বরাক বাসীর সংগ্রামের ফসল আসাম বিশ্ববিদ্যালয় :আকসা
অসম আন্দোলন নয়, বরাকবাসীর সংগ্রামের ফসল আসাম বিশ্ববিদ্যালয়: আকসা
ইতিহাস বিকৃত করেছেন প্রশান্ত চক্রবর্তী , ক্ষমা চাইতে হবে, তোপ রূপমের
শিলচরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করেছিল আসু - অ গ প
শিলচর ।
শিলচরের ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আসাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অসম আন্দোলনের ফসল উল্লেখ করে ছাত্র সংগঠন আকসার রোষে পড়লেন বাংলা সাহিত্য সভা অসমের সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত চক্রবর্তী। ছাত্র সংগঠন আকসা এতটাই ক্ষুব্ধ, প্রশান্ত চক্রবর্তীকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছে সংগঠনটি। ক্ষমা না চাইলে আগামীতে প্রশান্তের বরাক উপত্যকায় প্রবেশে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে আকসা। কড়া ভাষায় এমনটাই হুশিয়ারি দিয়েছেন আকসার অন্যতম উপদেষ্টা রূপম নন্দী পুরকায়স্থ।। রূপম স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, শিলচরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাপ্তিতে এই উপত্যকার দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু প্রশান্ত চক্রবর্তী সম্পূর্ণ দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে আল্টাপকা মন্তব্য করেছেন। আসাম বিশ্ববিদ্যালয় অসম আন্দোলনের ফসল নয় বলে প্রশান্তের বক্তব্য খন্ডন করেছেন রুপম।
অসম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্প্রতি এক সভায় মন্তব্য করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন প্রশান্ত চক্রবর্তী। সামাজিক মাধ্যমে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এ নিয়ে। আর এমন আবহেই প্রশান্ত চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন আকসা উপদেষ্টা রূপম নন্দী পুরকায়স্থ । স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, যথেষ্ট হয়েছে আর নয়। প্রশান্ত চক্রবর্তী ইতিহাস বিকৃত করে বক্তব্য রেখেছেন। বরাকের সংগ্রামী মানুষ তা মাথা পেতে নেবে না। শুক্রবার শিলচর প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলন থেকে শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাপ্তির ইতিহাসও সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন রূপম। তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালের ১৫ মে শিলচরের মাটিতে এ কে চন্দ ল কলেজে আত্মপ্রকাশ করেছিল সংগঠনটি। বরাকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য যদি কোন সংগঠন গড়ে ওঠে তা হল আকসা। প্রথমে নাম ছিল অল কাছর স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন। পরবর্তীতে একই দাবিতে করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দিতে পৃথকভাবে সংগঠন গড়ে ওঠে। এরপর তিন জেলা কমিটিকে একসঙ্গে মিশিয়ে অল কাছার করিমগঞ্জ হাইলাকান্দি স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আকসা)পূর্ণাঙ্গ রূপ নেয়। আকসার নেতৃত্বে টানা এক দশক আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনে ছাত্র-যুবক শ্রমিক ,কৃষক, ঠেলা চালক রিক্সা চালক সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শামিল ছিলেন। বরাকের ন্যায্য দাবির প্রতি সহমত ও সমর্থন পোষণ করেন আবসুর প্রধান উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্ম। তিনি অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন। তার অবদান বরাক উপত্যকার মানুষ ভুলতে পারবেনা হলে মন্তব্য করেন রুপম।
তিনি জানান, ১৯৮৯ সালে লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বিল এ সংক্রান্ত পাস হয় এবং সেটা আইনে পরিণত হয়। ১৯৯৪ সালের ২১ জানুয়ারি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিং রাও বিশ্ববিদ্যালয় শিলান্যাস করতে এসেছিলেন। কিন্তু ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার এক উগ্র ছাত্র সংগঠনের চাপে সরকার সেদিন কিছু হটে ।ফলে শিলান্যাস পর্ব অধরাই থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আগাগোড়াই বিরোধিতা করে গেছে অসম গণপরিষদ। তা বরাকের মানুষ ভুলে যাননি। কিন্তু যখন প্রশান্ত চক্রবর্তীর মত বাগ্মী এসে বলেছেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয় অসম অসম আন্দোলনের ফসল, তাতে স্বাভাবিকভাবেই আতে ঘা লাগবে তাঁদের গায়ে যাঁরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন ।
রূপম বলেন, অসমের উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তি এবং অসম গণপরিষদের তুমুল বিরোধিতার ফলে এই দেশে শিলন্যাস ছাড়াই যদি কোনও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে সেটা শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়। সে বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কাচার করিমগঞ্জ হাইলাকান্দি উত্তর কাচার পার্বত্য জেলা এবং কারবি আংলং জেলার ছাত্র-ছাত্রীদের দায়িত্ব নিয়ে যাত্রা শুরু করে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম উপাচার্য্য হয়েছিলেন অধ্যাপক জয়ন্ত কুমার ভট্টাচার্য। কয়েক বছর আগে অধ্যাপক সুবীর কর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস নিয়ে বই লিখেছিলেন। কিন্তু প্রাক্তন উপাচার্য দিলীপ চন্দ্র নাথ এবং ওই সময়কার রেজিস্ট্রার সঞ্জীব ভট্টাচার্যের অঙ্গুলি হেলনে ছাপাখানা থেকেই বইগুলো তুলে নেওয়া হয়। ফলে সুবীর করের লেখা ইতিহাস আজও প্রকাশিত হয়নি। রুপম বলেন, বরাকের আজকের প্রজন্ম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস জানতে আগ্রহী। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস সংক্রান্ত বই জনসমক্ষে প্রকাশ করতে বর্তমান উপাচার্য রাজীব মোহন পন্থের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আকসার উপদেষ্টা বিশ্বজিৎ দেব, সহ জয়শ্রী নাথ, গৌতম রায়, আফসানা সদিওল ,সুইটি রায় বর্নালি পাল , বর্ষা রায়, চম্পা দাস প্রমুখ।
কোন মন্তব্য নেই