Header Ads

সাগর সেন রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী বাংলাদেশ ফরিদপুর এর রাজ পরিবারে জন্ম

আজকে পরিচয় করে দিচ্ছি বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ কারি আরও একজন গুণী জনের সাথে। তার নাম 
  সাগর সেনের জন্ম ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের ১৫ মে ব্রিটিশ ভারতের অধুনা ফরিদপুরের এক রাজ পরিবারে। তিনি বিজনবিহারী সেন ও নয়নমঞ্জরী সেনের কনিষ্ঠ পুত্র। তার শৈশব কেটেছে বর্তমানের বাংলাদেশে। তবে দেশভাগের পর সপরিবারে চলে আসেন কলকাতার বরানগরে। তার প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গীত শিক্ষার হাতেখড়ি কলকাতাতেই।  তার স্কুলের পাঠ কলকাতার তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনে। এরপর কলেজের পাঠ সুরেন্দ্রনাথ কলেজে। তার জীবিকা বলতে মুখ্যত ছিল গান। এছাড়া কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গীত শিক্ষক রূপে আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন।সঙ্গীতজীবন
সাগর সেন প্রধানত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী হিসাবে বেশি পরিচিত। ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে অল ইন্ডিয়া রেডিও তথা আকাশবাণীতে তার গাওয়া রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রথম রেকডিং হয়।

তিনি সন্তোষ সেনগুপ্ত পরিচালিত রবীন্দ্র গীতিনাট্য - 'শাপমোচন' (১৯৬৬) এবং 'বাল্মীকি প্রতিভা'(১৯৬৭) য় কণ্ঠদান করেন। ১৯৬৮ সালে রবীন্দ্র নৃত্যনাট্য 'মায়ার খেলা' য় তার গাওয়া 'আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান' তাঁকে রবীন্দ্রসঙ্গীতের খ্যাতনামা শিল্পী হিসাবে প্রতিষ্ঠা দেয়। স্বকীয় উপস্থাপনা শৈলীতে বেশ কিছু রবীন্দ্রসঙ্গীত অন্য এক মাত্রায় নিজস্বতা পেয়েছে। সহজিয়া রীতিতে আর আবেগাপ্লুত গায়কিতে তার নিবেদিত সঙ্গীতের মূর্ছনা শ্রোতাদের বিভোর করে। পরবর্তী সত্তর ও আশির দশকে তৎকালীন গ্রামোফোন কোম্পানি অব ইন্ডিয়া ( বর্তমানের সারেগামা ইন্ডিয়া) থেকে তার বহু সঙ্গীতের রেকর্ড প্রকাশিত হয়। ১৯৭৪ সালে 'পূজা' পর্যায়ের সাতটি ও 'প্রেম' পর্যায়ে সাতটি রবীন্দ্র গান নিয়ে স্টেরিয়োফনিক লং প্লে রেকর্ড প্রকাশিত হয়। তার শতাধিক গানের রেকর্ড আছে। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় স্থাপন করেন নিজস্ব সঙ্গীত বিদ্যালয় - "রবিরশ্মি"।

তার অভিভাবকত্বে 'রবিরশ্মি' র ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্র সদনে, শিশির মঞ্চে, কলামন্দিরে 'শ্রাবণসন্ধ্যা', 'শাপমোচন', 'ঋতুরঙ্গ', 'স্বদেশী নায়ে বিদেশী খেয়া','বিশ্বজন মোহিছে' নামীয় সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠানগুলিতে তিনি নিজে এমনকি খ্যাতনামা সঙ্গীত শিল্পী হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়,সুচিত্রা মিত্র, বাণী ঠাকুর প্রমুখেরা অংশ নিতেন।

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্টে কলকাতা দূরদর্শনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশনার সম্মান পান তিনি। তার সঙ্গে ছিলেন বিখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সুমিত্রা সেন। দ্বৈত কণ্ঠে গেয়েছিলেন আজি এ আনন্দসন্ধ্যা। সাগর সেন পরিবেশন করেছিলেন আকাশ ভরা সূর্য তারা, বিশ্বভরা প্রাণ।বিদেশে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য ১৯৬২ সালে বার্মায়, বাংলাদেশে তিন বার এবং ১৯৭৬ সালে টেগোর মিউজিক সোসাইটির আমন্ত্রণে কানাডা আমেরিকা ও সুইজারল্যান্ড গিয়েছেন।সাগর সেনের প্রকৃতিদত্ত বলিষ্ঠ-উদার-ভাবময় কণ্ঠ-এ গীত অবিস্মরণীয় রবীন্দ্রসঙ্গীতের কয়েকটি হল -

আপনাকে এই জানা আমার ফুরাবে না
কেন আমায় পাগল করে যাস
ওই মালতীলতা দোলে
আমার নয়ন তব নয়নের
সখী বহে গেলো বেলা
আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান
আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে
তোমরা যা বলো তাই বলো
জীবনে আমার যত আনন্দ
ওই ঝঞ্ঝার ঝংকারে ঝংকারে
আধুনিক বাংলা গান ও নেপথ্যকণ্ঠদানে
বাংলা চলচ্চিত্রে নেপথ্য সঙ্গীতের কণ্ঠশিল্পী ছিলেন তিনি। যেমন -

'যে যেখানে দাঁড়িয়ে' (১৯৭৪)
'পরিচয়' (১৯৭৯)
' আবির্ভাব'
'মন্ত্রমুগ্ধ'
'পরিচয়' চলচ্চিত্রে 'আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে' গানটির জন্য ১৯৭৯ সালের নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসাবে বাংলা চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার বা বিএফজিএ লাভ করেন। তবে আধুনিক বাংলা গান অল্প কয়েকটি গেয়েছেন। উল্লেখযোগ্য গানগুলি হল-

'এই জীবন এমনি করে আর সয় না'
'কি হলো চাঁদ কেন মেঘে ঢেকে গেলো '(১৯৮০)
'তৃষিত নয়নে এসো' (১৯৮৭)
পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান
সাগর সেন ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে সুমিত্রা সেনকে বিবাহ করেন। তাদের তিন পুত্র সন্তান। এরা হলেন- প্রিয়ম সেন, প্রীতম সেন ও প্রমিত সেন। প্রমিত সেন একজন সঙ্গীত শিল্পী। ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দে ধরা পড়ে তিনি ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও জীবনের শেষ দেড় বছর সমানভাবে সঙ্গীত পরিবেশন করে গেছেন। শেষে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখে মাত্র ৫০ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন।

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.