শক্তি পদ ও তার ছবির নায়িকা র বিখ্যাত সংলাপ আমি বাঁচতে চাই l
মেঘে ঢাকা তারা, অমানুষ, অনুসন্ধান ছবিগুলো দেখেছেন তারা কি লেখকের নাম জানেন? জানি না সেকথা কতজন জানেন, আজ তাঁর জন্মদিন শক্তিপদ রাজগুরু...১ লা ফেব্রুয়ারি ১৯২২ বাঁকুড়া জেলাতে।
তার সাহিত্যকীর্তি জনমানসে পৌঁছে যাওয়ার পেছনে রয়েছে সিনেমার জনপ্রিয়তা। এর পেছনে রয়েছে একটি কাহিনী। উনি চাকরি করতেন পোষ্ট অফিসে....মেঘে ঢাকা তারা সিনেমাটির পিছনে একটি ঘটনা ঘটেছিল। সে গল্পটাই বলতে চাইবো আজ। ১৯৫৬ র প্রসাদ পত্রিকায় শক্তিপদ রাজগুরু র লেখা চেনামুখ গল্পটির ক্ষেত্রে কিন্ত সেই বিরল ঘটনাটি ঘটেছিল। গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে একটি মেয়ে। নীতা, ছিন্নমুল পরিবারের। প্রসাদ পত্রিকায় গল্পটি পড়তে পড়তে অভিনেত্রী সুপ্রিয়া দেবী হতবাক। গল্পের ফ্ল্যাশব্যাক এসে সাহিত্য ও জীবনকে যেন মিলিয়ে দিল এক লহমায়। কয়েক মুহুর্ত স্তদ্ধ করে দিল সুপ্রিয়া দেবীকে।
অন্যদিকে পত্রিকায় গল্পটি পাঠ করে আপ্লুত হলেন আর একজন তিনি দীনেন গুপ্ত তিনি তখন চিত্র গ্রাহক ছিলেন তারপর তিনি চিত্র পরিচালক হয়ে ছিলেন। গল্পটা পড়ে দিনেন গুপ্ত ভাবলেন এই গল্পটা যদি সিনেমা করা যায়। ইতিমধ্যে পরিচালক ঋত্বিক ঘটকের ছবিতে চিত্র গ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন। অযান্ত্রিক শেষ চলছে বাড়ি থেকে পালিয়ের কাজ। অবিলম্বে গল্পটি তুলে দিলেন ঋত্বিক ঘটকের কাছে।
চেনামুখ গল্পটি পড়ে ঋত্বিক ঘটক ভেবে ফেললেন একটা ছবি করা যাবে। পূর্ববঙ্গের রাজসাহীতে জন্ম নিয়েছিলেন কিছুদিনের মধ্য চোখের সামনে উনি দেখেছেন দেশকে বিদেশ হয়ে যেতে। তিনি চেনামুখ গল্পটির অবলম্বনে ছবি তৈরী করবেন স্হির করে ফেললেন।
এদিকে এই গল্প লেখার পেছনেও রয়েছে আর একটি গল্প। বন্ধু র ছেলের চিকিৎসা র জন্য ধার নিয়েছিলেন সেই ৫০০ টাকা শোধ করতে একখানা গল্প লেখার প্রয়োজন পরলো প্রসাদ পত্রিকা তে। এটাই সে গল্প।
প্রসাদ সিংহ একদিন শক্তিপদ রাজগুরুকে ফোন করে বলেন যে ঋত্বিক ঘটক তাকে খুঁজছেন। তখন শক্তিপদ রাজগুরু জিপিও তে কাজ করেন, একদিন দেখেন লম্বা, সুন্দর চেহারার ধুতি পাঞ্জাবি পরা এক তরুন, এসে বললেন আমি ঋত্বিক ঘটক। আমি আপনার চেনামুখ পড়েছি। ওটা ছবি করতে চাই।শক্তি পদ রাজগুরু বললেন নিশ্চয়ই করবেন। উনি ঠিকানা দিলেন ভবানীপুরে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির পিছন দিকটাতে থাকতেন। উনি গেলেন। তার বাড়িতে গিয়ে খুব ভালো লাগলো শক্তিপদ রাজগুরুর। অবশেষে সুটিং শুরু হলো শক্তিপদ রাজগুরু শিলং গেলেন। সুটিং এ গিয়ে বুঝলেন কেন তাকে আনা হয়েছে। ছবির চিত্রনাট্য একটু বদল করতে হবে। প্রডিউসার চাইছেন নীতা মরবেন না অবশেষে ভোট হলো, চারজন শুধু ছিল মুল গল্পের সাথে বাকি এগারো জন চাইছেন নীতা মরবেন না।
খানিক বাদে ঋত্বিক ঘটক হোটেলের ঘরে এসে বললেন যে একটা স্ক্রীপ্ট লিখুন মিলনান্তক লাইনে নীতাকে এন্ড করুন। আমাকে ছবিটা শেষ করতে হবে, না হলে প্রডিউসার ছবিটা শেষ করতে হয়তো দেবেন না। সেভাবেই হলো।
যাই হোক ছবি শেষ হয়ে গেছে মোটামুটি। শক্তি পদ বাবু ঋত্বিক বাবুকে জিজ্ঞেস করলেন ছবি কি শেষ হবে না? উনি বললেন শেষ অবধি কি করবো বুঝে পারছি না। পয়সাও নেই। শেষ অবধি বললেন রমেশ সেই সতী ফলস এর থ্রি হানড্রেড এন্ড সিক্সটি ডিগ্রি শট বার কর। মিনিট দশেক খোঁজার পরে শটটা বেরল। ওই রোটেটিং হিলস ওই ঝরনা ওই পাহাড় পাইন বন রোটেট করছে। কিছুক্ষন চুপচাপ কাটল, তারপর পুনু দাশগুপ্ত কে বললেন যেখান থেকে পারিস কালকে ওই সুপ্রিয়াকে ধরে নিয়ে আয়। আর শক্তিপদ বাবুকে বললেন অথর কাল তুমিও সাড়ে বারোটায় এসো।
পরের দিন নিউ থিয়েটার্স ১ এ স্টুডিওয় একখানা মাইক একটা ঝাউগাছের ডাল, সঙ্গে একটা ছেলেদের খেলনা বেরুলো। তার শব্দ দিয়ে পাহাড়ি ঝড়ের সাউন্ড তৈরী করে তার মধ্য সুপ্রিয়াকে দিয়ে বলালেন সেই বিখ্যাত সংলাপ দাদা আমি বাঁচতে চাই, দাদা আমি বাঁচতে চাই।
টেক শেষ হলো। শক্তিপদ বাবু জড়িয়ে ধরলেন , আমি তো ভাবতে পারিনি যে এর থেকে এই হতে পারে।
সাংস্কৃতিক জগতে তাঁর অভিনব অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনে বহু সন্মানে ভুষিত হয়েছেন শক্তিপদ বাবু। সাহিত্য বিশেষ কীর্তি র জন্য বিভূতিভুষন পদক, অমানুষ ছবির চিত্রনাট্যের জন্য অল ইন্ডিয়া লায়নস অ্যাওয়ার্ড এবং ২০০৯ সালে হল অফ ফেম সাহিত্যব্রক্ষ শিরোপায় ভুষিত হন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার বঙ্গ বিভুষণ সন্মান জানান।
এই মহান লেখক চলে যান আমাদের ছেড়ে ১২ ই জুন ২০১৪ তে, বিরানব্বই বছর বয়সে।
আজ তাঁর জন্মদিনে তাকে প্রনাম জানাই।🙏








কোন মন্তব্য নেই