উচ্ছেদ করা হয়েছে গরীব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পথে বসলো
*অনুপম পাল,বালিপিপলা:২৮/০২/২৫:*
শিবনগরস্থিত আমরা বাঙালী রাজ্য কার্যালয়ের এক প্রতিনিধি দল গতকাল লেইক চৌমুহনীর বাজার পরিদর্শনে যান। উচ্ছেদ হওয়া ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে প্রায় সাত আটশো দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে। সমীর বর্মনের আমলের পর এটাই দীর্ঘ কাল পর সরকার এত বড় উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন স্বদলীয় গোষ্টী কোন্দলের বলি হয়েছি আমরা। যদিও স্মার্ট সিটি ২০১৬ সাল থেকে ঘোষণার পর থেকে শহরের অনেক জায়গায় উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের জন্য, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে ও ক্লিন সিটি উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু একসঙ্গে এত মানুষের রুটি রুজি কেড়ে নেয়নি সরকার।আজ থেকে কয়েক বছর আগেও ত্রিপুরা রাজ্যের বেশীরভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভর ছিল রুজি রোজগারের জন্য। ধীরে ধীরে গ্ৰামের মানুষ কৃষি কাজ করে যখন মানুষ তার দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ করতে না পেরে ছেলে মেয়েকে পড়াশোনা করাতে থাকে একটি চাকরির আশায়। শিক্ষিত ছেলে মেয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও চাকরির পথ ক্রমশঃ সংকুচিত হতে থাকে।বাম আমলে নেতাদের পেছনে দীর্ঘদিন ঘুরে ও সকলের ভাগ্যে চাকরি জুটেনি।আর যারা বিরোধী দলের ছিল তাদের ভাগ্যে চাকরি বা কোন সরকারি সহযোগিতা ঘটেনি।কাজেই বাধা হয়ে মানুষ শহর মুখী হয়ে মানুষের দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজে যোগদান দেয়। আবার কেউ কেউ উগ্ৰপন্থীর আক্রমণে নিজ বাড়িঘর ফেলে শহর মুখী হয় রুজি রোজগারের জন্য। সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ বাড়তে লাগলো। কিন্তু কংগ্রেসের সহযোগিতায় বামেরা বার বার ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করে নেয়। কেন্দ্রে গেরুয়া সরকার আসার পর ত্রিপুরা রাজ্যে ২০১৮ সালে ত্রিপুরা রাজ্যের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার জন্য বি জি পি মানুষের মন জয় করার জন্য বছরে ৫০ হাজার চাকরি দেবে, মিসকল দিলে চাকরি দেবে।রেগার মজুরি ডাবল করা হবে, বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে,১০৩২৩ চাকরি ফিরিয়ে দেবার প্রতিশ্রুতি দেয়, সপ্তম পে কমিশন দেবে। এমন সব লোভনীয় প্রস্তাব পেয়ে রাজ্যবাসী বামেদের প্রতি দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিপুল সংখ্যক ভোটে গেরুয়া সরকারকে ক্ষমতায় আনে। কিন্তু বি জি পি সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যবাসী এবং বেকার যুবক যুবতীরা বুঝতে পারে তাদের প্রতিশ্রুতি সব ই জুমলা। শুধু ছিল ক্ষমতা দখলের জন্য। তাই অনেকেই হতাশ হয়ে বাম আমলে বঞ্চিত ছেলে মেয়েরা বাঁচার জন্য নব্য গেরুয়া দলের নেতা কর্মীদের ধরে অনেকেই রুজি রোজগারের জন্য যেহেতু তাদের কাছে মোটা অংকের পুঁজি নেয় তাই তারা বাঁচার জন্য শহরের বিভিন্ন বাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসা নিয়ে