Header Ads

অসমের উত্তর পূর্বাঞ্চল হিন্দু বাঙালি ইউনাইটেড ফোরাম এর ধর্না কর্মসূচির আহবান দীপক দে র

গুয়াহাটি, ১৭ নভেম্বর:: 
" সমগ্র উত্তর পূর্বাঞ্চলে বাঙালি সহ অন্যান্য হিন্দুরা ক্রমশঃ খ্রীষ্টান মিশনারির ষড়যন্ত্রের শিকার হতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সঙ্গে, উত্তর পূর্বাঞ্চলে হিন্দু শূন্য করার বিরাট এক আন্তর্জাতিক চক্রান্ত চলছে বললেও অত্যুক্তি করা হবে না।" এ মন্তব্য করেছেন "সারা অসম বাঙালি যুবছাত্র ফেডারেশন" এর সভাপতি দীপক দে। আজ গুয়াহাটির লাচিত নগরে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। গত ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাঙালি সংগঠন গুলি ঐক্যবদ্ধ করার স্বার্থে এক আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। আজ এই আহ্বায়ক কমিটির কার্যকরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই সভায় সংগঠনটির নাম সর্বসম্মতিক্রমে "নর্থ ইস্ট হিন্দু বেঙ্গলি ইউনাইটেড ফোরাম" নামে  নামাকরণ করা হয়েছে। আসন্ন ডিসেম্বর মাসে শীতকালীন অধিবেশনে নয়াদিল্লির যন্তর মন্তরে "নর্থ ইস্ট হিন্দু বেঙ্গলি ইউনাইটেড ফোরাম সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাঙালি সব সংগঠন মিলে একসাথে ধর্ণা কার্যসূচী পালন করবে। আন্দোলনের এই কার্যসূচী সফল করে তুলতে বাঙালি সংগঠন গুলিকে সহযোগ করতে আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশনের সভাপতি দীপক দে। এছাড়াও, উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করা হিন্দু বাঙালিদের নানা ধরনের সমস্যার ওপর জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরা হবে বলেও দীপক দে মত প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, নর্থ ইস্ট হিন্দু বেঙ্গলি ইউনাইটেড ফোরামের মুখ্য আহ্বায়ক চিত্তরঞ্জন পাল বলেন, অসমে ভাষিক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০ টিরো বেশি এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বসবাস করেন। অথচ অসম ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের বার্ষিক বাজেট হচ্ছে মাত্র ৫ কোটি টাকা। যা এই জনগোষ্ঠীকে চূড়ান্ত ভাবে বঞ্চিত করার এক দলিল। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর প্রাপ্য পঞ্চাশ কোটি টাকা বরাদ্দ আনতে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করার পাশাপাশি রাজ্যের বাজেট থেকে প্রতিবছর এই বোর্ডের নামে ত্রিশ কোটি টাকা বরাদ্দ করতে আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি আরও বলেন, প্রায় এক কোটি ভাষিক সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর নামে প্রতিষ্ঠিত ভাষিক সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের নামে আজও নিজস্ব কোনো কার্যালয় নেই। এমনকি, আলাদা ষ্টাফ বা কর্মচারীও নেই। যারদরুণ, সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিগমের কার্যালয়েই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান দু'জনে বসে সরকারি কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজ্য সরকার শুধু ৫ কিলোগ্রাম চাউল ও অনুদানের ১২০০ টাকা দিয়ে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন উতরাতে পারবে না বলে সতর্ক করে দিয়ে তিনি আরও বলেন, এই জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বর্তমান সরকারের কার্যকলাপ গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন।
