ভগিনী নিবেদিটা বিজ্ঞানী জগদীশ বসুকে বিশ্বদরবারে পরিচয় করিয়ে দেন
*এক অজানা কাহিনী*
_"ভগিনী ঋণ" ও একজন বিজ্ঞানীর চোখে জল!_
১৯০০ এর শেষের দিকে প্যারিসে জগদীশ চন্দ্র বসুর বিজ্ঞান কংগ্রেসে পেপার পড়তে যাওয়ার ব্যাপারে ব্রিটিশ সরকার চরম বিরোধিতা করেছিল। একমাত্র নিবেদিতার চেষ্টায় জগদীশ বোস গেলেন সেই বিজ্ঞান কংগ্রেসে যোগদান করতে। এ কাজে নিবেদিতাকে সহায়তা করেছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত মানুষ প্যাট্রিক গেডেস। এই সেই *প্যাট্রিক গেডেস* যিনি জগদীশ চন্দ্র বসুর জীবনী লিখেছিলেন।
প্যারিসের বিজ্ঞান কংগ্রেস ছিল জগদীশ বসুর জীবনে একটা টার্নিং পয়েন্ট। এখান থেকেই সারা বিশ্বে তাঁর নাম ছড়িয়ে গেল। সেই সম্মেলনে ভাষণ শুনতে স্বামী বিবেকানন্দ ও নিবেদিতা দুজনেই সেদিন উপস্থিত ছিলেন।
স্বামী বিবেকানন্দ সেই ভাষণের বিবরণ দিয়েছেন তাঁর লেখায়,
_"... এক যুবা যশস্বী বীর আমাদের মাতৃভূমির নাম ঘোষণা করলেন, সে - জগৎ প্রসিদ্ধ বৈজ্ঞানিক জে সি বোস...ভারতবাসী,বঙ্গবাসী, ধন্য বীর!"_
*তথ্য সূত্র:* _স্বামীজির বাণী ও রচনা, ৬ষ্ঠ খণ্ড, উদ্বোধন কার্যালয়, পৃ: ৯৭_
১৯০২ সালে অক্টোবর মাসে একটি বই প্রকাশ হওয়া মাত্রই বিশ্বে আলোড়ন পড়ে গেল। বইটির নাম হল, *রেসপন্স ইন দ্য লিভিং এ্যান্ড নন লিভিং।* এই সেই গবেষণামূলক বই যার মাধ্যমে জে সি বোস দেখিয়েছিলেন উদ্ভিদের প্রাণ আছে।আরো দুটি বই, *প্ল্যান্ট রেসপন্স* এবং *কম্পারেটিভ ইলেকট্রোফিজিওলজি।*
এই বইগুলির পান্ডুলিপি পরিমার্জন, সম্পাদনা প্রভৃতি যাবতীয় কাজ নিবেদিতা একা করেছিলেন বইগুলো প্রকাশিত হওয়ার পর জগদীশ বসুর গবেষণার বিষয় সারা বিশ্বে ছড়িয়ে গেল। অবশ্যই বিজ্ঞানের মূল বিষয়টা ছিল জে সি বোসের। কিন্তু বাকি কাজগুলো সব নিবেদিতা একা করেছিলেন।
জগদীশ বসুকে বিশ্বমাঝারে পরিচিত করার ক্ষেত্রে নিবেদিতা একটি স্মরণীয় অবদান রেখে গেলেন। এ কাজ তিনি করেছিলেন ভারতবর্ষকে ভালবেসে।
নিবেদিতা আর একটি অসাধারণ কাজ করেছিলেন। নিবেদিতা জগদীশ বসুর *বোস ইন্সটিটিউট* গড়ে তুলতে অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। নিবেদিতাই *সারা বুল*-কে রাজী করিয়েছিলেন অর্থ দেওয়ার বিষয়ে।
বোস ইনস্টিটিউট এখন ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানকেন্দ্র। এই বিশাল কাজটি করে গেলেন নিবেদিতা। যা খুব কমজন মানুষ এই খবর রাখেন।
বোস ইনস্টিটিউট নিবেদিতা দেখে যেতে পারেননি। ১৯১১ সালের সূচনায় জগদীশ বসু ও লেডি অবলা বসুর আমন্ত্রণে নিবেদিতা বিশ্রামের জন্য দার্জিলিং গেলেন। সেখানে তিনি কঠিন আমাশয় রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাগ্রহণ করলেন। ডাক্তার *নীলরতন সরকার* ও অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের চিকিৎসা সত্বেও রোগের কোন উপশম লক্ষিত হল না বসু দম্পতি দিনরাত পরিচর্যায় নিযুক্ত রইলেন। আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন জগদীশ বসু, নিবেদিতাকে বাঁচানোর জন্যে। পারলেন না বাঁচাতে। মাত্র ৪৪ বছরে নিবেদিতা চলে গেলেন! নিবেদিতা চলে যাচ্ছেন, আর একজন বিজ্ঞানীর চোখ তখন জলে ভরে উঠছে। আজ তাঁর জীবনের একটি পরম সম্পদ হারিয়ে গেল! এ জীবনে তিনি কোনদিন *ভগিনী ঋণ* শোধ করতে পারবেন না।
তাই বোস ইন্সটিটিউট উদ্বোধন হওয়ার একমাস আগে জগদীশ বসু নিবেদিতার বোন, *মে উইলসন*-কে এক চিঠিতে লিখছেন,
_"বসু বিজ্ঞান মন্দিরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে একটি ফোয়ারা ও জলধারা। আর তার পাশেই থাকবে প্রদীপ হাতে প্রার্থনারত এক নারীর রিলিফ মূর্তি। এখানেই বেদির নীচে রাখা থাকবে নিবেদিতার চিতাভস্ম। আর এই বেদির পাশে রোপন করা হবে একটি শেফালি গাছের চারা। সেই গাছ থেকে রোজ ফুল ঝরে পড়বে বেদীর ওপর। এই শেফালি গাছটির বীজ নিবেদিতা নিয়ে এসেছিলেন অজন্তা থেকে।"_
*তথ্য:* _নিবেদিতা লোকমাতা_ ডক্টর শঙ্করীপ্রসাদ বসু, ১ম খণ্ড ২য় পর্ব,পৃ: ৩৮০
দার্জিলিং- এ নিবেদিতার সমাধি মন্দিরে লেখা আছে এই কথাগুলি,
" HERE LIES SISTER NIVEDITA WHO GAVE HER ALL TO INDIA. "
এমন " ভগিনী ঋণ" কি কখনও শোধ করা যায়?
@ পীযূষ দত্ত।
*তথ্যসূত্রঃ*
" ভারত চেতনায় ভগিনী নিবেদিতা।"/ উদ্বোধন কার্যালয়।
শঙ্করীপ্রসাদ বসু/ "নিবেদিতা লোকমাতা".
ভগিনী নিবেদিতা/ স্বামী তেজসানন্দ/ উদ্বোধন
স্বামীজির রচনাবলী /
নিবেদিতার লেখা চিঠি মিস ম্যাকলাউড, সারা বুলকে।
কোন মন্তব্য নেই