বসে সংসার প্রতিপালনের জন্য। আবার চাকরি চ্যুত শিক্ষকদের অনেকেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ে অংশ গ্রহন করে। এখন এমন একটা অবস্থা চলছে রাজে বেকারত্বের জ্বালায় কেউ কেউ টমটম চালিয়ে সংসার চালাতেও হিমসিম খাচ্ছে। টমটম চালকদের বক্তব্য সারাদিন শহরে তেমন লোক আসে না সন্ধ্যায় কিছু লোক আসলেও আমাদের টমটমে লোকজন উঠে না। কারণ শহরে যানজট এড়াতে যত্রতত্র আমাদের জন্য নো এন্ট্রি বোর্ড লাগিয়ে দেয়। মানুষ বাঁচার জন্য গ্রামে গঞ্জে থেকে শাক সবজি কলা ফুল ইত্যাদি কিনে এনে শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে আসে মার্কেট কমিটির কাছে অনুদান দিয়ে ক্ষুদ্র ব্যবসা করে কোন রকমে সংসার প্রতিপালন করে। তাই দেখা যায় লেইক চৌমুহনী, বিদ্যাসাগর ব্রিজ সংলগ্ন, এ ডি নগর, ইন্ত্রনগরের ব্রিজ সংলগ্ন সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রচুর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাবসা করতে আসে। আমরা বাঙালী দল মনে করে সরকার জনগণের কল্যাণে কাজ করবে। মানুষের বাঁচার পথ করে দেবে। কারণ আমরা মনে করি জনগণের বাঁচার মান উন্নয়ন হলেই রাজ্যের যথার্থ উন্নয়ন হবে। আমরাও চাই স্মার্ট সিটির উন্নয়ন। সরকার যেহেতু ক্ষমতায় আসার আগে যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়ে ছিল সেই সকল প্রতিশ্রুতি পালন করতো তাহলে অনেকেরই রুজি রোজগারের পথ সুগম হতো। যদিও পুর নিগম লেইক চৌমুহনীর বাজারে অবৈধভাবে ব্যাবসা করছে তাদের কে নিজ থেকে উঠে যাওয়ার জন্য নোটিশ ও মাইকিং করেছে।তা স্বত্বেও আমরা মনে করি সরকার জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে জনগণের জন্য কাজ করতে দায়বদ্ধ। আমরা বাঙালী দল মনে করে সরকার যদি তাদের রুজি রোজগারের জন্য দায়বদ্ধতা থাকতো তাহলে একসাথে এত শত দোকানের উচ্ছেদ না করে ধীরগতিতে অল্প অল্প দোকান ভেঙ্গে পুর নিগমের উদ্যোগে নূতন দোকান ঘর করে দিয়ে যৎসামান্য টেক্স দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে ধীরগতিতে স্মার্ট সিটির উন্নয়নে অগ্ৰসর হলে হাজার হাজার গরীব মানুষের পেটে লাথি পড়তো না। রাজনীতি করতে গিয়ে বা স্বদলীয় গোষ্টী কোন্দলের জের ধরে একসাথে এতগুলো মানুষের রুজি রোজগার বিকল্প ব্যবস্থা না করে কেড়ে নেওয়া মোটেও ঠিক হয় নি। যদিও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর মেয়র লেইক চৌমুহনীর বাজার পরিদর্শনে গিয়ে বলেছে মাস খানেকের মধ্যে জায়গার ব্যবস্থা করে দেবে। আমরা বাঙালী দল মনে করে গরীব মানুষের রুজি রোজগারের জন্য সরকার এবং পুর নিগম দ্রুত গতিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জায়গা করে দেয়। আমরা দল বরাবরই বলে আসছে রাজ্যের কাঁচামাল ও কৃষিজ সম্পদকে কাজে লাগিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে একশো শতাংশ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা দিতে হবে। যদি পুর নিগম ও রাজ্য সরকার লেইক চৌমুহনীর বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা করার ব্যবস্থা না করে দেয় তাহলে ভবিষ্যতে তাদের স্বার্থে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই খবরটি পাওয়া যায়।








কোন মন্তব্য নেই