প্রসঙ্গত, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী তথা অন্যতম আহ্বায়ক শুভ্রাংশু দেব (রিটায়ার্ড আই আর এস) বলেন, আমাদের সংগঠনের উদ্দেশ্য ক্ষণস্থায়ী নয়। এমনকি ভঙ্গুরও নয়। যে যতোই চেষ্টা করুন না কেন। শক্তিশালী ভাবে এগিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সভা সমিতিতে বলে বেড়াচ্ছেন যে বসুন্ধরা ১, ২, ৩- র অধীনে জমির অধিকার পেতে হলে তিন পুরুষের নথিপত্র লাগবে। কিন্তু নোটিফিকেশন দিচ্ছেন না তিনি। অথচ, সাম্প্রতিক কালে সুপ্রিমকোর্টের রায়দানে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চকে নাগরিকত্বের ভিত্তিবর্ষ নির্ধারণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী কে অনাবশ্যক ভাবে ভীতিগ্রস্থ করে তুলছে। তিনি বরাক উপত্যকা থেকে দুজন ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা থেকে একজন হিন্দু বাঙালি মন্ত্রী বর্তমান মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করতে আহ্বান জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, নাগাল্যান্ড মাইনোরিটি ফোরামের চেয়ারম্যান তথা হিন্দু বাঙালি ফোরামের আহ্বায়ক বিষ্ণু ভট্টাচার্য বলেন, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচল ও অসমের কার্বি আংলঙ সহ বিভিন্ন অঞ্চলের "সিক্সথ সিডিউল" অঞ্চলে এক আইন আনতে চলেছে। ফলশ্রুতিতে, লক্ষ লক্ষ হিন্দু বাঙালি ভাইয়েরা গৃহহারা হতে বাধ্য হবেন। বিশেষতঃ ত্রিপুরায় ৫০ শতাংশ হিন্দু বাঙালিরা জমির অধিকার হারাবেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার এই লক্ষ লক্ষ বাঙালির পুনর্বাসন দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে কী না, তা আমাদের জানা নেই। তবে এই সংগঠন উত্তর পূর্বাঞ্চলের হিন্দু বাঙালি জনগোষ্ঠীকে কী ভাবে আইন দিয়ে নিঃশেষ করতে চাইছে, সে সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলবে। তিনি নয়াদিল্লিতে আন্দোলনের কার্যসূচী সফল করে তুলতে হিন্দু বাঙালির প্রতি আহ্বান জানান।
ওদিকে, বঙ্গীয় অসমিয়া সমাজ এর সভাপতি তথা অন্যতম আহ্বায়ক প্রদীপ সেনশর্মা বলেন, অসমের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় ১৭ টি বিধানসভা কেন্দ্রে হিন্দু বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ কিংবা নির্নায়ক শক্তি। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, মার্ঘেরিটা ইত্যাদি বিধানসভা কেন্দ্রগুলি থেকে হিন্দু বাঙালি বিধায়ক নির্বাচিত হয়ে আসতেন। অথচ আজ এমন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে প্রার্থিত্ব দেওয়া তো দূরের কথা মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান পদেও হিন্দু বাঙালি ব্যক্তিকে মনোনীত করে না। স্বাধীনতার বহু আগে আসা বাঙালিরা বসুন্ধরার অধীনে জমির আবেদন করেও আবন্টন পান নি। এছাড়া, তফশিল সম্প্রদায় ও অনুন্নত সম্প্রদায়ের জেলাভিত্তিক সংগঠন গুলি ইস্যু করা সার্টিফিকেট জেলা প্রশাসন গ্রাহ্য করছে না। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এমন কথা বলে এই জনগোষ্ঠীকে বারবার আস্বস্ত করে আসছেন। অথচ সে গুড়ে বালি। বিষয়টিতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সভায় কার্বি আংলঙ বাঙালি সমাজের সাধারণ সম্পাদক অজিত দাস সহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন। আসন্ন নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিতব্য আন্দোলনের কর্মসূচি সফল করে তোলার পক্ষে সকলেই একমত।
ওদিকে, বরাক উপত্যকার কাছাড়, করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দি জেলায় সংগঠনের বিস্তারের জন্য দীপক দে, চিত্তরঞ্জন পাল ও বিষ্ণু ভট্টাচার্য প্রমুখেরা শীঘ্রই বরাক উপত্যকা সফর করবেন বলে জানিয়েছেন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.