Header Ads

বিজ্ঞান চর্চার শ্রেষ্ঠ পুরুষ আচার্য প্রফুল্ল রায় শেষ বেতার ভাষণ

পরাধীন ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় তাঁর সুদীর্ঘ ৮৩বছরের জীবনে মাত্র একবার রেডিয়োয় বক্তব্য রেখেছিলেন,ঐতিহাসিক ও স্মরণীয় সেই বেতার ভাষণ ১৯৪০সালের ৮ডিসেম্বর রাত্রি আটটায় রেডিয়োয় প্রচারিত হয়৷ 
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে 

মাত্র ১২মিনিট প্রফুল্লচন্দ্র রেডিয়োয় বলেছিলেন তাঁর বক্তব্যের বিষয় ছিল 'আমি ও আমার জীবন'৷ যদিও আচার্যদেব সেই বক্তৃতা রেডিয়োর স্টুডিয়োয় এসে দেন নি,কারণ তখন তিনি আশি বছর স্পর্শ করতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি,শরীর ভেঙেছে,কিন্তু মস্তিষ্কের আশ্চর্য কর্মদক্ষতা ও অনমনীয় মনোবল অক্ষুন্ন৷ এর আগে পর্যন্ত প্রফুল্লচন্দ্র রায় মহাশয়কে বেতার ভাষণে রাজি করানো যায় নি৷

১৯৪০সালের দিকে বেতার অফিসের অনেকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতের আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রূপকার বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র রায় রেডিয়োয় কোনওদিন বক্তব্য রাখেন নি,এই লজ্জা বেতার কতৃপক্ষের৷ তখন তিনি প্রায় আশি,স্বাস্থ ক্রমশ অপটু হয়ে যাচ্ছে,এইবেলা যদি ব্যবস্থা না করা যায় তাহলে আফশোসের আর সীমা থাকবে না৷ এই বিষয়ে চমৎকার একটি নিবন্ধ লিখেছেন মনোমোহন ঘোষ(চিত্রগুপ্ত) খুলনা সন্মিলনী প্রকাশিত 'আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র জন্ম শতবর্ষ পূর্তি স্মারকগ্রন্থে মুদ্রিত হয়,শিরোনাম ছিল'বেতারে আচার্যদেবের রেকর্ড)৷
ওই নিবন্ধে মনোমোহন ঘোষ লিখেছেন কিছুদিন আগে বেতারের বক্তৃতাবিভাগের ভার তাঁর ওপর ন্যস্ত হওয়ায় তিনি অগ্রসর হলেন,গেলেন তাঁর বাসস্থান সার্কুলার রোডে (বর্তমানে আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজ ভবনে৷ সর্বত্যাগী আচার্যদেব রসায়ন—বিভাগের গবেষণাগারের একটি ঘরে বাস করেন৷ খবর পেয়ে তাঁর তখনকার সেক্রেটারি ভবেশচন্দ্র রায় বেরিয়ে এসে হাসিমুখে বললেন ' শরীর তো ওঁর খুবই খারাপ৷ বেশিক্ষণ বসতে পারেন না৷ অধিকাংশ সময়েই শুয়ে থাকেন৷ শুয়ে শুয়েই পড়াশুনা করেন৷ রেডিয়োতে বলতে যাবে কী করে'? তখন মনোমোহন বাবু বলেছিলেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় কে রেডিয়ো স্টেশনে যেতে হবে না,তারা এখানে এসে রেকর্ড করে নিয়ে যাবেন,বক্তৃতা ব্রডকাস্ট হবে,রেকর্ডখানা থেকে যাবে৷
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে 

 ভবেশবাবু মনোমোহন ঘোষ কে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রফুল্লচন্দ্রের ঘরে,একদিকে ছোট একটা লোহার খাট,সামান্য উপকরণের বিছানা আর টেবিল চেয়ার৷ আচার্যদেব ঘরে প্রবেশ করে মনোমোহন বাবুকে বললেন খাটে চল৷ দু-এক কথায় তাকে আরও বলেছিলেন চা খাস?খাস না তো?খাস নি! যা ওই চেয়ারটা টেনে এনে বোস৷ এরপর মনোমোহন ঘোষ সুযোগ বুঝে বললেন আপনার গলার আওয়াজ রেকর্ড করে রাখতে হবে যে! এখানে এসে রেকর্ড করে নিয়ে ব্রডকস্ট করবো৷ স্মিতমুখে তাকিয়ে তিনি বলেছিলেন এবার তিনি মরে যেতে পারেন বলে ভয় হয়েছে বুঝি,কিন্তু কী বলবো বল দেখি,বলতে যে আর ভাল লাগে না'৷

বেতারের বক্তৃতা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বলেছিলেন তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে যা খুশি বলবেন,ভবেশবাবু বড় বড় অক্ষরে টুকে দেবেন,তারপর তিনি খাটে শুয়ে শুয়েই সেটা পড়বেন৷ তাঁর মুখের সামনে মাইক্রোফোন ধরে রাখা হবে,রেকর্ডিস্ট রেকর্ড করে নেবেন,মিনিট পনেরোর বেশি সময় লাগবে না৷
আচার্যদেব অবশ্য বলেছিলেন অত কান্ড তারা করবে!শুয়ে শুয়ে হবে! 

প্রফুল্লচন্দ্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল বেতারের লোকজন কবে আসবে,তিনি তাদের একদিন পরে সময় দিয়ে বললেন কাল লেখাটা তৈরি করে নেবেন৷ এরপর খ্যাতনামা সাহিত্যিক পরিমল গোস্বামী সহ বেতার কতৃপক্ষ রেকর্ডিং-এর সরঞ্জাম নিয়ে সবাই হাজির হয়েছিলেন৷ প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের লোহার খাটের মাথার দিকের রেলিং-এর গায়ে বালিশ জড়ো করা হয়,সেই বালিশের পিঠে ভর দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় বক্তৃতা পড়েছিলেন৷বেশ ভারি মাইক-স্ট্যান্ডটিকে ঠিক তার মুখের কাছে বারো মিনিট ধরে রাখা হল,রেকর্ড হল আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের বানী : 'আমি ও আমার জীবন'৷ ১৯৪০সালের আট ডিসেম্বর রাত্রি ঠিক আটটায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের জীবনের একমাত্র বেতার ভাষণ ব্রডকাস্ট করা হয়৷
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে 
পরিমল গোস্বামী খ্যাতনামা সাহিত্যিক,ফটোগ্রাফিতে তাঁর ভারতজোড়া নাম,বেতার কতৃপক্ষের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে তিনি বক্তৃতারত প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের ফটো তুলে দিতে তাদের সঙ্গে ওইদিন গিয়েছিলেন৷
কলমে ✍🏻 অরুণাভ সেন।।

#PrafullaChandraRay
#chemist
#scientist 
#science 
#AllIndiaRadio 
#Remarkable 
#dhrubotaraderkhonje 
#bengalcamical 

গ্রন্থঋণ, কৃতজ্ঞতা স্বীকার,ঐতিহ্য উত্তরাধিকার ও বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র,শ্যামল চক্রবর্তী

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.