Header Ads

শ্রী অরবিন্দ শ্রী শ্রী মায়ের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন

🍁🍁🍁
'#যত_উচ্চ_তোমার_হৃদয়, #তত_দুঃখ_জানিও_নিশ্চয়। #হৃদিবান_নিঃস্বার্থ_প্রেমিক, #এ_জগতে_নাহি_তব_স্থান।।'
১৯০৮ সালের ২রা মে রাষ্ট্রদোহিতা ও সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে, বিখ্যাত আলীপুর বোমার মামলার আসামী, বিপ্লবী অরবিন্দ ঘোষ ও তার সঙ্গীগণ বন্দী হন। এই সময় অরবিন্দের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী বিপ্লবী দেবব্রত বসুর (পরবর্তীকালে স্বামী প্রজ্ঞানন্দ) ভগ্নী সুধীরা দেবী বাগবাজারে শ্রীমায়ের  কাছে অরবিন্দ পত্নী শ্রীমতী মৃণালিনী দেবীকে নিয়ে আসেন এবং তাঁর মানসিক শান্তির জন্য প্রার্থনা জানান।

   সব শুনে অভয়দাত্রী শ্রীশ্রীমা বলেন—“চঞ্চল হোয়ো না মা, চাঞ্চল্যে কিছুই লাভ নেই। তোমার স্বামী শ্রীভগবানের পূর্ণ আশ্রিত পুরুষ, ঠাকুরের আশীর্বাদে তিনি অতি সত্বর নিষ্পাপ প্রমাণে মুক্ত হয়ে আসবেন।' মৃণালিনী দেবীর মানসিক শান্তিলাভের জন্য শ্রীশ্রীমা তাঁকে সব সময় ‘কথামৃত'-পুস্তক পড়ার উপদেশ দেন। তিনি শ্রীশ্রীমায়ের উপদেশানুযায়ী প্রত্যহ ‘কথামৃত' পাঠ করতেন। শ্রীশ্রীমাও তাঁকে বিশেষ স্নেহ করতেন এবং 'বৌমা' বলে সম্বোধন করতেন। ১৯০৯ সালের মে মাসে আলীপুর বোমার মামলার অবসান হয়।

   ১৯১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে চন্দননগর যাত্রার পূর্বে শ্রী অরবিন্দ সস্ত্রীক বাগবাজারের উদ্বোধনে এসে শ্রীশ্রীমাকে প্রণাম করে যান। বিপ্লবী ও শ্রীশ্রীমায়ের শিষ্য শ্রীরামচন্দ্র মজুমদার শ্রীঅরবিন্দের অনুরোধ ক্রমে, স্বামী সারদানন্দের অনুমতি পাওয়ার পর, সস্ত্রীক শ্রীঅরবিন্দকে শ্রীশ্রীমায়ের কাছে আনেন । উভয়ে শ্রীশ্রীমাকে প্রণাম করলে, তিনি তাঁদের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করেন। শ্রীঅরবিন্দকে দেখে শ্রীশ্রীমা বলেন—“এইটুকু মানুষ, এঁকেই গভর্নমেন্টের ভয় ! আমার বীর ছেলে।”

   শ্রীঅরবিন্দ চৌকাঠের বাইরে এলে গৌরীমা তাঁর চিবুক ধ’রে স্বামীজীর কবিতা উদ্ধৃতি ক’রে বলেন—

     ‘যত উচ্চ তোমার হৃদয়, তত দুঃখ জানিও নিশ্চয়।
হৃদিবান নিঃস্বার্থ প্রেমিক, এজগতে নাহি তব স্থান।"

উদ্বোধনের তৎকালীন কর্মাধ্যক্ষ স্বামী বিশ্বেশ্বরানন্দের (কপিল মহারাজ) সাক্ষাতে শ্রীঅরবিন্দ সেদিন শ্রীশ্রীমায়ের দোতলার ঘর থেকে নীচে এসে স্বামী সারদানন্দকেও প্রণাম করেছিলেন। উদ্বোধন ত্যাগ ক'রে যখন সস্ত্রীক শ্রীঅরবিন্দ গাড়ীতে ওঠেন, তখন 'বন্দেমাতরম্' পত্রিকার সহকারী সম্পাদক শ্রীকৃষ্ণচন্দ্র ঘোষ, বেদান্ত-চিন্তামণি ও উদ্বোধনে এলে তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়।

   পরবর্তীকালে শ্রীঅরবিন্দের পণ্ডিচেরী গমনের পর তাঁর স্ত্রী মৃণালিনী দেবী গভীরভাবে শ্রীশ্রীমাকে আঁকড়ে ধরেন এবং তাঁর কাছ থেকে দীক্ষাও পান। শ্রীশ্রীমায়ের কাছে মৃণালিনী দেবীর দীক্ষা সম্পর্কে পণ্ডিচেরীতে শ্রীঅরবিন্দ আনন্দসহকারে বলেছিলেন—“I was glad to know that she had found so great a spiritual refuge..."

   মন্ত্ৰ-শিষ্যা মৃণালিনী দেবী সম্পর্কে শ্রীশ্রীমায়ের উক্তি—“অরবিন্দের স্ত্রী মৃণালিনী বেশ মেয়েটি—সরল।” মৃণালিনা দেবীর ভগ্নী শ্রীমতী শৈবলিনী মিত্র লিখেছেন—“যতদূর মনে হয়, শ্রীঅরবিন্দকে (শ্রীশ্রীমা ) সন্তানতুল্য মনে করতেন ব’লে বড়দিদিকে (মৃণালিনী দেবীকে ) বৌমা বলতেন।”

  সন্তানতুল্য বিপ্লবী শ্রীঅরবিন্দ মাতৃপ্রণামের পরই অধ্যাত্মবিপ্লবের চরম শীর্ষে উঠেছিলেন এবং তাঁর সাধনক্ষেত্রেও আর এক মাতৃসান্নিধ্য লাভ করেছিলেন,—মাতৃলীলার এটি একটি সুসমঞ্জস উপহার। শ্রীশ্রীমায়ের অশেষ কৃপায় মৃণালিনী দেবীরও জীবনযাত্রা বিঘ্নমুক্ত হয়েছিল এবং ‘বিপ্লবী’ অরবিন্দের বদলে তিনি স্বামীরূপে পেয়েছিলেন 'ঋষি' শ্রীঅরবিন্দকে। সারদা-লীলায় উভয়ের স্থানই বিধিনির্দিষ্ট।
(শ্রীশ্রীসারদামাতা লীলামৃত- পৃষ্ঠা ১২২ - ১২৩)
জয় মা 🌷🌷🌷

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.