Header Ads

তিনসুকিয়া হত্যাকাণ্ডের জেরে অসম বনধের মিশ্ৰ প্ৰভাব গোটা রাজ্যে, কিছু কিছু জায়গায় বিক্ষিপ্ত ঘটনা


নয়াঠাহর প্ৰতিবেদন, গুয়াহাটিঃ তিনসুকিয়ায় নরহত্যার প্ৰতিবাদে সারা অসম বাঙালি যুব ছাত্ৰ ফেডারেশনের ডাকা শনিবার অসম বনধের মিশ্ৰ প্ৰভাব পড়েছে গোটা রাজ্যে। বরাক উপত্যকা শিলচর-করিমগঞ্জে বনধের সৰ্বাত্মক প্ৰভাব পড়েছে। বরাকে শাসক দল বিজেপি, কংগ্ৰেস এবং এআইইউডিএফ এদিনের বনধকে সমৰ্থন করেছে। তবে বরাকের মতো ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকায় বনধের প্ৰভাব ততোটা দেখা যায়নি। বিজেপি নেতা রূপম গোস্বামী এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেছেন, এই বনধে তাঁর সমৰ্থন নেই। ব্ৰহ্মপুত্ৰ উপত্যকার বাঙালি অধ্যুষিত এলাকা গুয়াহাটির কালাপাহাড়, লালগণেশ, মালিগাঁও এলাকায় বনধের প্ৰভাব পড়েছে। এইসব এলাকায় এদিন  সকাল থেকেই দোকানপাট, বাজারহাট সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। স্কুল কলেজ অফিস সব বন্ধ ছিল। মহানগরের বাকী এলাকাগুলিতে বন্ধের মিশ্র প্ৰভাব দেখা গেছে। সরকারি বেসরকারী বাস চললেও বেসারকারী বাসের সংখ্যা কম ছিল। ফলে বাসস্ট্যান্ডে লোকের ভিড় ছিল চোখে পরার মতো। সামাগুড়ি, দলগাঁও, ডিব্ৰুগড়, হোজাই, ধুবড়ি, গৌরীপুর এই সব এলাকায় বনধের প্ৰভাব পড়েছে। শ্ৰীরামপুর এলাকায় বনধের ফলে শতাধিক গাড়ি আটকে পড়েছে। ওদালগুড়িতে টায়ার জ্বালিয়ে বনধের সমৰ্থনে প্ৰতিবাদ করা হয়েছে। লামডিং-এ রেলপথ অবরোধ করেন বনধের সমৰ্থকরা। প্ৰরোচনামূলক মন্তব্য করে রাজ্যে অশান্তি সৃষ্টি করার অভিযোগে কংগ্ৰেস বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ এবং এআইইউডিএফ-এর সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাসকে আটক করেছে পুলিস। এছাড়াও আরও বহু বিজেপি সমৰ্থককে এদিন আটক করেছে পুলিস। তিনসুকিয়ায় নরহত্যার ঘটনার আগে হোজাইয়ের বিধায়ক শিলাদিত্যকে উস্কানিমূলক মন্তব্যের জন্য তাঁকে গ্ৰেফতারের দাবি জানিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানীয় দল সংগঠন। তাঁর বিরুদ্ধে দিসপুর থানায় এজাহার দাখিল করেছেন বিভিন্ন জন। শুধু শিলাদিত্যই নন, প্ৰদীপ দত্ত রায়, কমলাক্ষ্য দে পুরকায়স্থ, চন্দন সরকার এবং শ্যামল সরকারের বিরুদ্ধে দিসপুর থানায় এজাহার দাখিল করেছে অসমের দুৰ্নীতি বিরোধী যুব শক্তি। প্ৰরোচনামূলক মন্তব্যের অভিযোগে শনিবার কোকরাঝাড় থানায় আত্ম সমৰ্পণ করেন সুজিত সরকার নামে এক ব্যক্তি। এদিকে বাংলাভাষীদের তিরিশটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চের আহ্বায়ক সুকুমার বিশ্বাসকেও গ্ৰেফতারের দাবি উঠেছে। এদিন বনধের বিরুদ্ধে ডিব্ৰুগড়ে প্ৰতিবাদে সরব হয় একাংশ জনতা। তাঁরা প্ৰাক্তন আলফা নেতা মৃণাল হাজরিকা এবং জিতেন দত্তকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান। ৩৬ টি বাঙালি সংগঠনের ডাকা ২৪ ঘন্টা বনধে পরে ১২ ঘন্টায় হ্ৰাস করা হয়। এদিকে শিবসাগর সহ কিছু কিছু জায়গায় বনধের বিরুদ্ধে মানুষকে প্ৰতিবাদ করতে দেখা গেছে। এদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে তিনসুকিয়ায় নরহত্যার ঘটনার পর শুক্ৰবার রাত ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থল খেরবাড়িতে নিহত ওই পাঁচ বাঙালির চিতা পর পর একসঙ্গে জ্বলে। সে সময় হাতে গোনা কয়েকজন পুলিস কৰ্মী ছাড়া আর কোনও সরকারি নেতাদের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তবে শনিবার সকালে রাজ্যের তিন মন্ত্ৰী কেশব মহন্ত, তপন গগৈ এবং পরিমল শুক্লবৈদ্য নিহতের পরিবার এবং সংবাদ মাধ্যমে দুটো কথা বলে চলে গেছেন। এমনটাই অভিযোগ উঠেছে। তিনসুকিয়ায় হত্যাকাণ্ডের পর খেরবাড়ি এলাকায় কেন্দ্ৰের তরফে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। আততায়ীদের খোঁজে জোর তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। শুধু তাই নয়, কেন্দ্ৰীয় সরকারের স্বরাষ্ট্ৰ মন্ত্ৰক তিনসুকিয়া হত্যাকাণ্ডের তদন্ত এআইএ-র হাতে দিয়েছে। নিহতের পরিবারকে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এদিকে, শনিবার আলফার লিংকম্যান জিন্টু গগৈকে গ্ৰেফতার করেছে পুলিস। পুলিস অফিসার ভাস্কর কলিতার হত্যাকাণ্ডে জড়িত জিন্টু এর আগে বহুদিন জেল খেটে এসেছে। এসব ঘটনার প্ৰেক্ষিতে শনিবার রাজ্যের ছাত্ৰ সংগঠন আসু অভিযোগ করেছে, রাজধৰ্ম পালনে ব্যৰ্থ হয়েছে সনোয়াল সরকার। এদিন কৃষক নেতা অখিল গগৈয়ের নেতৃত্বে সোনাপুরের দিসাং রিসোৰ্টে ৭০টি সংগঠন জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংকল্পে একটি সভার আয়োজন করে। সভায় আগামী ১১ নভেম্বর আলোচনাপন্থী আলফা নেতা মৃণাল হাজরিকা এবং জিতেন দত্তের মুক্তির দাবিতে এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সংগঠনগুলি। অন্যদিকে, আরেকটি গুরুত্বপূৰ্ণ বিষয় হচ্ছে অসমে নিরীহ বাঙালিদের হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর হাত রয়েছে এমনই মন্তব্য ‘অল ইন্ডিয়া লিগাল এড ফোরাম’ এর সাধারণ সম্পাদক তথা সুপ্ৰিম কোৰ্টের আইনজীবী জয়দীপ মুখাৰ্জীর। তাঁর মতে, পাকিস্তান ভারতবৰ্ষের সঙ্গে প্ৰত্যক্ষ লড়াইয়ে পেরে উঠতে না পেরে জাতি দাঙ্গা করাতে চাইছে গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। দীৰ্ঘদিন ধরে আইএসআই কাশ্মীর, অসমের জঙ্গি সংগঠনগুলিতে মদত দিচ্ছে। ভারতবৰ্ষের উত্তরপূৰ্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে ডিসটাৰ্ব করা আইএসআইয়ের কাজ। বাঙালি এবং অসমিয়াদের মধ্যে চিরকালই একটা সদভাব আছে। এধরনের কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটিয়ে এই দুই জাতির মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে চাইছে কিছু জঙ্গি সংগঠন। ভারত সরকারের উচিত পাকিস্তানী গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্ৰহণ করা। এদিন এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিশিষ্ট সমাজকৰ্মী পদ্মশ্ৰী অজয় দত্ত বলেছেন, ‘অসমিয়া-বাঙালির মধ্যে একটা মধুর সম্পৰ্ক রয়েছে। রাজ্যে এই সব বিক্ষিপ্ত ঘটনা দুই জাতির সম্পৰ্কে কোনওদিনও চির ধরাতে পারবে না।’

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.