৰ্মী সমৰ্থকরা শুক্ৰবার রাতেই কলকাতা পৌঁছে যান। এদিনের সমাবেশকে ঘিরে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। ব্রিগেডের আশপাশে থাকা সমস্ত বহুতল থেকে নজর রাখে কম্যান্ডো বাহিনী। মিছিল, যান চলাচল কোন পথে হবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়। মিছিলে আসা গাড়ি রাখার জন্য ইডেন, বাবুঘাট, হেস্টিংস-এর আশপাশে পার্কিংয়ের বন্দোবস্ত করা হয়। এদিনের বিশাল এই জনসভার পর এবারে মোদি সরকারের পাল্টা রাজনৈতিক জবাব কি হয় স্বাভাবিকভাবেই সেদিকেই নজর রয়েছে সবার।  

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.